মঙ্গলবার, ৭ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

থামছে না ভোগ্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

থামছে না ভোগ্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে গত দুই বছরে পর্যাপ্ত পরিমাণ আমদানি, মজুদ ও সরবরাহ চেইন ঠিক থাকলেও থামছে না ভোগ্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি। এ জন্য ব্যবসায়ীরা দায়ী করেছেন, ডলার সংকটে চাহিদা অনুযায়ী এলসি খুলতে না পারা, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, বিশ্বব্যাপী খাদ্য সরবরাহ চেইন ভেঙে পড়ার পাশাপাশি দেশে দেশে খাদ্য মজুদ প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং রেট বেড়ে যাওয়ার ঘটনাকে। তবে তারা স্বীকার করেন গত দুই বছরের মধ্যে কোনো কোনো পণ্যের দাম বেড়েছে দুই থেকে তিন গুণ।

এ বিষয়ে চট্টগ্রামের কয়েকজন আমদানিকারকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডলার সংকটের কারণে আমদানিকারকদের এলসি খুলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যারা এলসি খুলতে পারছেন, তাদের অতিরিক্ত কমিশন দিতে হচ্ছে। এলসি খোলার জন্য বিদেশি ব্যাংকের কনফারমেশন পাওয়ার খরচও বেড়েছে দুই থেকে তিন গুণ। এ ছাড়া ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী খাদ্য রপ্তানিকারক দেশগুলো থেকে খাদ্যপণ্য রপ্তানি হ্রাস পাওয়াও অন্যতম কারণ।

চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী খাদ্য সরবরাহ চেইন ভেঙে গেছে। বড় কয়েকটি রপ্তানিকারক দেশ গম, চাল, চিনি রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। আবার দেড় বছর আগে ডলার রেট ৮৫ টাকা থাকলেও বর্তমানে প্রতি ডলার কিনতে হচ্ছে ১১৫ টাকায়। এ ছাড়া জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে পরিবহন ব্যয় বেড়েছে অনেক। এসব কারণে আমদানি ও সরবরাহ ব্যয় বেড়ে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে বাজারে।’ অনুুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে গত এক বছর সাত মাসের ব্যবধানে ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৭০০ টাকা পর্যন্ত। গত বছরের মার্চ মাসে খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি চিনি ৭২ টাকা কেজি বিক্রি হলেও গতকাল সোমবার বিক্রি হয়েছে ১২৭ টাকা। একই সময় পিঁয়াজের দাম ছিল ৩০ থেকে ৩৩ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা কেজি দরে। ১৫ থেকে ১৮ টাকার আলু বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা। ৫৫ টাকার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২৩ টাকা কেজি। ২৬০০ টাকা মণের সাদা সরিষা বিক্রি হচ্ছে ৩৪০০ টাকা। ১১৩০ টাকা মণের গম বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ টাকা। ৬১ টাকার সাধারণ ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৭৩ টাকা কেজি। ৪৮ টাকার ছোলা ডাল বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি। ৪৭ টাকার মটর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪ টাকা কেজি।  ৪২ টাকা কেজি দরের চিঁড়া বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা। ১৪৫ টাকার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৫৬ টাকা লিটার। ১২০ টাকার পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১২৬ টাকায়। ১০২০ টাকার লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১৪৬০ টাকা কেজি। ৩৫০ টাকার চিকন জিরা বিক্রি হচ্ছে ৮৬০ টাকা কেজি। ২৫০ টাকা কেজির কিশমিশ বিক্রি হচ্ছে ৩৯৫ টাকা।

চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, দেশে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের পর্যাপ্ত মুজদ রয়েছে। খাদ্যের কোনো সংকট নেই। কিন্তু জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে আমদানি ও পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে ভোগ্যপণ্য।

খাতুনগঞ্জের আড়তদার সোলায়মান বাদশা বলেন, মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং রেট বেড়ে যাওয়া, প্রত্যাশিত এলসি খুলতে না পারাসহ নানান কারণে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। ডলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ সমস্যার সমাধান হবে না।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর