শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

চালের বাজার মিল সিন্ডিকেটের কবলে

নজরুল মৃধা, রংপুর

চালের বাজার মিল সিন্ডিকেটের কবলে

ভরা মৌসুমেও দাম কমছে না, একে অন্যকে দুষছেন ব্যবসায়ীরা

নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় প্রতিবছর অর্ধলাখ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য উদ্বৃত্ত থাকে। এর পরও এই অঞ্চলের চালের দাম কমছে না। এখন আমন ধান কাটার ভরা মৌসুম। এই মৌসুমে রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলে চালের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। ক্রেতা ও খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ হাতে গোনা কিছু অটো রাইসমিল ও মজুদদার সিন্ডিকেট করে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। তবে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন পুরোপুরি আমন ধান কাটা মাড়াই হলে দাম কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা কমবে। তবে বর্তমান রাজনৈতিক অবরোধের কারণে চালের দাম বাড়েনি বলে এমনটা দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। রংপুরের মাহিগঞ্জ বাজারসহ বিভিন্ন চাল বাজারের খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েকদিন আগেও মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছিল ৫২ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে, বর্তমানে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৪ টাকার ওপর।  কেজিতে বেড়েছে ৪ থেকে ৫ টাকা। নাজিরশাইল চালের দামও কেজিতে ৫ থেকে ৮ টাকা বেড়ে ৬৫-৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্বর্ণা ও ব্রিধান-২৯ জাতের মোটা চালের প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে পাইকারি ৪৮ টাকা। খুচরা বাজারে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর চিকন চালের মধ্যে মাঝারি মানের চালের দাম ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা। এর চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ভালো মানের চিকন চাল (নাজিরশাইল ও জিরাশাইল) যা প্রতিকেজি ৬৮ থেকে ৭২ টাকা পর্যন্ত রাখা হচ্ছে। সব মিলিয়ে দেখা গেছে খুচরা বাজারে ৫৫ টাকা কেজির নিচে নিম্নমানের মোটা চাল কোনো বাজারেই মিলছে না। নগরীর মাহিগঞ্জ এলাকার চালের আড়তদার মাসুম মিয়া জানান, কদিন আগেও মাঝারি চিকন চালের বস্তা (৫০ কেজি) ছিল ৩ হাজার টাকা, যার বর্তমান বাজার মূল্য ৩ হাজার ৫০০ টাকা, ব্রিধান-২৮ জাতের চালের বস্তা ছিল ২ হাজার ৮০০ টাকা, বর্তমান বাজার মূল্য ৩ হাজার ২০০ টাকা, মোটা চালের (স্বর্ণা ও ব্রিধান-২৯) বস্তা ছিল ২ হাজার ৫০০ টাকা, যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ টাকা। চালের এ অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পেছনে কারসাজি রয়েছে বলে মনে করছেন পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা। তিনি বলেন, ছোট ছোট হাসকিং মিলগুলো এখন আর চলে না। বড় অটো রাইস মিল মালিকরা কমদামে ধান কিনে মজুদ করে নানা অজুহাতে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে তিনি আশার বানি শুনিয়ে বলেন, আমন ধান কাটা মাড়াই শেষ হলে চালের দাম কিছুটা কমবে।

ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের প্রায় ৬০০ অটোরাইস মিল মালিক নিজেদের ইচ্ছেমতো মজুদের পাহাড় গড়ে তুলে চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করছে। অটোরাইস মিলগুলো লাখ লাখ মণ ধানের মজুদ করে নিজেদের ইচ্ছেমতো চালের দাম নির্ধারণ করছে। এ ছাড়া কিছু মজুদদার ব্যবসায়ীও চালের মজুদ করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।

এদিকে কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলে মানুষের প্রতি বছর খাদ্যের চাহিদা হচ্ছে ৫৯ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে রংপুর অঞ্চলের খাদ্য চাহিদা হচ্ছে প্রায় ২৯ লাখ মেট্রিক টন এবং রাজশাহী অঞ্চলের চাহিদা হচ্ছে প্রায় ৩০ মেট্রিক টন। চলতি সনে আমন, আউশ ও বোরো ফসলের উৎপাদন হয়েছে, ১ কোটি ২২ লাখ মেট্রিক টনের বেশি। মোট উৎপাদন থেকে চাহিদা বাদ দিলে দেখা যায় এক বছরের এ অঞ্চলে খাদ্যের উদ্বৃত্ত থাকছে ৫৫ লাখ মেট্রিক টনের ওপর। এর মধ্যে রংপুর অঞ্চলে উদ্বৃত্ত থাকছে ২৬ লাখ মেট্রিক টন এবং রাজশাহী অঞ্চলে উদ্বৃত্ত থাকছে ২৯ লাখ মেট্রিক টন। তার পরই এই অঞ্চলে চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

রংপুর চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বলেন, চালের দাম বৃদ্ধির জন্য অটোরাইস মিলগুলো দায়ী। অটো রাইসমিল মালিকরা আগে থেকে ধানের মজুদ গড়ে তুলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে অটোরাইস মিলগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা অসহায় হয়ে পড়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর