শুক্রবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সবজি চাষে ঘুরে দাঁড়িয়েছে উত্তরের অর্থনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

পেঁপে ছাড়া কোনো সবজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা প্রতি কেজির নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। বাজার মূল্যের অর্ধেক পাচ্ছেন কৃষক। অর্ধেক দাম পেয়েও খুশি এ অঞ্চলের কৃষক। শাক সবজির আবাদ করে জাতীয় অর্থনীতিতে যোগ করেছেন ১২ হাজার কোটি টাকার ওপর। অনুকূল পরিবেশ থাকায় এই অঞ্চলের বৃহৎ, ক্ষুদ্র, বরগা ও প্রান্তিক চাষিরা খরিপ-১, খরিপ-২ এবং রবি মৌসুমে শাক সবজির আবাদ করেছে ১ লাখ ৮০ হাজার হেক্টরের ওপর জমিতে। সবজি চাষে ঘুরে দাঁড়িয়েছে রংপুরসহ উত্তরের অর্থনীতি। মিঠাপুকুর উপজেলার কৃষক হাবিবুর রহমান, আশরাফুল ইসলাম, কাউনিয়া উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের আফজাল হোসেন, পীরগাছার বুলবুল মিয়াসহ বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, সবজি চাষের ফলে তাদের সংসারে সচ্ছলতা এসেছে। তারা এখন সবাই স্বাবলম্বী। এখন তাদের শাক সবজি বিক্রির জন্য হাটবাজারে যেতে হয় না। ব্যাপারিরা বাড়ির আঙ্গিনা থেকে শাক সবজি ক্রয় করে নিয়ে যান। দামও ভালো পাচ্ছেন। এসব ব্যাপারি ঢাকা চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে সবজি সরবরাহ করেন। এ ছাড়াও খরিপ-১ মৌসুমে ঢেড়স, পটোল, চিচিংগা, পুঁইশাক, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, পানি কুমড়া, চাল কমড়া ইত্যাদি চাষ করছেন। রবি মৌসুমে মুলা, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাল শাক, পালং শাক, পুঁইশাকসহ অন্যান্য সবজি আবাদ করে ভালো লাভ পাচ্ছেন কৃষকরা।

এখন উত্তরাঞ্চলের মহাসড়কগুলোর পাশে দাঁড়ালে দেখা যায়, বিভিন্ন হাটবাজারের পাশে ট্রাক দাঁড়িয়ে রয়েছে সবজি কেনার জন্য। রাত থেকে ভোর হতে এসব ট্রাক সবজি নিয়ে দেশের অন্যান্য স্থানে চলে যাচ্ছে। কৃষকরা জানান, ১ একর জমিতে করলা আবাদ করে খরচ বাদ দিয়ে লাভ করেছেন প্রায় লাখ টাকার ওপর। অন্যান্য সবজির ক্ষেত্রেও লাভবান হচ্ছেন কৃষক।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় রবি ও খরিপ মৌসুমে ১ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমি থেকে প্রায় ৩৬ লাখ মেট্রিকটন করলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লালশাক, পুঁইশাক, মুলা, টমেটো, কুমড়াসহ বিভিন্ন শাকসবজি কৃষকের ঘরে উঠেছে। প্রতি হেক্টরে গড় উৎপাদন হয়েছে ২০ মেট্রিক টন। প্রতি কেজি শাকসবজির কৃষক পর্যায়ে সর্বনিম্ন দাম ৩৫ টাকা। প্রতি মেট্রিক টন বিক্রি হয়েছে ৩৫ হাজার টাকায়। সেই হিসেবে দুই মৌসুমে ৩৬ লাখ মেট্রিক টন শাক সবজির মূল্য দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকার ওপর।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, বিভিন্ন ধরনের সবজির প্রতি হেক্টরে গড় উৎপাদন ২০ দশমিক ৭ মেট্রিকটন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন কোনো জমি ফেলে রাখা যাবে না। তাই পতিত জমিতেও সবজি আবাদ হয়েছে। সরকার সবজি চাষিদের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করায় উত্তরাঞ্চলের সবজি চাষিরা এই ভালো দাম পেয়েছেন। এ ছাড়া সরকারের পুষ্টি বাগান কর্মসূচি সবজিচাষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর