বুধবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

রোমানিয়ায় পাঠানোর নামে কোটি টাকা আত্মসাৎ

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

বৈধ পন্থায় পাঠানো হবে রোমানিয়া। এ জন্য দিতে হবে ৮ লাখ টাকা। এমন প্রলোভন দেখিয়ে ১৬ জন যুবকের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে মানব পাচারকারী চক্র। ফ্লাইটের পাঁচ দিন আগে যাত্রীদের ফেলে উধাও হয়ে যায় মানব পাচারকারী চক্রের মূল হোতা। এরপর যাত্রীরা বুঝতে পারেন তারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন। প্রায় ৯ মাস ধরে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও টাকা উদ্ধার করতে না পেরে সমাবেশ করে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। প্রতারিতদের অভিযোগ, টাকা আত্মসাৎ করেও মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যরা বসে নেই। উল্টো মামলা দিয়ে তাদের হয়রানি করছে চক্রের সদস্যরা।  গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাদেপাশা ইউনিয়নের খাগাইল গ্রামের বাসিন্দা ও আছিরগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী আবদুস সালাম জানান, রোমানিয়ায় পাঠানোর কথা বলে আছিরগঞ্জ বাজারের আজিজ ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী জহির উদ্দিন তার সঙ্গে মৌখিকভাবে ৮ লাখ টাকার চুক্তি করেন। জহির একই ইউনিয়নের আমকোনা গ্রামের মৃত রফিক উদ্দিনের ছেলে। চুক্তি অনুযায়ী তিনি অগ্রিম ৭ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। জহিরের বাড়িতে এলাকার কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতিতে তিনি জহির উদ্দিনের কাছে ওই টাকা দেন। এ সময় জহির উদ্দিনের চাচা নুর উদ্দিনও উপস্থিত ছিলেন। লেনদেনের সঙ্গে তিনিও সম্পৃক্ত ছিলেন। আবদুস সালাম জানান, তার মতো এলাকার ১৬ জনের কাছ থেকে জহির উদ্দিন ও তার সহযোগীরা টাকা নিয়েছেন। রোমানিয়ায় পাঠানোর জন্য একেক জনের কাছে ৬ থেকে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত নেয় ওই চক্র। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি তাদের ফ্লাইট হওয়ার কথা ছিল। ফ্লাইটের দিন সবাই বকেয়া টাকা পরিশোধ করার কথা। কিন্তু ২২ ফেব্রুয়ারি জহির উদ্দিন গা ঢাকা দেন। তখন তারা বুঝতে পারেন তারা মানব পাচারকারী চক্রের দ্বারা প্রতারিত হয়েছেন।

আবদুস সালাম আরও জানান, তিনি ঋণ করে জহিরের হাতে টাকা তুলে দিয়েছেন। অনেকে সুদে টাকা এনে, বসতভিটা বন্ধক রেখে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে টাকা দিয়েছিলেন। এখন বিদেশ যেতে না পারায় তারা মহাবিপদে পড়েছেন। পাওনাদাররা টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে। এখন পাওনাদারদের ভয়ে অনেকেই ঘরছাড়া। ভুক্তভোগীরা জানান, জহির আত্মগোপনে যাওয়ার পর তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আসছিলেন তারা। প্রথমে তারা টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে আশ্বাস দেন। পরে নানা টালবাহনা শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। প্রতারিতরা অভিযোগ করেন, আত্মসাৎ করা টাকার জন্য জহিরের পরিবারকে যেন চাপ দেওয়া না হয়- সেজন্য তার চাচা নুর উদ্দিন থানায় মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। এদিকে, আত্মসাৎ করা টাকা ফেরত পাওয়ার দাবিতে শুক্রবার গোলাপগঞ্জের আছিরগঞ্জ বাজারে সমাবেশ করেছেন প্রতারিতরা। ওই সময় প্রতারিতরা বলেন, তারা এখন সর্বস্বান্ত। জহির তাদের পথে বসিয়েছে। আবার জহিরের চাচা নুর উদ্দিন মামলা দিয়ে তাদের হয়রানি করছেন। এই অবস্থায় তাদের আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই। আগামী ২৬ নভেম্বরের মধ্যে প্রশাসন জহিরকে গ্রেফতার করে টাকা উদ্ধারের উদ্যোগ না নিলে ফেসবুক লাইভে এসে তারা আত্মহত্যা করবেন। এ প্রসঙ্গে জহির উদ্দিনের চাচা নুর উদ্দিন জানান, বিদেশ পাঠানোর নামে টাকা আত্মসাতের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। এরকম কোনো লেনদেনের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা নেই। তাকে হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করায় নিজের নিরাপত্তা চেয়ে তিনি আইনের আশ্রয় নিয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর