রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

সংকটে বরেন্দ্র অঞ্চল

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছরই ধারাবাহিকভাবে অস্বাভাবিক হারে নিচে নামছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অনাবৃষ্টি, সেই সঙ্গে অনিয়ন্ত্রিত পানি উত্তোলনে পানি শূন্যতার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে এ অঞ্চলের ৪০ ভাগ ইউনিয়নে। এতে সেচ ও খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সাধারণ টিউবওয়েলে পানি মিলছে না। গভীর পাম্প বসিয়ে খাবার পানি তুলতে হচ্ছে। অনেক স্থানে তাতেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কম বৃষ্টিপাত, বেশি খরা ও ভূগর্ভের পানি নিচে নামছে। গেল জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে রাজশাহীর তানোরে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে গেছে ১১৩ ফুটের মতো। ১৯৯০ সালে সেখানে পানির স্তর ছিল ৬৮ ফুটের নিচে। তবে গত ১০ বছরে পানির স্তর দ্রুত নিচে নামছে। ২০১০ সালে যেখানে পানির স্তর ছিল ৫০ ফুট নিচে, সেখানে ২০২১ সালে পানির স্তর ৬০ ফুট নিচে নেমেছে। অর্থাৎ প্রতি বছরই পানির স্তর ১ ফুট করে নিচে নামছে। তবে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে গত বছর পানির স্তর ২ ফুট নিচে নেমেছে। সম্প্রতি ওয়াটার রিসোর্স প্ল্যানিং অর্গানাইজেশনের (ওয়ারপো) পক্ষ থেকে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) উঁচু বরেন্দ্র অঞ্চল রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর ভূপৃষ্ঠ ও ভূগর্ভস্থ পানি পরিস্থিতি নিয়ে হাইড্রোলজিক্যাল অনুসন্ধান ও মডেলিং শীর্ষক গবেষণা করেছে। গবেষণাটি ২০১৮ সালে শুরু হয় এবং চলতি বছরের জুন মাসে ওয়ারপোর অনুমোদন পায়। গবেষণায় উঠে এসেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলে পরিস্থিতি আগের চেয়ে প্রতিদিনই খারাপ হচ্ছে। পানি সংকটাপন্ন এলাকা বাড়ছে। গবেষণার তথ্যমতে, ১৯৮৫ থেকে ১৯৯০ সালে বরেন্দ্র অঞ্চলে গড় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ছিল ২৬ ফুট নিচে। সে সময় সর্বোচ্চ তানোরে পানির স্তর নেমেছিল ৬৮ ফুট। খাবার পানি, সেচ, মাছ চাষের মতো বিভিন্ন কাজে অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি তোলায় ২০১০ সালে পানির গড় ছিল ৫০ ফুট নিচে। ২০২১ সালে ভূগর্ভস্থ পানির গড় আরও নিচে নেমে দাঁড়ায় ৬০ ফুটে। একই বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের একটি স্থানে ভূপৃষ্ঠ থেকে মাটির নিচে পানি নামে ১৫৩ ফুট। গবেষণার তথ্যমতে, এ অঞ্চলের ২১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮৭টি ইউনিয়ন অতি উচ্চ ও উচ্চ পানি সংকটাপন্ন এলাকা। পানির স্তর সবচেয়ে বেশি নেমেছে নওগাঁর পোরশার ৬ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের চার ইউনিয়নে। অতি উচ্চ পানি সংকটে গোদাগাড়ী, তানোর, গোমস্তাপুর, নিয়ামতপুর ও সাপাহারসহ ৯ উপজেলার ৩৭টি ইউনিয়ন। গবেষণায় ৪০টি ইউনিয়নকে ‘উচ্চ পানি সংকটাপন্ন’ ও ৬৫টি ইউনিয়নকে ‘মাঝারি পানি সংকটাপন্ন’ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলের পানির স্তর খুব দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে। ১৯৯০ সালে এ অঞ্চলের গড় পানির স্তর ছিল ৮ মিটার। সেচ ধান, খাবার পানি, মাছচাষ, আমচাষ এবং শিল্পের অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি ওঠানোর কারণে ২০১০ সালে পানির গড় স্তর ১৫ মিটার দাঁড়িয়ে যায়। ২০২১ সালে বিস্তৃত এলাকাজুড়ে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর হয় ১৮ মিটার।

 

 

 

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর