বৃহস্পতিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

অটোরিকশা ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চলছেই

হাল ছেড়ে বসেছে সবাই দেখার কেউ নেই

হাসান ইমন

অটোরিকশা ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চলছেই

রাজধানীতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়ায় নৈরাজ্য চলছেই। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) মিটার পদ্ধতিতে ভাড়া নির্ধারণ করলেও কোনো চালকই তা মানছেন না। একই সঙ্গে চালকদের মিটারে যেতে অনীহা এবং যাত্রীরা দ্রুত গন্তব্য বিবেচনায় চুক্তিতে যেতে বাধ্য হন। এতে পকেট কাটা যাচ্ছে যাত্রীদের। বিআরটিএ ও পুলিশের তদারকির অভাবে ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধ করা যাচ্ছে না। জানা যায়, রাজধানীতে ১৫ হাজার ৯৯৬টি বৈধ সিএনজিচালিত অটোরিকশার পাশাপাশি আরও ২০ হাজার অবৈধ অটোরিকশা চলছে। সিএনজি-অটোরিকশায় কোনো বিশেষ নজরদারি নেই। ভ্রাম্যমাণ আদালত মিটারে চলাচলের বিষয়টি মাঝেমধ্যে দেখে। যাত্রীদের জিম্মি করে চালকরা ইচ্ছামতো ভাড়া হাঁকছেন। মিটার থাকলেও চুক্তি ছাড়া নড়েন না তারা। যাত্রীদের চাহিদামতো গন্তব্যে যেতে রাজি না হওয়ার হাজারো অজুহাতও রয়েছে তাদের। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মিটারের রেটে যেতে চান না চালকরা। প্রতিটি সিএনজি অটোয় মিটারটি যেন শোকেসে সাজানো কোনো বস্তু। প্রতিটি সিএনজি অটোয় মিটারে লাল বাতিতে মূল্য লেখা আছে কিন্তু নেই কোনো কার্যকারিতা। রাজধানীর সায়েদাবাদ, গাবতলী, কল্যাণপুর, মহাখালী বাস টার্মিনাল এলাকা ও কমলাপুর এবং বিমানবন্দর রেলস্টেশনের বাইরে যাত্রীদের অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। সিএনজি অটোচালকদের হাতে তাদের নাজেহাল হতে হয়। ঝগড়া-বাগ্বিতন্ডা নিত্যদিনের ব্যাপার। সাদা রঙের ব্যক্তিগত মালিকানার সিএনজি অটোরিকশায় লেখা থাকে ‘প্রাইভেট’। এসব সিএনজিতে যাত্রী পরিবহনের অনুমতি নেই। কিন্তু ইচ্ছামতো ভাড়ায় তাতেও যাত্রী বহন করা হচ্ছে। প্রাইভেট সিএনজি অটোরিকশার চালকদের দাবি, পুলিশকে ‘মান্থলি’ দিয়েই তারা সিএনজি চালান। যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, অটোরিকশার মিটারে চলার প্রথা যাত্রী, মালিক, চালক সবাই ভুলে গেছেন। শুধু পুলিশের ভয়ে মিটার প্রথা চালু আছে কিছু গাড়িতে। শতভাগ অটোরিকশা নগরীতে বাড়তি ভাড়ায় চলে। এজন্য বিআরটিএ, পুলিশসহ সব তদারকি প্রতিষ্ঠানের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন তিনি। রামপুরায় কথা হয় সিএনজি অটোরিকশা চালক শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সারা দিনের একটি গাড়ির জমা ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। মিটারে গাড়ি চালালে পোষায় না। মিটার তো শুধু গাড়িতে এমনিতেই লাগানো হয়েছে। এখন মিটারের কোনো কাজ নেই। যাত্রীরাও মিটারের হিসাবে যেতে চান না। মিটারে গাড়ি চালালে যাত্রীদের সঙ্গে আমাদের প্রতিদিন ঝগড়া হয়। সরকারের দেওয়া মিটারের নিয়ম মেনে চললে আমাদের পেটে ভাত জুটবে না। মালিকরা তো আর দৈনিক জমা কম নেন না। যাত্রীরা একটু বেশি ভাড়াতেই সিএনজিতে চলাচল করেন। আমরা তো আর জোর করে ভাড়া বেশি নিই না।’ সজল নামে আরেক সিএনজি অটোরিকশা চালক বলেন, ‘মিটারে গেলে পোষায় না। প্রতিদিন এক বেলায় ৯০০ টাকা জমা দিতে হয়। সব খরচ শেষে ৮০০-১০০০ টাকা নিয়ে বাসায় ফেরা যায়। কোনো কোনো দিন এর কমবেশি হয়। মালিকও তো সরকারের বেঁধে দেওয়া জমার নিয়ম মানেন না। মিটারে চালালে সারা দিনেও জমার টাকা উঠবে না। যানজটে পড়লে সারা দিনের লাভ শেষ। দিনে কয়েকবার নিতে হয় গ্যাস। গ্যাস নিতে দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়। মাঝে মাঝে বেশি টাকা দিয়ে গ্যাস নিতে হয়।’

রাশেদুল আলম নামে এক যাত্রী বলেন, ‘মতিঝিল থেকে গুলশান যেতে ভাড়া চাওয়া হয় ৪০০ টাকা। মিটারে যাবেন কি না জানতে চাইলে রাজি হন না চালক। কিন্তু আমার সঠিক সময়ে সেখানে যেতে হলে চালকের কথামতোই যেতে হবে। যাত্রীদের নিয়ে কেউ ভাবে না। চালকরা যেভাবে ইচ্ছা ভাড়া চায়। সিএনজিচালিত অটোরিকশা মিটারে চলছে নাকি চুক্তিতে, বিষয়টি দেখার জন্য কখনো দায়িত্বশীল কাউকে রাস্তায় দেখিনি। পুলিশও এখন আর যাত্রীদের কাছে জানতে চায় না চুক্তিতে না মিটারে যাচ্ছেন।’

এ বিষয়ে ঢাকা জেলা ফোর স্ট্রোক অটোরিকশা সিএনজি ড্রাইভার্স ইউনিয়নের সিনিয়র সহসভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মিটারে সিএনজি অটোরিকশা চলে না তার অন্যতম কারণ মালিকরা অর্ধেক বেলার জন্য ৯০০ এবং পুরো দিনের জন্য ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা জমা নেন। একই সঙ্গে মিটার সিস্টেম চালু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত তিন দফা গ্যাসের দাম বেড়েছে। এ ছাড়া সরকার-মালিক-শ্রমিক কোনো পক্ষই নীতির জায়গায় ঠিক না থাকায় এ যান নিয়ে যাত্রীদের অসন্তুষ্টি রয়েই গেছে। এ অসন্তুষ্টি দূর করার দায়িত্ব বিআরটিএ’র হলেও তারা ঘুমে রয়েছে। অর্থাৎ তাদের কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়।’

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর