রবিবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ

বন্ধ্যাকরণের নামে লুটপাট!

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

খুলনায় পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে জন্মনিয়ন্ত্রণের স্থায়ী বন্ধ্যাকরণ পদ্ধতি (এনএসভি/টিউবেকটমি) বাস্তবায়নে লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। স্থায়ী বন্ধ্যাকরণের অধিকাংশ সুবিধাভোগীর পরিচয় ভুয়া। এই খাতে সরকারি অনুদানের টাকা ভাগাভাগি করছেন দফতরের কর্মচারীরা।

জানা যায়, খুলনা বিভাগে জন্মনিয়ন্ত্রণের স্থায়ী বন্ধ্যাকরণের হার ২ শতাংশ হলেও খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে এই হার ৪২.৮৩। এতে বিস্মিত হয়েছেন পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তারাই। এ ছাড়া ভুয়া বিল প্রস্তুত, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ও স্যাটেলাইট ক্লিনিক পরিচালনার বিল আত্মসাৎ, কর্মচারীদের ভ্রমণ ভাতা ও চতুর্থ শ্রেণির পোশাক ভাতা প্রদানে অনিয়ম, পেনশন প্রদানে ঘুষ গ্রহণ হয়রানির অভিযোগ রয়েছে এই কার্যালয়ের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীরা জানান, একই কর্মস্থলে প্রায় ১৭ বছর থেকে দুর্নীতির সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন ডুমুরিয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মো. জাহাঙ্গীর কবির। জানা যায়, উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার রনজিত কুমার নন্দীর পেনশন প্রদানে ঘুষ দাবি ও হয়রানির অভিযোগে ২০২২ সালের ১১ নভেম্বর জাহাঙ্গীর কবিরকে বাগেরহাটের ফকিরহাটে বদলি করা হয়। তবে প্রভাব খাটিয়ে দুই মাসের মধ্যে তিনি ডুমুরিয়া পূর্বের কর্মস্থলে ফিরে আসেন। তথ্য অনুযায়ী, ডুমুরিয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে ২০২১ সালে এক বছরে ৫১৪ জনের নামে স্থায়ী বন্ধ্যাকরণের অনুদানের টাকা দেওয়া হয়। খাতাকলমে সুবিধাভোগীর নাম ও গ্রামের নাম থাকলেও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, জাতীয় পরিচত্রের নম্বর নেই। তালিকা অনুযায়ী ব্যক্তিদের অধিকাংশের স্বাক্ষরই একই ধরনের। খোঁজখবর করেও তাদেরকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। একইভাবে ২০২০ সালের অক্টোবরে ৪৬, নভেম্বরে ৪৩, ডিসেম্বর ৬৪, ২০২১ সালের জানুয়ারি ৪০, মার্চে ৪৯, মে ৪৮, আগস্টে ৪২, সেপ্টেম্বরে ৪৬, নভেম্বরে ৭০ ও ডিসেম্বরে ৬২ জনের নামে স্থায়ী বন্ধ্যাকরণের টাকা দেওয়া হয়।

 স্থায়ী পদ্ধতির অপারেশন ও চারবার ফলোআপের টাকাও লুটপাট করা হয়েছে। তবে ২০২২ সালে নভেম্বর ও ডিসেম্বরে জাহাঙ্গীর কবির ডুমুরিয়ায় না থাকায় ওই দুই মাসে স্থায়ী বন্ধ্যাকরণের কোনো ঘটনা দেখানো হয়নি। এ ছাড়া জাহাঙ্গীর কবিরের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের আয়া স্বপ্না রানীর বেতন নির্ধারণের পর এরিয়া বিল থেকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ, পরিদর্শিকা হালিমা খাতুনের মৃত্যুর পর তার পরিবারকে পেনশন প্রদানে ঘুষ দাবি, উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ভবেন্দ্র নাথ মন্ডলের পেনশনের টাকা উত্তোলনের পর ১ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ, দাইনার্স শিল্পি বেগম ও কয়েকজনকে খাতাকলমে সুইপার ট্রলিম্যান দেখিয়ে অনুদানের অর্থ ভাগাভাগির কথা জানা গেছে। এসব ঘটনায় পরিবার পরিকল্পনা বিভাগীয় কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। এ বিষয়ে পরিবার পরিকল্পনা খুলনা বিভাগীয় পরিচালক সৈয়দ রবিউল আলম বলেন, প্রতি মাসে ৫০-৭০ জনের স্থায়ী বন্ধ্যাকরণের হিসাব মনগড়া। লুটপাটের সঙ্গে কারা জড়িত খুঁজে দেখা হবে। একই কর্মস্থলে দীর্ঘদিন থাকায় অনেকে অনিয়ম লুটপাটে জড়িয়ে পড়ছে। এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়। তবে জাহাঙ্গীর কবির জানান, সঠিকভাবে কাগজপত্র দেখেই বরাদ্দের টাকা দেওয়া হয়েছে। পেনশন প্রদানের ক্ষেত্রে হয়রানির অভিযোগও সঠিক নয়।

ডুমুরিয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. শামছুজ্জামান জানান, উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার রনজিত কুমার নন্দীকে পেনশন প্রদানে হয়রানির অভিযোগ তদন্ত করা হয়েছে। দুর্নীতিতে জড়িত জাহাঙ্গীর কবিরকে অন্যত্র বদলিসহ তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর