বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

আতঙ্ক খুলনাজুড়েও

গেটম্যানবিহীন ক্রসিং ৪০টি, অবৈধ ক্রসিং ৬৯টি, প্রাণহানিসহ ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

আতঙ্ক খুলনাজুড়েও

খুলনা থেকে যশোর হয়ে বেনাপোল পর্যন্ত ১৭২টি রেলগেটের ৬৯টিই অনুমোদনহীন। তার ওপর ১০৩টি বৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের ৪০টিতে কোনো গেটম্যান নেই। এ ছাড়া ৬৯টি স্থানে রেলগেট না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই মানুষ ও যানবাহন চলাচল করছে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

খুলনা থেকে যশোর হয়ে বেনাপোল পর্যন্ত ১৭২টি রেলগেটের ৬৯টিই অনুমোদনহীন। তার ওপর ১০৩টি বৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের ৪০টিতে কোনো গেটম্যান নেই। এ ছাড়া রেললাইনের ৬৯টি স্থানে রাস্তা তৈরি করে ঝুঁকি নিয়েই মানুষ ও যানবাহন চলাচল করছে। ফলে বিপজ্জনক অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে প্রায় ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। রেলওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, খুলনায় রেল দুর্ঘটনায় বছরে ৪০-৪৫ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে অরক্ষিত রেল ক্রসিংয়ে কাটা পড়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, বৈধ গেটেও অনেক সময় গেটম্যানসহ সংকেতবাতি, ঘণ্টাসহ নিরাপত্তা থাকে না। আর অবৈধ ক্রসিংয়ে ‘সাবধান অননুমোদিত লেভেল ক্রসিং। কোনো প্রকার দুর্ঘটনা ঘটলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দায়ী না’ লেখা সাইনবোর্ড দিয়েই দায় এড়ানোর চেষ্টা করে সংশ্লিষ্টরা। খুলনা রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, খুলনা স্টেশন থেকে যশোর হয়ে বেনাপোল পর্যন্ত বৈধ রেলগেট আছে ১০৩টি। এর মধ্যে খাতাকলমে ৬৩টিতে গেটম্যান আছে। গেটম্যানবিহীন ৪০টি। গেটম্যান থাকা বৈধ রেলগেটে জনবল সংকটসহ নানা সীমাবদ্ধতার ফলে সময়মতো অনেকে ডিউটি পালন করেন না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার সময় গেটম্যানকে খুঁজেও পাওয়া যায় না। এ ছাড়া খুলনা-যশোর রেললাইনের ৬৯টি স্থানে রাস্তা তৈরি করে ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে মানুষ। এখানে কোনো গেটম্যান, লেভেল ক্রসিং, সংকেতবাতি, ঘণ্টা কিছুই নেই। ফলে ট্রেন কখন আসছে বা যাচ্ছে, তা বোঝা মুশকিল। খুলনা থেকে দৌলতপুর পর্যন্ত ২টি, দৌলতপুর থেকে যশোর ৫৭টি ও যশোর থেকে বেনাপোল পর্যন্ত ১০টি স্থানে রেললাইনের ওপর দিয়ে মানুষ ও যানবাহন চলাচলের রাস্তা রয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, ‘একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে, ট্রেন তো চাইলেই দ্রুত থামানোর সুযোগ নেই। এ কারণে মানুষের সচেতনভাবে রেললাইন পার হওয়া দরকার।’ জানা যায়, সর্বশেষ ১১ অক্টোবর খুলনা-যশোর রুটে নওয়াপাড়ার ছাগলহাটা রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় ট্রেনে কাটা পড়ে হাত-পা বিচ্ছিন্ন হয় আলী আজগর তরফদার (৬৫) নামে এক বৃদ্ধের। পরিবারের সদস্যরা জানান, বাজারে নারিকেল বিক্রি করে রেললাইন পার হওয়ার সময় খুলনা থেকে যশোরগামী রকেট এক্সপ্রেসের নিচে পড়ে গেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এর আগে ২৮ মে খুলনা পথেরবাজার রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় দুমড়েমুচড়ে যাওয়া প্রাইভেট কারের তিন যাত্রী ভাগ্যক্রমে প্রাণে রক্ষা পান। পুলিশ জানায়, রাজধানীর উত্তরা এলাকার বাসিন্দা মোজাম্মেল পাশা প্রাইভেট কারযোগে (ঢাকা মেট্রো-গ-৪২-৪৭৬৩) ফুলতলা মিলিটারি স্কুলে যাচ্ছিলেন। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে পথেরবাজার রেলক্রসিংয়ে খুলনাগামী ট্রেন সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস প্রাইভেট কারটিকে ধাক্কা দেয়। এ সময় প্রাইভেট কারের চালকসহ তিন যাত্রী আহত হন। ৮ মে ভোর ৪টার দিকে গিলাতলা আফিলগেটের সামনে লেভেল ক্রসিংয়ে খুলনাগামী ট্রেন রকেট মেইলের ধাক্কায় পিকআপের হেলপার আফজাল হোসেন নিহত হন।

খুলনা রেলওয়ে থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোল্লা খবির আহমেদ জানান, পিকআপটি বাইপাস সড়কের রেললাইনের ওপর ছিল। খুলনাগামী ট্রেন ওই পিকআপটিকে ধাক্কা দেয়। ঘটনাস্থলে কোনো গেটম্যান ছিল না। তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর