শুক্রবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

অন্ধকারে বিন্নাঘাস প্রকল্প

উদ্বোধনেই শেষ পাহাড়ধস রক্ষার উদ্যোগ!

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

অন্ধকারে বিন্নাঘাস প্রকল্প

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) পাহাড়ধস রক্ষায় বিন্নাঘাস প্রকল্প গ্রহণ করে। এ নিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও করা হয়েছিল। কিন্তু উদ্বোধনেই শেষ। এরপর কিছুদিন বিন্নাঘাস রোপণ-পরিচর্যা চলেছিল। এখন পরিত্যক্ত ভূমি ‘বিন্নাঘাস প্রদর্শনী প্লট’। প্রকল্পটি এখন অন্ধকারে। নগরের টাইগারপাস এলাকার বাটালি পাহাড়ের পাদদেশে লাগানো হয়েছিল বিন্নাঘাস। চসিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের মে মাসে পাহাড়রক্ষায় থাইল্যান্ডের রাজকন্যা মহাচক্রি শিরীন ধরন উদ্বোধন করেছিলেন বিন্নাঘাস প্রকল্পটি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তৎকালীন পরিবেশ, বন ও জলবায়ুমন্ত্রী প্রকল্পের জন্য ২ কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু চসিকের পক্ষ থেকে কোনো তৎপরতা না থাকায় মিলেনি সে টাকা। সমন্বয় ও তদারকির অভাবে বন্ধ হওয়ার পথে পাহাড়রক্ষার প্রকল্পটি। কাগজে-কলমে থাকলেও প্রকল্পটি এখন প্রায় মৃত। বিন্নাঘাস প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী বিপ্লব দাশ বলেন, থাইল্যান্ড সরকারের অর্থায়নে বিন্নাঘাস প্রকল্প শুরু হয়। তখন ঘাস লাগানো, দেয়াল নির্মাণসহ নানা কাজে তাদের আর্থিক সহযোগিতা ছিল। পরে পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে ২ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা ছিল। কিন্তু তা পাওয়া যায়নি। এখন বিন্নাঘাস নিয়ে চসিকের কোনো কার্যক্রম নেই। তবে এটি এখনো বন্ধ বা পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়নি। গত বুধবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চসিকের প্রধান কার্যালয়ে প্রবেশপথে বাটালি পাহাড়ের পাদদেশেই লাগানো হয়েছিল বিন্নাঘাস। এখানে নির্মাণ করা হয় বিন্নাঘাস প্রকল্প দফতর। দফতরের সামনে আছে পরিচিতি সাইনবোর্ড। সেখানে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আছেন চসিক মেয়র। আছেন পৃষ্ঠপোষক, গবেষণা সহযোগী, প্রধান সমন্বয়ক, প্রকল্প পরিচালক, উপপ্রকল্প পরিচালক, সহকারী প্রকল্প পরিচালক ও গবেষণা সহকারীর নাম আছে। তাছাড়া, ‘বিন্নাঘাস প্রদর্শনী প্লট’ এখন অনেকটাই বিরানভূমি। সেখানে বিন্নাঘাসের পরিবর্তে জন্মেছে নানা ধরনের আগাছা। বিন্নাঘাস প্রকল্পের জন্য নির্মিত ভেটিভার সেন্টার, পরীক্ষা-নিরীক্ষায় আনা নানা উপকরণ সব এখন অব্যবহৃত পড়ে আছে। তালা ঝুলছে প্রকল্প কার্যালয়ে। ঘাস চাষের জায়গাগুলো পড়ে আছে অবহেলায়। কখন যে ঘাসের আগাগুলো ছেটে দেওয়া হয়েছে তার কোনো চিহ্ন নেই। প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, হংকং, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বজুড়ে আছে বিন্নাঘাসের গুরুত্ব। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই পাহাড়ের ক্ষয়রোধে ব্যবহৃত হচ্ছে এ ঘাস। বিন্নাঘাসের মূল মাটির গভীরে চলে গিয়ে মাটিকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে। বিশেষত উষ্ণ আবহাওয়ার দেশে সব উদ্ভিদের চেয়ে এর মূল বেশি কাজে দেয়। লম্বা শিকড় অল্প দিনেই মাটির নিচে জালের মতো ছড়িয়ে পড়ে। অনেক সময় এ শিকড় চলে যায় ১০ থেকে ১৪ ফুট গভীরে। চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে মাটিতে বোনা ঘাস ঢাল রক্ষার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। হিম ঠাণ্ডা অথবা খরতাপ সব পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার অন্যরকম ক্ষমতা আছে এ ঘাসের। কেবল ক্ষয়রোধ নয় পানি পরিষ্কার করতে, পানি থেকে আর্সেনিক দূর করতে এবং পানির দূষণ কমাতেও এই ঘাস কার্যকর ভূমিকা রাখে।

তাছাড়া বিন্নাঘাসের শিকড় দিয়ে তৈরি হয় পারফিউম, সাবান, হারবাল পানীয়। আর ঘাসের শুকনো পাতা দিয়ে তৈরি করা যায় পাটি ও ঘরের ছাউনি। বাংলাদেশেও বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের পরিত্যক্ত জমিতে ভূমিহীন নারীরা এই ঘাসের চাষ করছে। স্থানীয় সরকারের অধীনে রাস্তাঘাটে ব্লকের পরিবর্তে এখন থেকে বিন্নাঘাস ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু বিশ্বজুড়ে বিন্নাঘাসে উপকার পেলেও এ প্রকল্পে আগ্রহ নেই চসিকের।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নির্বিচারে পাহাড় কাটা, গাছপালা ও লতাগুল্ম কাটা, বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধস, মাঝারি-ভারী বৃষ্টিতে পাহাড়ধসের মতো বিপর্যয় ঠেকাতে বিন্নাঘাস অতি উপকারী। তাছাড়া, চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো বেলে মাটির হওয়ায় মাটি ও বালু ক্ষয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ ও সম্পদহানি ঘটছে। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষয়িষ্ণু পাহাড়ের ঢালে ব্যাপক হারে বিন্নাঘাস লাগানো গেলে ধস ঠেকানো সম্ভব বলে মনে করছেন গবেষকরা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর