বুধবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে খুন হন সিফাত

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর দক্ষিণখানে বন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে খুন হন তরুণ প্রকৌশলী মুসাব্বির হোসেন চৌধুরী সিফাত। সিফাত খুন হয়েছেন দক্ষিণ আজমপুরের বটতলায়। ঘাতকরা এসেছিল গাওয়াইর থেকে। পূর্ববিরোধের জেরে তুচ্ছ ঘটনা কেন্দ্র করে সিফাতের বন্ধু জাবেদ মৃধার ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়েছিল গাওয়াইর এলাকার সন্ত্রাসীরা। ওই হামলা থেকে বন্ধুকে রক্ষা করতে গিয়েছিলেন সিফাত। এটাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে খুন হন সিফাত। গতকাল এসব তথ্য জানান দক্ষিণখান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ ইয়াসীন গাজী।

তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দক্ষিণখানের দক্ষিণ আজমপুর বটতলায় ছুরিকাঘাতে খুন করা হয় সিফাতকে। এ ঘটনায় নিহতের মা মোছা. নাছরিন বেগম বাদী হয়ে দক্ষিণখান থানায় মামলা করেন। মামলায় আটজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত সাত-আট জনকে আসামি করা হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মো. রাজীব, আশিক ও নিজামকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হলে আদালত চার দিন মঞ্জুর করেন। গতকাল হত্যার দায় স্বীকার করে তিনজনই আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি) থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে (সিএসই) গ্র্যাজুয়েশন করেছেন সিফাত। তিনি সিএনএস লিমিটেড কোম্পানির অ্যাসিস্ট্যান্ট সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার পদে চাকরি করতেন।

 তার বন্ধু জাবেদ আসামি নোমানকে ৫ হাজার টাকা ধার দেন। নোমান ধারের ৩ হাজার টাকা ফেরত দেন। বাকি ২ হাজার ফেরত দিতে গড়িমসি করে। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে চাপা ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ আজমপুর বটতলায় জাবেদ নোমানকে দেখতে পেয়ে ধারের ২ হাজার টাকা ফেরত চান। নোমান টাকা ফেরত দেবেন না বলে জানান।

তখন উভয়ের মধ্যে বাগবিতন্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে নোমান জাবেদকে ধাক্কা দেন এবং তোকে দেখে নিচ্ছি বলে হুমকি দেন। নোমান অন্য আসামিদের মোবাইল ফোনে দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দ্রুত বটতলায় আসতে বলেন। কিছুক্ষণ পর সিফাত অফিস শেষে বটতলায় পৌঁছামাত্র দেখতে পান জাবেদকে নোমানসহ সাত-আট জন মারধর করছেন। সিফাত এ ঘটনার প্রতিবাদ করেন। পরে তারা সিফাতকে মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে সিফাতকে আঘাত করেন। এর পরই সিফাত রক্তাক্ত জখম অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। নোমানসহ অন্যরা দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। স্বজনরা সিফাতকে উদ্ধার করে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

দক্ষিণখান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ ইয়াসীন গাজী বলেন, ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে খুনের সঙ্গে জড়িত ১৫ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের ধরতে অভিযান চলছে। মহল্লায় মহল্লায় তাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করে আসছে। জাবেদ ও নোমানের টাকার লেনদেন উপলক্ষ মাত্র। জানা গেছে, সিফাতের বাবার নাম মো. মোতালেব হোসেন চৌধুরী। দক্ষিণখান থানার দক্ষিণ আজমপুরের জালাল উদ্দিন আহম্মেদ সরণির ৫২ নম্বর বাড়ির স্থায়ী বাসিন্দা সিফাত।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর