বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা রোধে দেশ-বিদেশে ষড়যন্ত্র হচ্ছে

সংসদে প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা রোধ করতে একটি দুষ্টচক্র দেশে-বিদেশে সরকার এবং দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দুষ্টচক্রের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো কাজ করছে বলেও জানান সরকারপ্রধান।

গতকাল জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর এ-সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ তথ্য জানান। সংসদে এ প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে বেলজিয়াম সফরে রয়েছেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল, পদ্মা রেল লিংকসহ বাস্তবায়িত ও বাস্তবায়নাধীন মেগা প্রকল্পের নাম উল্লেখ করে ওই সংসদ সদস্যের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব অবকাঠামো বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার মুকুটে নতুন নতুন স্বর্ণপালক যুক্ত করেছে।

বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে দেশের জনগণ বহুমুখী অর্থনৈতিক সুফল পাচ্ছে। বর্তমান সরকার বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের জনগণের উন্নয়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে সংসদ নেতা বলেন, বাংলাদেশের ইতিবাচক অগ্রযাত্রার গতি রোধ করতে বহির্বিশ্বে ও বাংলাদেশে একটি দুষ্টচক্র সরকার এবং দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এসব দুষ্টচক্রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সংস্থা কাজ করছে। তিনি জানান, দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার মোকাবিলাসহ বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরার জন্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এবং অনলাইন মিডিয়ায় নিয়মিতভাবে তথ্যবহুল ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ, প্রবন্ধ ও নিবন্ধ প্রকাশ এবং কনটেন্ট প্রচারের বিষয়ে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলো নানা রকম সভা বা আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সচেতন করে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও হীন কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি বা সংস্থার বিরুদ্ধে প্রবাসে জনমত গঠন করা হচ্ছে।

ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে চলেছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, যেসব অসত্য বা বিকৃত খবর ও গুজব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হয় সেগুলো চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে আসা অতিথিদের সঙ্গে আলোচনা সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে সামাজিক মাধ্যম ও মিডিয়াসহ বিশ্ববাসীকে অবহিত করা হচ্ছে বলেও জানান সরকারপ্রধান। প্রধানমন্ত্রী জানান, গুজব ও অপপ্রচার রোধে ১৫টি প্রতিবেদন, ৭২টি তথ্যবিবরণী এবং একটি প্রেসনোট জারিসহ সাতটি ফিচার তথ্য অধিদফতর থেকে জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ করা হয়েছে। গণফোরাম সদস্য মোকাব্বির খানের প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের সাইডলাইনে এবং আমার ওয়াশিংটন সফরে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান ওয়াশিংটন ডিসিতে এবং বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের আন্ডার-সেক্রেটারি উজরা জেয়া নিউইয়র্কে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এসব বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়, যা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। আওয়ামী লীগের সদস্য দিদারুল আলমের এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও জানান, নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র (আরএনপিপি) প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। তিনি বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের প্রথম পর্যায় ২০১৩ সালের ২ অক্টোবর উদ্বোধন করা হয়। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদ জুলাই ২০১৬ থেকে ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত। এ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ দশমিক ৯১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ সরকার এবং রাশান ফেডারেশন সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা চুক্তি এবং আন্তরাষ্ট্রীয় ঋণচুক্তির আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী জানান, সেপ্টেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ৫৯% এবং আর্থিক অগ্রগতি ৫৯%। ১০ অক্টোবর ২০২১ তারিখে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইউনিট-১ এবং ১৯ অক্টোবর, ২০২২ তারিখে ইউনিট-২-এর রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেলে স্থাপন কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ইউনিট-১ পারমাণবিক জ্বালানি সরবরাহ করা হয়েছে। এবং ৫ অক্টোবর, ২০২৩ তারিখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাশান ফেডারেশনের প্রেসিডেন্টের ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন হয়। দুটি ইউনিট চালু হলে প্রতিটি ইউনিট থেকে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট করে মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।

বঙ্গবন্ধু টানেল ৯ মাত্রার ভূমিকম্পসহনীয় : সরকারি দলের এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পসহনীয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার পর বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ সারা দেশের অর্থনীতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ টানেল যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার পর আনোয়ারা প্রান্তে আবাসন ও পর্যটন শিল্পের বিকাশ, কলকারখানা স্থাপন ও সহজ যোগাযোগব্যবস্থার কারণে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বঙ্গোপসাগর ঘিরে আবর্তিত ব্লু ইকোনমির নতুন দ্বার উন্মোচন হবে। চট্টগ্রামে ওয়ান সিটি টু মডেল টাউন গড়ে উঠবে।

 

 

সর্বশেষ খবর