বুধবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

অধিগ্রহণ-পিলার খনন জটিলতায় আটকে আছে সেতু নির্মাণ

♦ সংশোধিত ডিজাইনের পরীক্ষা সম্পন্ন ♦ থাকছে আধুনিক স্থাপত্যের ছোঁয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

অধিগ্রহণ-পিলার খনন জটিলতায় আটকে আছে সেতু নির্মাণ

বগুড়া করতোয়া নদীর ওপর বিকল্প ভাসমান সেতু -বাংলাদেশ প্রতিদিন

উদ্বোধনের প্রায় পাঁচ মাস পার হলেও জমি অধিগ্রহণ ও পিলার খনন জটিলতায় আটকে আছে বগুড়ার করতোয়া নদীর ওপর ফতেহ আলী সেতু নির্মাণকাজ। চলতি বছরের গত ২২ মে আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুটির পুনর্নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন বগুড়া-৬ সদর আসনের সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান রিপু। কিন্তু কাজ শুরু হওয়ার পর নদীতে ১৮ মিটার বোরিং শেষে ৩ থেকে ৫ মিটার পাথরের লেয়ার পাওয়া যায়। যে কারণে কাজ বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়াও নদীর পশ্চিম পাড়ে ফতেহ আলী বাজার-সংলগ্ন এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ার কারণে সেতু নির্মাণ কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এ কারণে পূর্ব বগুড়ার তিন উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের যাতায়াতে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ বগুড়া কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সেতুটির চুক্তি মূল্য ১৯ কোটি ৮৩ লাখ ৮৭ হাজার ৯৬৬ টাকা। এটি শুরু হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের ১৫ মে। আর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা আগামী ২০২৪ সালের ১৪ মে। কিন্তু উদ্বোধনের পর জমি অধিগ্রহণ ও পিলার খনন জটিলতায় আটকে আছে ফতেহ আলী সেতুর নির্মাণকাজ। বর্তমানে সেতুটির চেলোপাড়া অংশে অ্যাপার্টমেন্টের পাইলিংয়ের কাজ প্রায় সম্পন্ন। নদীগর্ভে পাথরের লেয়ার পাওয়ার কারণে পাইলিং কাজের সমস্যা নিরসনকল্পে সওজ অধিদফতরের ব্রিজ ডিজাইন উইংকে জানানো হয়েছে। সংশোধিত ডিজাইনের জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষাও সম্পন্ন করা হয়েছে। সেতুটি পুনর্নির্মাণের জন্য ভেঙে ফেলার পর জনগণের চাহিদার প্রেক্ষিতে বিকল্প সড়ক হিসেবে পথচারীদের পারাপারের জন্য বাঁশের সেতু তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে চেলোপাড়ার বিভিন্ন পূজামণ্ডপে জনসাধারণের নিরাপদ এবং সহজে যাতায়াতের জন্য জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলামের পরিদর্শন ও সুপারিশের ভিত্তিতে বর্তমানে বাঁশের সেতুর পাশ দিয়ে বিকল্প আরেকটি ভাসমান সেতু তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। যা আগামী ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে উদ্বোধন করা হবে। ভাসমান সেতুটি প্লাস্টিকের ড্রাম দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে। যেটি নদীর পানি বেড়ে এবং কমে গেলে নিজে থেকে ওঠানামা করবে।

জানা যায়, ৬৯ মিটার দৈর্ঘ্য আর ১২ দশমিক ৩ মিটার চওড়া এই সেতুর দুই পাশে আড়াই মিটার করে ফুটপাত থাকবে। দৃষ্টিনন্দন এবং আধুনিক স্থাপত্যের ছোঁয়া রয়েছে এই সেতুর নকশায়। এ সেতুটি পুনর্নির্মাণ হলে বগুড়া শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। ফতেহ আলী সেতুটি বগুড়াবাসীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেতু। পূর্ব বগুড়ার তিনটি উপজেলার মানুষ এই সেতু দিয়ে পারাপার হবেন। ফলে ওই তিন উপজেলার কৃষিপণ্য সহজে বাজারজাত করা সম্ভব হবে।

২০১৮ সালে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার প্রায় ৫ বছর পর এর পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। দীর্ঘ ৫৩ বছর আগে নির্মিত এই সেতুর পুনর্নির্মাণ কাজ শুরুর আগে গত ১৬ মে স্থানীয় সংসদ সদস্য নির্মাণ এলাকা পরিদর্শন করেন। এরপর ২২ মে নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।

এর আগে ১৯৬২ সালে করতোয়া নদীর ওপর ৬৮ মিটার দীর্ঘ ফতেহ আলী সেতু নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সে সময় সেতুটি নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছিল ২০ লাখ টাকা। মাঝে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সেতুটির কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশ স্বাধীনতার পর সেটি মেরামত করা হয়। এরপর থেকে আর কোনো সংস্কার না থকায় দিন দিন সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। জেলা শহরের সঙ্গে সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও গাবতলী উপজেলাবাসী এই সেতু হয়ে সরাসরি যোগাযোগ করে থাকে। ৬০ বছর বয়সী সেতুটি দিয়ে পূর্ব বগুড়ার কয়েক লাখ মানুষের চলাচলের ভরসা। সেতুটি তিনটি উপজেলাসহ সদর উপজেলার মানুষের চলাচলের জন্য অত্যন্ত জনগুরুত্ব বহন করে আসছে। তিনটি উপজেলার সাধারণ মানুষের যেমন চলাচলের ভরসা তেমনি কৃষিপণ্যসহ সব ধরনের যোগাযোগের ক্ষেত্রেও এই সেতুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সেতু দিয়ে তিন উপজেলার কৃষিপণ্য পরিবহনে ভূমিকা রয়েছে। সেতুটি দ্রুত নির্মাণ হলে এলাকার অর্থনৈতিক পরিবর্তন ঘটবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের মধ্যে বগুড়ার এই সেতুটিও নির্মাণ হচ্ছে। সেতুটি নির্মাণ হলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ দূর হবে।

চেলোপাড়া এলাকার বাসিন্দা বিধান সিং জানান, বর্তমানে বাঁশের সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ পায়ে হেঁটে পারাপার হচ্ছেন। তাদের মাথায় ব্যাগ ও বস্তা নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। পূর্ব বগুড়ার মানুষের কৃষিপণ্য নিয়ে শহরে আসতে কষ্ট হচ্ছে। তাই সেতুটি দ্রুত নির্মাণ হলে পূর্ব বগুড়ার মানুষ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবেন।

বগুড়া সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান জানান, সেতুটির পুনর্নির্মাণ কাজের উদ্বোধনের পর নদীতে ১৮ মিটার বোরিং শেষে ৩ থেকে ৫ মিটার পাথরের লেয়ার পাওয়া যায়। যে কারণে কাজের কিছুটা ধীরগতি হয়েছে। নদীতে পাথরের লেয়ায় পাওয়ার কারণে পাইলিং কাজের সমস্যা নিরসনকল্পে সওজ অধিদফতরের ব্রিজ ডিজাইন উইংকে জানানো হয়েছে। সংশোধিত ডিজাইনের জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষাও সম্পন্ন করা হয়েছে। সেতুটি পুনর্নির্মাণের জন্য ভেঙে ফেলার পর জনগণের চাহিদার প্রেক্ষিতে বিকল্প সড়ক হিসেবে পথচারীদের পারাপারের জন্য বাঁশের সাঁকো তৈরি করে দেওয়া হয়েছে এবং জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় বাঁশের সাঁকোর পাশ দিয়ে বিকল্প আরেকটি ভাসমান সেতু তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে আগামী বছরের ১৪ মে সেতুটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর