শিরোনাম
সোমবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

অনিশ্চয়তায় তিস্তা সেচ প্রকল্প

অর্থ বরাদ্দের অভাবে হোঁচট খাচ্ছে উন্নয়ন

নজরুল মৃধা, রংপুর

তিস্তা সেচ প্রকল্পের কাজ ২০২২ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়ে ২০২৪ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এখনো প্রকল্প বাস্তবায়নের ৮০ শতাংশের বেশি কাজ বাকি রয়েছে। কাজ এগিয়েছে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। ফলে তিস্তা সেচ কমান্ড এলাকায় বিগত দিনের মতো এবারও বোরো মৌসুমে পানি স্বল্পতা থাকবে। কবে নাগাদ প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে-  তাও বলা সম্ভব হচ্ছে না।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা সেচ প্রকল্পের পরিধি বাড়ানোর উদ্যোগ নেয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ওই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ২০২১ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেকে) পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘তিস্তা সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকার পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণ’ প্রকল্প পাস হয়। এর পর ২০২২ সালে জানুয়ারিতে কাজ শুরু হয়। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৪৫২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে  প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র বলছে, পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। 

জানা গেছে, প্রকল্প কমান্ড এলাকার ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে তৃণমূল পর্যায়ে সেচের পানি পৌঁছে দিতে ৭৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ সেকেন্ডারি আর টারসিয়ারি সেচ ক্যানেল নির্মাণে বিশেষ এই প্রকল্প (তিস্তা সেচ প্রকল্প পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণ) একনেকে পাস হওয়ার পর কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিকই। শুরুর পর প্রকল্পের কাজে গতি আসেনি। অথচ এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে প্রতিবছর অতিরিক্ত প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হওয়ার আশা করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু পর্যাপ্ত বরাদ্দ না পাওয়ায় কাজের গতি শ্লথ হয়ে পড়েছে। ফলে সেচ ক্যানেল এলাকার মানুষের স্বপ্ন ফিকে হতে বসেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, বোরো মৌসুমে দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম শুরু করা হয়। সেচ কমান্ড এলাকায় ৮৪ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা প্রদানের কথা থাকলেও সেচ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা কখনো পূরণ হয়নি। প্রতি বছর ২৫ থেকে ৩০ হাজার হেক্টর জমি সেচ কমান্ডের বাইরে থাকছে। সেচ প্রকল্পের আওতায় ২০১৪ সালে বোরো মৌসুমে নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ৮৩ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু সেচ দেওয়া সম্ভব হয় মাত্র ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে সেচ দেওয়া হয় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে। ২০১৭ সালে মাত্র ৮ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া হয়েছে। ২০১৮ সালে ৩৫ হাজার হেক্টর, ২০১৯ ও ২০২০ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৪০ হাজার হেক্টরে দাঁড়ায়।

২০২১ সালে ৫৩ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা হয়। ২০২২ সালে প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর জমি সেচের বাইরে থাকে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সেচ কমান্ড এলাকায় কৃষি সেক্টরে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে এমনটাই মনে করা হয়েছিল। কিন্তু অর্থাভাবে এই প্রকল্প কবে নাগাদ বাস্তবায়ন হবে এটা বলা সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প সূত্র জানায়, প্রকল্প এলাকায় সেচ দেওয়া এবং নদীর প্রবাহমাত্রা ঠিক রাখতে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে স্বাভাবিক প্রবাহমাত্রা থাকা প্রয়োজন ২০ হাজার কিউসেক পানি। শুধু সেচ প্রকল্প চালাতেই প্রবাহমাত্রা থাকা প্রয়োজন ১৪ হাজার কিউসেক এবং নদীর অস্তিত্ব রক্ষার জন্য প্রয়োজন ৬ হাজার কিউসেক পানি। কিন্তু শুকনো মৌসুমে তিস্তায় প্রয়োজনীয় পানি পাওয়া যায় না। শুষ্ক মৌসুমে বোরো আবাদের সময় ব্যারাজ পয়েন্টে বিগত কয়েক বছর ধরে পাওয়া যায় মাত্র ২ হাজার থেকে ৩ হাজার কিউসেক পানি। যে সামান্য পরিমাণ পানি তিস্তা নদীতে পাওয়া যায় তার সবটুকুই সেচ চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের ৩৪টি সেচ খালের মাধ্যমে কৃষিজমিতে সরবরাহ করা হয়।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, রংপুর ও নীলফামারী এলাকায় সেচ প্রকল্পের সার্বিক কাজ হয়েছে ২০ শতাংশ।  প্রকল্প বাস্তবায়নে যথাযথ বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না। বেশ কিছু নকশাও চূড়ান্ত করা বাকি রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর