সোমবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

শিল্পারামমে ভারতের গ্রামীণ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি

জয়শ্রী ভাদুড়ী ও কাজী শাহেদ, হায়দরাবাদ থেকে ফিরে

শিল্পারামমে ভারতের গ্রামীণ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি

শিল্পারামম, কারুশিল্পের গ্রাম। হায়দরাবাদ শহর থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠা করে রাজ্য সরকার। ভারতীয় শিল্প ও কারুশিল্পের প্রচার ও প্রসার এবং কারিগরদের অনুপ্রাণিত করতে এটি গড়ে তোলা হয়। যা পর্যটকদের জানাচ্ছে ভারতীয় শিল্প-সাহিত্য সম্পর্কে, পাশাপাশি কর্মসংস্থান হয়েছে বিপুলসংখ্যক মানুষের।

ভারতের হাইটেক হাব শহরে ৬৫ একর জমির ওপর বিস্তৃত শিল্পারামম শিল্প ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক মনোরম পরিবেশ দেয়। এক প্রান্ত দিয়ে ঢুকে অন্য প্রান্ত দিয়ে বের হতে পাওয়া যাবে ভারতীয় শিল্প, কারুশিল্প ও গ্রামীণ জীবনের পুরো আবেশ। এখানে গ্রামীণ জাদুঘর মানুষকে নিয়ে যায় অতীতের কাছে; যা মুগ্ধ করবে ঘুরতে আসা পর্যটকদের।

অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে শিল্পারামমে ঘুরতে এসেছিলেন রূপক। প্রথমবার চাচাতো ভাইবোনদের নিয়ে তিনি ঘুরতে এসেছেন। মানুষের কাছ থেকে শুনছিলেন শিল্পারামমের কথা। নিজে দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। তার ভাষায়, ‘আমি যা শুনে এখানে এসেছি, জায়গাটি তার চেয়ে সুন্দর। এখানে অনেককিছু দেখতে পাচ্ছি। অনেক পেশার মানুষ যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে, সত্যিই অসাধারণ। ইংরেজি বা হিন্দি বলতে পারেন না মৌনতা পান্ডে। তেলেগু ভাষায় কথা বলছেন। পাশের একজনের সহযোগিতায় তার কাছ থেকে জানতে চাওয়া শিল্পারামমে এসে তার অনুভূতি। মৌনতা বললেন, এখানে আসার পর সেই সুখ পাচ্ছেন, যা অনেকদিন ব্যস্ত জীবনে পাননি। স্থানীয় সাংস্কৃতিক আয়োজনে কিছুক্ষণ বসেছিলেন। মুগ্ধ দর্শক ছিলেন। তাকে ছুঁয়ে গেছে শিল্পীদের উপস্থাপনা। শিল্পারামমে পাওয়া যাবে স্থানীয় সাংস্কৃতির সব আবহ। পর্যটক আকর্ষণে শিল্পীরাও উপস্থাপনা করেন আনন্দ চিত্তে। শিল্পীরা জানান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তারা স্থানীয় নাচ, গান ও অভিনয় শেখেন। এখানে মাঝে মাঝে তারা সেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করেন। শিল্পারামম সেন্ট্রাল পার্কে বিশাল মঞ্চ করা আছে। সেখানে চলে শিল্পীদের উপস্থাপনা।

২০ বছর আগে তেলেঙ্গানা রাজ্য সরকারের গড়ে তোলা শিল্পারামমে কর্মসংস্থান হয়েছে বহু মানুষের। ভারতের কলকাতা থেকেও হাতের তৈরি শিল্পকর্ম নিয়ে সেখানে ব্যবসা করছেন অনেকে। নারী-পুরুষের জন্য দোকানঘর বরাদ্দ দিয়েছে রাজ্য সরকার। হাতের তৈরি পণ্যের পসরা নিয়ে বসেন দোকানিরা। ভারতীয় শিল্প, কারুশিল্প ও সংস্কৃতির প্রচার ও সংরক্ষণে সরকারের এমন উদ্যোগ, বলেন তেলেঙ্গানা রাজ্য সরকারের তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের যুগ্ম-পরিচালক এন ভেঙ্কাটেশওয়ারা রাও। তিনি বলেন, এখানে হাতের তৈরি শিল্পকর্ম পাওয়া যাবে। এখানে আসলে গ্রামের আবহ পাওয়া যাবে। যেখানে শিল্পারামম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, সেটি যানজটপ্রবণ এলাকা। তারপরও এখানে কেউ প্রবেশ করলে গ্রামের পরিবেশে ফিরে যাবেন। ধীরে ধীরে শিল্পারামমের পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতিদিনই বাড়ছে পর্যটক। তবে দুর্গাপূজার সময় বাথুকাম্মা উৎসব ঘিরে এখানে থাকে বাড়তি আয়োজন। কেউ কেউ স্থানীয়ভাবে একে দশেরা বলে থাকেন। যেটি চলছে এ সময়। এই উৎসব ঘিরে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে মানুষ সেখানে ঘুরতে যান। ভারতের বাইরের পর্যটকদেরও টানে বাথুকাম্মা উৎসব।

 

সর্বশেষ খবর