শিরোনাম
শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

মৃত্যুঝুঁকিও সরাতে পারে না তাদের

টিলা ধসে মৃত্যু, তবু সতর্কবার্তা আমলে নেয় না কেউ

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

মৃত্যুঝুঁকিও সরাতে পারে না তাদের

সিলেট নগরীর হাওলাদারপাড়ার জগো টিলা কেটে পাদদেশে তৈরি করা হয়েছে বসতঘর। অতিবৃষ্টিতে টিলা ধসে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

কয়েকদিন ধরে সিলেটে বৃষ্টি হচ্ছে। টানা ও ভারী বর্ষণে বিভিন্ন স্থানে ধসে পড়ছে টিলা। ঘটছে প্রাণহানি। গেল এক সপ্তাহে সিলেট বিভাগে অতিবৃষ্টিতে টিলা ধসে একজনের প্রাণহানি ও অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। মাটিচাপা পড়েছে বেশ কয়েকটি বসতঘর। এতেও টনক নড়ছে না টিলার পাদদেশে বসবাসকারীদের। মৃত্যুঝুঁকিও সরাতে পারছে না তাদের। প্রশাসনের সতর্কবার্তাও আমলে নিচ্ছে না কেউ।

জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান জানান, ৪ অক্টোবর বৃষ্টি শুরুর পরই আবহাওয়ার পূর্বাভাস পেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ আবাসনে অবস্থানকারীদের সতর্ক করা শুরু হয়। এখনো মাইকিং চলছে। এসব এলাকায় আশ্রয় কেন্দ্রও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরাও কাজ করছেন। ঝুঁকিপূর্ণ টিলাগুলোয় সতর্কতামূলক সাইনবোর্ডও লাগানো হয়েছে। এর পরও ঝুঁকিপূর্ণ বাসস্থান ছেড়ে লোকজন নিরাপদে আসতে চাইছে না। সেভ দ্য হেরিটেজ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের প্রধান নির্বাহী আবদুল হাই আল হাদী বলেন, ‘আমরা কয়েক বছর আগে একটা জরিপ চালিয়ে দেখেছিলাম টিলার পাদদেশে প্রায় ১০ হাজার পরিবার ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাস করছে। এখন এ সংখ্যা আরও অনেক বাড়বে।’ তিনি বলেন, ‘বসবাসের জন্য এসব টিলার অনেকাংশ কেটে ফেলায় টিলাগুলোও দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে এগুলো ধসে পড়ে প্রাণহানি ঘটে।’

সিলেটজুড়ে রয়েছে পাহাড়-টিলা। জেলার ১৩ উপজেলার আটটিতে রয়েছে উঁচু টিলা। সিলেট মহানগরেও রয়েছে বেশকিছু উঁচু টিলা। মাটি কেটে সমতল করে এসব টিলার পাদদেশে গড়ে তোলা হয়েছে বসতি। কোথাও টিলার মালিক মাটি কেটে অসহায় বাস্তুহারাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। মূলত টিলায় নিজেদের দখলদারি টিকিয়ে রাখতেই মালিকরা তাদের আশ্রয় দিয়েছেন। আবার কোথাও টিলা কেটে তৈরি করা হয়েছে আবাসন। অপেক্ষাকৃত স্বল্পমূল্যে কেউ কেউ টিলার পাদদেশে জায়গা কিনে গড়ে তুলেছেন বাসাবাড়ি। প্রতি বছর বর্ষায় টিলা ধসে ঘটে প্রাণহানি। এ বছর অন্যবারের চেয়ে টিলাধস ঘটছে বেশি। ৭ অক্টোবর টিলা ধসে শহরতলির খাদিম চা-বাগান এলাকায় এক শিশু মারা যায়। অতিবৃষ্টিতে ৬ অক্টোবর রাতে খাদিম চা-বাগানের বস্তিলাইন এলাকায় টিলাধস ঘটে। চাপা পড়ে চা-শ্রমিক বুলবুল ছত্রীর ঘর। মারা যায় তার মেয়ে অর্চনা ছত্রী (১১)। ৭ অক্টোবর ভোরে জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল ইউনিয়নের পূর্ব সাতজনি গ্রামে টিলাধস ঘটে। এতে আদিবাসী লেদই পাত্র, সুদেন পাত্র ও রণ পাত্রের বসতঘর মাটিচাপা পড়ে। এর আগে গত বছরের ৬ জুন জৈন্তাপুর উপজেলায় টিলা ধসে একই পরিবারের চারজন নিহত হয়েছিলেন। একই দিন সিলেট মহানগরের আখালিয়ায় দুটি স্থানে টিলাধস ঘটে। টিলার মাটি ধসে বসতঘর ভেঙে পড়ে। ৬ অক্টোবর নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের বনগাঁও গ্রামের মিরটিলা ধসে তিনটি বসতঘর বিধ্বস্ত হয়। মাটিচাপা পড়ে আহত হন তিন পরিবারের ১০ জন। ১৪ মে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মণাবন্দে টিলা ধসে অপু পাল নামে এক যুবক মারা যান। সংশ্লিষ্টসূত্র জানান, সিলেট মহানগর ও সদর উপজেলায় রয়েছে প্রায় ২০০ টিলা। জেলার দক্ষিণ সুরমা, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট উপজেলায় রয়েছে ছোটবড় প্রায় ৪০০ পাহাড়-টিলা। এসব টিলার অধিকাংশ কেটে বসতবাড়ি তৈরি করা হয়েছে। টিলার মালিকরা মাটি বিক্রি করে পাদদেশে তৈরি করেছেন বসতবাড়ি। কেউ স্বল্পমূল্যে ভাড়া দিচ্ছেন এসব ঘর। আবার কেউ প্লট তৈরি করে বিক্রি করে দিয়েছেন।

বেশির ভাগ প্লটের ক্রেতা নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। ফলে নিরাপদ আশ্রয়ে বসতি করার সুযোগ না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই টিলার পাদদেশে তারা বসবাস করছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর