শনিবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

যানজট আর দুর্ভোগের শহর বগুড়া

♦ অবৈধ পার্কিং ♦ ফুটপাত দখল ♦ ট্রাফিক আইন অমান্য

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

যানজট আর দুর্ভোগের শহর বগুড়া

বগুড়ায় সড়ক না বাড়লেও অতিমাত্রায় যানবাহন, অবৈধ পার্কিং, ফুটপাত দখল, চাঁদা উত্তোলন, ট্রাফিক আইন অমান্যসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে পরিণত হয়েছে দুর্ভোগের শহরে। শহরের প্রতিটি এলাকায় অবৈধ ও অতিমাত্রার যানবাহনের কারণে যানজটে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছে শহরবাসী। যত্রতত্র পার্কিং, ফুটপাত দখল, সড়কের ওপর ভ্রাম্যমাণ দোকান, দোকানের মালামাল রাখায় পথচারীদের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ অবৈধ যানবাহনের কারণে শহরবাসী দুর্ভোগের শিকার হলেও প্রশাসন ও পৌরসভা থেকে নেওয়া হচ্ছে না কোনো কার্যকর পদক্ষেপ।

জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার মধ্যে সবচেয়ে জনবহুল শহর বগুড়া। সেই সঙ্গে বাণিজ্যিক শহর বলে প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা থেকে ৩ থেকে ৪ লাখ লোকের সমাগম হয়ে থাকে এখানে। এসব লোক চিকিৎসা, শিক্ষা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রয়োজনে বগুড়ায় আসেন। পৌর এলাকার মধ্যে নিয়ম না মেনে দিনরাত অবৈধ অটোরিকশাসহ মালবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান যাতায়াতের কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি ও ব্যক্তিগত যানবাহন রাস্তার পাশে যেখানে-সেখানে পার্কিং করায় যানজট বেড়েই চলছে। অবৈধ অটোরিকশার জটে অতিষ্ট সাধারণ জনগণ। এদিকে চার্জারচালিত অটোরিকশা বেড়ে যাওয়ায় শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে দীর্ঘ যানজটে পড়তে হয় শহরবাসীকে। এতে করে ১০ মিনিটের পথ যেতে সময় লাগছে ঘণ্টারও বেশি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় অভিযান চালালেও কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। বগুড়া শহরের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে প্রায় ২ লাখ অবৈধ অটোরিকশা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। যারা কোনো নিয়মনীতি মানছে না। তাদের কোনো বৈধ লাইসেন্সও নেই। অথচ বেপরোয়াভাবে এসব অটোরিকশা দিন-রাত শহরে চলাফেরা করছে। শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা থেকে দক্ষিণে চার লেনের শেরপুর রোডের দুই লেনই মিনিবাস, সিএনজি, অটো ও ব্যাটারিচালিত রিকশার দখলে। মাঝে-মধ্যে এসব ছোট-বড় গাড়িগুলো আড়াআড়ি করে রাখা হয়। এতে সড়ক দিয়ে অন্য গাড়ি যেতে পারে না। এ সড়কের মফিজ পাগলা মোড়, ঠনঠনিয়া, পিটিআই, সরকারি কলেজ, ইয়াকুবিয়া স্কুল মোড়, পপুলার ডায়াগনস্টিকের সামনে অস্থায়ীভাবে সিএনজি, ব্যাটারিচালিত রিকশা, চার্জারে চালিত বিভিন্ন অটোগাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করা হয়। একই সঙ্গে শহরের দত্তবাড়ি, বড়গোলা, থানা মোড়, সাতমাথা, খান্দার, রেলগেট, নামাজগড়, টিনপট্টি মোড়, তিনমাথা রেলগেট, চেলোপাড়া মোড়, জলেশ্বরীতলাসহ বিভিন্ন সড়কেই যানজট লেগে থাকে। এসব পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে।

শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা থেকে ছয় মিনিট পরপর শেরপুরগামী লোকাল বাস করতোয়া গেটলক চলাচল করছে মূল শহরের মধে দিয়ে। যে কারণে মূল শহরে যানজট লেগে থাকছে। এসব করতোয়া গেটলক বাস সরকারি দলের এক নেতার নিয়ন্ত্রণে চলাচল করছে। এদিকে, বগুড়া শহরের মূল পয়েন্ট দিয়ে একটি রেলপথ রয়েছে। এ রেলপথ দিয়ে ২৪ ঘণ্টায় ১৮ বার ট্রেন আসা-যাওয়া করে। প্রতিবার সড়কের সিগন্যালগুলোর কারণে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ মিনিট সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। বিশেষ করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১১ বার সিগন্যালে সাড়ে ৩ ঘণ্টা আটকে থাকতে হয় যানবাহনকে। দিনের অধিকাংশ সময় যানজটের কারণে থমকে যায় স্বাভাবিক জীবন। অথচ শহরের সড়ক যা ছিল সেটাই রয়ে গেছে। সড়ক বাড়েনি। ফুটপাত দখল করে দোকান বসিয়ে মাসোহারা আদায় করে রাজনীতির পরিচয়ে। বগুড়া শহরে প্রতিদিন কমপক্ষে ৬ হাজার ফুটপাত দখলকারীদের কাজ থেকে ২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা করে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার চাঁদা উত্তোলন করা হয়। এই টাকা রাজনৈতিক পরিচয়ে উত্তোলন করা হচ্ছে।

বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্র্তী জানান, ট্রাফিক পুলিশসহ আমরা শহরের যানজট নিরসনে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। ট্রাফিকের জনবল কম হওয়ায় ব্যস্ততম শহরে মাঝে-মধ্যে একটু যানজট লেগে যায়। তবে যানজটের মূল কারণ হচ্ছে অধিক পরিমাণ অবৈধ অটোরিকশা এবং রেলের লেভেল ক্রসিং। এ ছাড়া শহরের রাস্তার ধারণক্ষমতার অধিক যানবাহন চলাচলের কারণে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তার পাশে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করাও যানজটের একটি অন্যতম কারণ।

বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশা জানান, যানজটমুক্ত বগুড়া সাজাতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। অবৈধ রিকশার ব্যাপারে আলোচনা চলছে। শিগগিরই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অবৈধ পার্কিং ও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে অতি দ্রুত সময়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। তিনি বলেন, কেউ কেউ দলীয় পরিচয় দিয়ে ফুটপাতের ওপর দোকান দিচ্ছে। সেখান থেকে নিয়মিত মাসোহারা তুলছে।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর