শনিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
গাজীপুর সিটি করপোরেশন

৯ কিলোমিটার সড়কে নগরবাসীর দুর্ভোগ

খায়রুল ইসলাম, গাজীপুর

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অভ্যন্তরে প্রায় ৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে জয়দেবপুর-পূবাইল সড়ক। সড়কটি সিটি করপোরেশনের পূবাইল কলেজ গেট এলাকায় টঙ্গী-ঘোড়াশাল-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে গিয়ে মিশেছে। এ সড়কটি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সঙ্গে জেলার কালীগঞ্জ, পূবাইল, বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে সহজে যাতায়াতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জেলা শহরের গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজ থেকে শুরু করে পূবাইল কলেজ গেট পর্যন্ত প্রায় ৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট সড়কটি প্রশস্তকরণসহ নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণের জন্য ২০২০ সালে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে গাজীপুর সিটি করপোরেশন। অধিগ্রহণ জটিলতায় ৬০ ফুট প্রশস্তের এ রাস্তাটি তিন বছরেও নির্মাণকাজ শুরু হয়নি। বর্তমানে সড়কটির বেহাল দশা। তিন বছরে সড়কটি ভেঙে যান চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এতে সিটি করপোরেশনের কানাইয়া, পূবাইল, মিরের বাজার, ভাদুন, নীলেরপাড়া, ইছালী, বাঙ্গালগাছ, বিলাসারা এলাকার বাসিন্দাসহ এ পথে চলাচলকারী অসংখ্য মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, রাস্তা প্রশস্তকরণসহ নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প ২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারি প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে। পরে একই (২০২০) বছরের ২ জুন এ প্রকল্পটি প্রশাসনিক অনুমোদন পায়। বিভিন্ন প্যাকেজে এ প্রকল্পের জন্য মোট ৩ হাজার ৮৬২ কোটি ৩০ লাখ টাকা প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়। এর মধ্যে গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজ থেকে দক্ষিণ ছায়াবিথী, বাঙ্গালগাছ, নীলেরপাড়া, ইছালী ব্রিজ হয়ে পূবাইল আদর্শ কলেজ গেট পর্যন্ত ৮ হাজার ৮৮০ মিটার দৈর্ঘ্য সড়কটি রাস্তা প্রশস্তকরণ, সিসি/আরসিসি রাস্তা উন্নয়ন এবং উভয় পার্শ্বে ড্রেন নির্মাণের কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে ডিজিটাল সার্ভে, রাজউকের অনুমোদন, নগর উন্নয়নের অনুমোদন, পরিবেশ ছাড়পত্র, জমি অধিগ্রহণের জন্য যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে সিটি করপোরেশন। ৩০ জুন ২০২০ সালে জমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের তহবিলে প্রথমে জমা দেওয়া হয় ১০ কোটি টাকা। সর্বশেষ চলতি বছরের ২১ জুন ৩৭২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা জমা দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে রাস্তার জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে তিন বছরে ১ হাজার ৩২৮ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা জমা দেওয়া হয় জেলা প্রশাসকের সংশ্লিষ্ট শাখায়। কিন্তু অধিগ্রহণ কাজ আজও সম্পন্ন হয়নি।

পূবাইল বাজার এলাকার কামরুল ইসলাম জানান, প্রায় তিন বছর ধরে এ এলাকার হাজার হাজার মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগ নিয়ে এ সড়কে চলাচল করছে। বিশেষ করে স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থী, অসুস্থ মানুষ, গর্ভবতী নারী এবং এলাকার অফিসগামী যাত্রীদের প্রতিদিন দুর্ভোগের অন্ত থাকে না।

স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল ইসলাম বলেন, আমরা শুনেছি জমি অধিগ্রহণের জটিলতায় রাস্তার উন্নয়ন কাজ আটকে রয়েছে। জমি অধিগ্রহণ যখন হবে হোক, আমাদের চলাচলের জন্য পূর্বের রাস্তাটি যেন শিগগিরই মেরামত করে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে তোলা হয়।

সড়কের পাশের একটি রিসোর্টের ম্যানেজার ইমরান হোসেন বলেন, পূবাইলে ৩০ থেকে ৩৫টি বড়-বড় রিসোর্ট ও শুটিং স্পট রয়েছে। এসবের মালিকরা কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এক সময়ের জমজমাট এ এলাকাটি রাস্তার কারণে অবহেলিত হয়ে রয়েছে। রাস্তা ভাঙা থাকায় পর্যটক ও শুটিং ইউনিট আসতে পারে না। তিন বছর ধরে আমরা কেবল লোকসান দিয়ে যাচ্ছি। দ্রুত এ রাস্তাটি চলাচল উপযোগী করা না হলে আমাদের প্রতিষ্ঠান পথে বসে যাবে। স্থানীয় স্কুল শিক্ষক আবুল হোসেন জানান, প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে কলেজে যেতে হয়। বর্ষা মৌসুমে আমাদের কষ্টের সীমা থাকে না। সড়ক জুড়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে গাড়ি ফেঁসে যায়। রাস্তা ভালো থাকলে ১৫/২০ মিনিটে পূবাইল থেকে জয়দেবপুর যাওয়া যায়। এখন এ সড়কে তেমন একটা যানবাহন না চলায় প্রতিদিন প্রায় ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার পথ হেঁটে যাতায়াত করতে হয়। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অতিরিক্তি প্রধান প্রকৌশলী মো. আকবর হোসেন জানান, অধিগ্রহণের টাকা জেলা প্রশাসকের তহবিলে জমা দেওয়া আছে। উন্নয়ন কাজের টাকাও আছে। শুধু অধিগ্রহণের জন্য কাজ আটকে আছে। জেলা প্রশাসকের দফতরে একাধিকবার চিঠি দিয়ে অধিগ্রহণ শেষ করার জন্য তাগাদা দেওয়া হয়েছে। অধিগ্রহণ শেষ হলে দরপত্র আহ্বান করা হবে।

গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোছাম্মৎ হাসিনা আক্তার জানিয়েছেন, সিটি করপোরেশনের পূবাইল রাস্তার জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে জমির মালিকদের ৭ ধারা নোটিস প্রদান করা হয়েছে। খুব শিগগিরই ৮ ধারা নোটিস দেওয়া হবে। ওই নোটিসের পর অধিগ্রহণ শেষ হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর