শুক্রবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিজয় দিবসে নতুন শহীদ মিনার পাবে চট্টগ্রামবাসী

মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স উন্মুক্ত হবে জুনে

ইমরান এমি, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের উন্নয়নের জন্য সরকার ‘চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। এ প্রকল্পের অধীনে ইতোমধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের। আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে শহীদ মিনার সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। আগামী বছরের জুনে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের কাজ পুরোপুরি শেষ হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নতুন দ্বার উন্মোচন করবে এ সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স। গণপূর্ত অধিদফতর-১ চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ জানান, আগামী ১৬ ডিসেম্বর প্রকল্পের আওতাধীন নির্মিত চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অংশটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালের জুনে। এরই মধ্যে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের তিনটি ফ্লোরে লাইব্রেরি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অডিটোরিয়ামের কিছু কাজ বাকি আছে, তাও দ্রুত সময়ে শেষ করা হবে। জানা যায়, সর্বশেষ ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে পেরেছিল চট্টগ্রামবাসী। এরপর ২৭ ডিসেম্বর থেকে শহীদ মিনারের সংস্কার কাজ শুরু হয়। এ সময় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরিচালিত মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে নির্মিত শহীদ মিনারে পালন করা হয় জাতীয় দিবসগুলো। চট্টগ্রামে স্মৃতিসৌধ না থাকার কারণে একুশে ফেব্রুয়ারি, ১৬ ডিসেম্বর ও ২৬ মার্চসহ জাতীয় দিবসের কর্মসূচি পালন করা হয় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। এ শহীদ মিনারটি ১৯৬২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নগরের কেসিদে রোডে নির্মাণ করা হয়েছিল। নবনির্মিত শহীদ মিনারের বেদির উচ্চতা ১১ ফুট বাড়ানো হয়েছে। পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে একটি উন্মুক্ত মঞ্চ। এখানে সাংস্কৃতিক আয়োজনের পাশাপাশি সভা, সেমিনার আয়োজনের সুযোগ থাকবে।

প্রকল্প সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের উন্নয়নে সরকার চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট, বিভাগীয় পাবলিক লাইব্রেরি এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য এ প্রকল্প গ্রহণ করে। ২০১৫ সালের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সংস্কারের লক্ষ্যে নকশা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করার পর ২০১৬ সালের আগস্টে নকশা চূড়ান্ত করা হয়। ২০১৭ সালের নভেম্বরে একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। এরপর ২০১৮ সালের শুরুতে গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে গণপূর্ত বিভাগ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

প্রকল্পের আওতায় ১৫ তলা বিশিষ্ট একটি চট্টগ্রাম বিভাগীয় গণগ্রন্থাগার, একটি মাল্টিপারপাস হল ও সেমিনার হল এবং ৭ হাজার ৪১৩ দশমিক ৬০ বর্গফুট আয়তনের জনসমাগম স্থান তৈরি করা হচ্ছে। এর মধ্যে শেষ হয়েছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাজ। মূল সড়কের দুই পাশে যাতায়াতে তৈরি করা হয়েছে টানেল। গ্রন্থাগার ভবনের নিচতলায় থাকবে সার্ভিস সেকশন, যেখানে বই বাছাই, ফিউমিগেশন হবে। গ্রাউন্ড ও প্রথম ফ্লোরে থাকবে অফিস, দ্বিতীয় তলায় সেমিনার ও মিটিং রুম এবং তৃতীয় তলা থাকবে শুধু প্রতিবন্ধীদের জন্য। চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় জেনারেল লাইব্রেরি, ষষ্ঠ তলায় চিলড্রেন লাইব্রেরি, সপ্তম তলায় পেপার লাইব্রেরি, অষ্টম তলায় রেফারেন্স লাইব্রেরি, নবম ও দশম তলায় সায়েন্স লাইব্রেরি, ১১ তলায় ট্রেনিং ইউনিট, ১২ তলায় আইসিটি ইউনিট, ১৩ তলায় স্পেস ফর ফিউচার প্রোভিশন, ১৪ তলায় গেস্ট হাউস। গ্রন্থাগার অংশে সাধারণ পাঠাগারে ২৫০ জন, বিজ্ঞান পাঠাগারে ১৫০ জন, রেফারেন্স পাঠাগারে ১০০ জন, পত্রিকা/সাময়িকী পাঠাগারে ১০০, প্রতিবন্ধী পাঠাগারে ৫০ জন, উন্মুক্ত পাঠাগারে ১৫০ জন, শিশু-কিশোর পাঠাগারে ১০০ জন পাঠক একসঙ্গে বসে বই পড়তে পারবেন।

এ ছাড়া ৪০-৫০ জন বিশিষ্ট সভাকক্ষ ও সেমিনার কক্ষ, ১৫০ আসন বিশিষ্ট বড় সেমিনার কক্ষ রয়েছে। আইসিটি লাইব্রেরিতে থাকবে ৩০টি কম্পিউটার। এ ছাড়া থাকবে একটি রেস্ট হাউস, দুটি ভিআইপি কক্ষ ও সাধারণ ডরমেটরি কক্ষ। চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউটের মাল্টিপারপাস হলগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে এর পাশেই। প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় সেমিনার ও এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হল, তৃতীয় তলায় ক্যাফেটারিয়া ও প্রজেকশন হল, চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় থাকবে মিলনায়তন। গ্রন্থাগারের পাশে চট্টগ্রামের মুসলিম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করা হবে। মুসলিম ইনস্টিটিউট অংশে ৭৫০ আসন বিশিষ্ট মিলনায়তন, ৩০০ থেকে ৩৫০ আসন বিশিষ্ট মিনি অডিটোরিয়াম থাকবে। এখানে ২০০ ও ১০০ আসন বিশিষ্ট দুটি সেমিনার কক্ষ, একটি আর্ট গ্যালারি ও স্যুভেনির শপ থাকবে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর