সোমবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

মহাসড়কে দুই হাট, ভোগান্তি চরমে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

মহাসড়কে দুই হাট, ভোগান্তি চরমে

ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে পুঠিয়ার বানেশ্বর এবং পবার খড়খড়ি এলাকায় বসা দুটি হাটের কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী ও পথচারীদের ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দুটি হাট এলাকায় সৃষ্টি হচ্ছে ব্যাপক যানজট। আবার ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। বিশেষ করে পুঠিয়ার বানেশ্বর এলাকায় সপ্তাহে দুই দিন সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারী এবং যাত্রী সাধারণকে। আর খড়খড়ি এলাকায় প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল অন্তত ১১টা পর্যন্ত লেগে থাকছে যানজট। এখানেও ভোগান্তির পাশাপাশি ঘটছে দুর্ঘটনা। হাট ইজারার নামে প্রতি বছর সরকারের কোষাগারে যেমন কোটি কোটি টাকা জমা হয়, তেমনি প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রভাবশালীদের পকেটেও ঢোকে লাখ লাখ টাকা। কিন্তু জনসাধারণের ভোগান্তি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে ভোগান্তির মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

রাজশাহীর বানেশ্বর হাটে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কটি এমনিতেই অনেকটা ব্যস্ত। নাটোর পর্যন্ত দুই লেন হওয়ায় এই রাস্তাটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে মাঝেমধ্যেই ঘটে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। ২০১৯ সালে এই মহাসড়কে বাস-মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে দেশের সড়ক দুর্ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।

ওই ঘটনায় ১৯ জন আগুন পুড়ে নিহত হয়েছিলেন কাটাখালী এলাকায়। সেখান থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত বানেশ্বর বাজার। কৃষি ফসল কেনাবেচার জন্য উত্তরাঞ্চলের মধ্যে সর্ববৃহৎ হাটের মধ্যে একটি হলো বানেশ্বর। এই বাজারের একেবারে মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক। বাজার এলাকার কিছু অংশ ফোর লেন হলেও বাকি অন্তত ৯০ ভাগই দুই লেন মহাসড়ক। আবার এই বাজারের অধিকাংশ কৃষিপণ্য বিক্রি হয় রাস্তার দুই ধারে।

ব্যবসায়ীরা জানান, সপ্তাহের চার দিন এখন বসে হাট। শুক্র-শনি এবং সোম-মঙ্গলবার বসে কলার হাট। আর শনিবার ও মঙ্গলবার বসে মূল হাট। ফলে এই দুই দিন সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হতে হয় যাত্রীসাধারণ ও পথচারীদের। হাটের কলেজ গেট থেকে একেবারে শিবপুর পর্যন্ত ১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট লেগে থাকে সেই ভোর থেকে। চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। দুর্গাপুরের নাজমুল হোসেন বলেন, ‘একেবারে রাস্তার ওপরে হাট বসে। পাটের গাড়িও ঠিকমতো দাঁড় করানো যায় না। আবার রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনগুলোও ঠিকমতো চলাচল করতে পারে না। ফল ব্যবসায়ী আসলাম হোসেন বলেন, সপ্তাহের দুই হাটের দিন খুব ভিড় থাকে। পায়ে হেঁটেও পার হওয়া যায় না।

হাটের ইজারাদার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘২ কোটি ৫০ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে হাটের এক বছরের জন্য লিজ নিয়েছি। কিন্তু জায়গার সংকট থাকার কারণে দুই হাটের দিন ভিড় লেগেই থাকছে রাস্তার ওপরে। এতে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই।’

খড়খড়ি বাজারে ভোর ৬টায় গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক ঘিরেই মূলত বসেছে এই হাটটি। সপ্তাহের প্রতিদিনই এখানে হাট বসে। সকাল ১১টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়। তবে প্রতিদিনই এখানে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। সবজি বিক্রির অন্যতম এই হাটের দুই ধারে শত শত দোকানপাটের কারণে ঠিকমতো যান চলাচল করতে পারে না।

সবজি কিনতে যাওয়া রাজশাহী নগরীর ব্যবসায়ী মামুন হোসেন বলেন, ‘প্রায় দুই বছর ধরে এখানে হাট বসার পর থেকেই আমি প্রতিদিন সবজি কিনতে আসি। সেই সবজি শহরে গিয়ে বিক্রি করি। কিন্তু খুব ঝুঁকি নিয়ে মালামাল কিনতে হয়। একেবারে রাস্তার ওপরে হাট বসার কারণে মালামাল কিনে রাস্তা পার হতে গিয়ে পড়তে হয় ঝুঁকির মুখে। দুই বছরে এই হাটের রাস্তা পার হতে গিয়ে তিন-চারজন মারাও গেছেন।’

হাটের ইজারাদার পবা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি এমদাদুল হক বলেন, ‘আমরা হাট লিজ নিয়ে ব্যবসা করি। টোল আদায় করা আমাদের কাজ। হাটের নিরাপত্তা দেওয়া প্রশাসনের কাজ।’

রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ‘মহাসড়কের ওপর হাট বসার কথা না। তার পরও যদি এমনটা হয়ে থাকে, তাহলে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাস্তার ওপরে হাট বসিয়ে আমরা মানুষের জানমালের হুমকির মুখে ঠেলে দিতে পারি না।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর