রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বগুড়ায় তৃণমূল বিএনপির সাত প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ায় তৃণমূল বিএনপির সাত প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া

তৃণমূল বিএনপি বগুড়ার সাতটি সংসদীয় আসনের সবকটিতে প্রার্থী দেওয়ার জন্য সম্ভাব্যদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা (শর্ট লিস্ট) করেছে। দলটি সাতটি আসনেই জয়ী হতে চায়। জানা যায়, তাদের বাছাই প্রায় শেষ পর্যায়ে। ব্যবসায়ী, বহিষ্কৃত, ত্যাগী ও বিএনপির সাবেক নেতাদের নিয়ে তৃণমূল বিএনপি মাঠে নামবে এবার। তৃণমূল বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানান, সংসদের ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়া হবে এবং প্রার্থীদের বিজয়ের জন্য কাজ করে যাবে দলটি। বিএনপির সাবেক নেতা ও তৃণমূল বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক মাস আগে তৃণমূল বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ বগুড়া বিএনপির সাবেক ত্যাগী, মনোনয়নবঞ্চিত, বহিষ্কৃত নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হয়েছে। তাঁদের মতামতের ভিত্তিতে একটি শর্ট লিস্ট বানানো হয়েছে। এ শর্ট লিস্ট নিয়েই মাঠে নেমেছে তৃণমূল বিএনপি।

বগুড়ার সাতটি আসনে যাঁরা মনোনীত হতে পারেন তাঁরা হলেন : বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শোকরানা, জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা কর্নেল (অব.) জিল্লুর রহমান; বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেত্রী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বিউটি বেগম; বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) ব্যবসায়ী ও জাপানপ্রবাসী আফজাল হোসেন নয়ন; বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) সাবেক মেয়র ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা কামরুল হাসান জুয়েল; বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) ধনাঢ্য ব্যবসায়ী (নাম প্রকাশ করা হয়নি); বগুড়া-৬ (সদর) শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সরকার বাদল এবং বিএনপি নেতা মহসিন আলী রাজু; বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সরকার বাদল।

সরকার বাদলকে আপাতত দুটি আসনের তালিকায় রাখা হয়েছে। এ তালিকা পরিবর্তন হয়ে বিএনপির এক বহিষ্কৃত নেতাকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। তৃণমূল বিএনপির তালিকায় বিএনপির সাবেক এমপি ডা. জিয়াউল হক মোল্লার নাম থাকলেও তিনি স্বীকার করছেন না। তাঁর মতো আরও কয়েকজন নেতা বলছেন, তাঁরা বিএনপি ছেড়ে তৃণমূল বিএনপিতে যাবেন না।

জানা যায়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর থেকেই শক্ত অবস্থান গড়ে তোলে। দিন যত গড়িয়েছে ততই দলটি বগুড়ায় শক্তিশালী হয়ে ওঠে। কিন্তু ওয়ান-ইলেভেনের পর সেই বিএনপিতে ঘুণ ধরে। কোন্দল তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। জেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল কমিটি গঠন করতে গিয়ে বঞ্চিত করা হয়েছে দলের ত্যাগী নেতাদের।

সর্বশেষ ২০২২ সালের নভেম্বরে জেলা বিএনপির সম্মেলনে ভোটের মাধ্যমে রেজাউল করিম বাদশা সভাপতি ও আলী আজগর তালুকদার হেনা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সম্মেলনের প্রায় ১০ মাস পর এ বছরের সেপ্টেম্বরে জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম ১২ বছর দায়িত্ব পালনকালে নিবেদিতপ্রাণ বহু নেতা-কর্মী তৈরি করেন। ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট জেলা কমিটিতে ভিপি সাইফুল ইসলাম ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁনকেও রাখা হয়নি। জেলা বিএনপির যে আহ্বায়ককে ঘিরে দলের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে সেই সাবেক এমপি গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকেও রাখা হয়নি।

বগুড়ায় বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামের অন্যতম নেতা জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি সিপার আল বখতিয়ার, দেলোয়ার হোসেন পশারী হিরু, শাহ মেহেদী হাসান হিমু, তৌহিদুল ইসলাম বিটুসহ বেশ কয়েকজনের বহিষ্কারাদেশ তুলেও নেওয়া হয়নি আবার দলেও রাখা হয়নি। এর সঙ্গে দল থেকে বহিষ্কার হয়ে আছেন বগুড়া পৌরসভার তিনবারের প্যানেল মেয়র ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্মসম্পাদক পরিমল চন্দ্র দাস, শহর যুবদলের সাবেক সভাপতি সরকারবিরোধী আন্দোলনের শতাধিক মামলার আসামি মাসুদ রানা, ফারুকুল ইসলাম ফারুক, বিএনপি নেতা সরকার বাদলসহ শতাধিক নেতা। একসময় বিএনপিতে অর্থসংকটকালে সহযোগিতা করেছেন মুক্তিযোদ্ধা মো. শোকরানা। তাঁকেও দলের কোথাও রাখা হয়নি। তাই অভিমান করে তিনি দলের সব পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। দল থেকে তাঁকে ফেরাতে কোনো উদ্যোগও নেওয়া হয়নি।

তৃণমূল বিএনপি চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘শুধু বগুড়া-৭ আসনে নয়, সারা দেশে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেব। আমরা বগুড়ার সাবেক দুই এমপিসহ অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। তাঁরাও আমাদের সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগ করছেন। সামনে নির্বাচনের আগেই তৃণমূল বিএনপিকে গুছিয়ে মাঠে নামতে চাই।’

সর্বশেষ খবর