বুধবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং মৃত্যুফাঁদ

কয়েকদিন পর পর প্রাণহানি ঘটলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেই রেলওয়ের

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং মৃত্যুফাঁদ

সিলেটের অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংগুলো পরিণত হয়েছে মৃত্যুকূপে। প্রতিবছরই এসব মরণফাঁদে প্রাণ হারান অনেকে। কয়েক দিন পর পর প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ ১৫ অক্টোবর সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের ইলাশপুর পয়েন্টে গেটম্যানের অবহেলায় আন্তনগর পারাবত ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ হারান আওয়ামী লীগের এক নেতা। এ ছাড়া চলতি বছর বিভিন্ন লেভেল ক্রসিংসহ রেললাইনে কাটা পড়ে মারা গেছেন অন্তত ১০ জন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে- সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলা রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অধীন। এ তিন জেলায় অনুমোদনহীন রেলক্রসিং রয়েছে ৫৬টি ও অনুমোদিত ১৯টি। অনুমোদিত সাতটিতে গেটম্যান থাকলেও বাকি ১২টি লেভেল ক্রসিংয়ে কোনো গেটম্যান নেই। ফলে অসচেতনভাবে লেভেল ক্রসিং এলাকায় মানুষের চলাফেরা ও পারাপারের কারণে প্রায় নিয়মিতই ঘটছে দুর্ঘটনা। কেউ হারাচ্ছেন প্রাণ, কেউ বরণ করছেন পঙ্গুত্ব। ২০১৫ সাল থেকে এখন পর্র্যন্ত সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে অরক্ষিত রেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে অন্তত ২০টি। এতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৫ জন। এ ছাড়াও রেললাইনের ওপর দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে কাটা পড়ে মারা গেছেন আরও প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ। রেলওয়ে সূত্র জানায়, সিলেটে লেভেল ক্রসিংয়ে সর্বশেষ দুর্ঘটনা ঘটে ১৫ অক্টোবর। ওই দিন সকালে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের ইলাশপুর পয়েন্টে গেটম্যানের অবহেলায় আন্তনগর পারাবত ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ হারান জকিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আবদুস শহীদ। তিনি পেশায় একজন ঠিকাদার। মোটরসাইকেল নিয়ে ক্রসিং পার হওয়ার সময় ট্রেনের ধাক্কায় তিনি ঘটনাস্থলে মারা যান। এর আগে গত ১২ অক্টোবর শায়েস্তাগঞ্জে সুজন মিয়া নামের এক ব্যক্তি মারা যান লেভেল ক্রসিং পার হওয়ার সময়। এ ছাড়া ২০২২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনের অদূরে ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা যান তিন যুবক। এর আগের বছর কুলাউড়ার ভাটেরার হোসেনপুর বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিমে একটি ক্রসিংয়ে মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দেয় পারাবত এক্সপ্রেস। এতে মারা যান তিনজন। ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর মাধবপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যান এরশাদ মিয়া নামের এক রেল কর্মচারী। ২০১৮ সালের ৯ মে ফেঞ্চুগঞ্জ রেল ব্রিজে এবং একই দিন হবিগঞ্জের মিরপুরে পারাপারের সময় ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে মারা যান দুই ব্যক্তি। একই বছরের ৪ জুলাই মাইজগাঁও রেলক্রসিংয়ে জালালাবাদ ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে মারা যান এক নারী। ১৬ জুলাই ফেঞ্চুগঞ্জ রেলস্টেশন সংলগ্ন ক্রসিংয়ে সুরমা মেইলের নিচে কাটা পড়ে নিহত হন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক যুবক। একই বছরের ১৭ অক্টোবর মোমিনছড়া চা-বাগান সংলগ্ন রেলক্রসিংয়ে প্রাণ হারান আরেক যুবক। ২০১৭ সালের ২০ জুন ফেঞ্চুগঞ্জ রেলক্রসিংয়ে প্রাণ হারান টিটু আচার্য নামের এক শিক্ষক। ২০১৬ সালের ২০ জুন একই ক্রসিংয়ে এক যুবক, ২৪ জুন মাইজগাঁও ক্রসিংয়ে ফরিদপুর গ্রাসরুট টেক্সটাইল কলেজের এক ছাত্র এবং ২০১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ফেঞ্চুগঞ্জ ক্রসিংয়ে পারাবত ট্রেনে কাটা পড়ে আরেক ব্যক্তির মৃত্যু হয়।

২০১৫ সালের ১৫ মার্চ দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি লেভেল ক্রসিংয়ে সওজের এক কর্মী এবং একই বছরের ৬ মার্চ মাইজগাঁও ক্রসিংয়ে ফেঞ্চুগঞ্জের ছত্রিশগ্রামের এক যুবক মারা যান। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অবৈধ ক্রসিংগুলো বন্ধে ২০০৯ সালে মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করা হয়। রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ এর পক্ষ থেকে দেশের সব কটি অবৈধ রেলক্রসিং বাতিল করতে রেল মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপন জারি করে। পরবর্তী সময়ে রেল সচিবালয় থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে নির্দেশ আসে নিরাপত্তার স্বার্থে অবৈধ রেলক্রসিংগুলোতে স্থানীয়ভাবে গেটম্যান নিয়োগের। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতায় পরে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে জানতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিয়ার সরকারি মোবাইলফোনে কল করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর