শিরোনাম
রবিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

পাথর উত্তোলনে বিলীন হচ্ছে তেঁতুলিয়ার ডাহুক নদ

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

পাথর উত্তোলনে বিলীন হচ্ছে তেঁতুলিয়ার ডাহুক নদ

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ডাহুক নদের গতিপথ বন্ধ করে পাথর উত্তোলন করছে প্রভাবশালী পাথর ব্যবসায়ীরা। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ডাহুকের দুই পাড়ে বনবিভাগ ও সরকারি জমি খনন করেও পাথর উত্তোলন করছেন তারা। এতে ডাহুক নদ হুমকির মুখে পড়েছে।

ভারতে উৎপত্তি হয়ে বাংলাদেশে ১৪ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে আবার ভারতে প্রবেশ করেছে ডাহুক। পশ্চিমে শালবাহান ইউনিয়ন এবং পূর্বদিকে বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের হাজার হাজার একর কৃষি জমি রয়েছে। রয়েছে চা বাগান, আমসহ নানা ফলের বাগান। স্থানীয়রা বলছেন, এসব চাষাবাদে ডাহুকের বিশাল অবদান রয়েছে। প্রতি বছর বর্ষাকালে পলি মিশ্রিত পানি ছড়িয়ে দেয় এ নদ। শুষ্ক মৌসুমে ডাহুকের প্রবাহিত পানি চাষাবাদের জমিকে উর্বর করে। ডাহুকে রয়েছে নানা প্রজাতির মাছ। সারা বছর ডাহুকে অন্তত: ১৪ থেকে ১৫ টন মাছ আহরণ করেন দুই ইউনিয়নের শতাধিক জেলে। এলাকার হাজার হাজার মানুষের আমিষের চাহিদা মেটায় এ মাছ।

বর্তমানে পাথর উত্তোলনের ফলে নদের গতিপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। আসছে শুষ্ক মৌসুমে এ নদ মরে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যত্রতত্র পাথর উত্তোলনের ফলে ডাহুকের সীমানাও হারিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় অন্তত: ১০০ জন পাথর ব্যবসায়ী নদটির যেখানে সেখানে খনন করে ডুবুরির মাধ্যমে পাথর উত্তোলন করছেন। ফলে নদের কোথাও কোথাও বালির ঢিবি হয়ে যাচ্ছে আবার কোথাও কোথাও বিশাল গর্ত সৃষ্টি হচ্ছে। এতে নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ আটকে যাচ্ছে। নদের জল বিকল্প দিকে প্রবাহিত হওয়ার ফলে দুই দিকের পাড় ভাঙছে। কমে যাচ্ছে কৃষি জমি।

স্থানীয়রা বলছেন, প্রবাহমান পানি আটকে ব্যবসায়ীরা পাথর উত্তোলন করছেন। ফলে পানির গতিপথ পরিবর্তন হয়ে মালিকানা জমিতে ডাহুক প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জমির মালিকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। নাওয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফারুখ হোসেন বলেন, ‘ডাহুক শেষ। কেউ কিছু বুঝতেছে না। নিজেদের স্বার্থে নদটিকে হত্যা করে পাথর উত্তোলন করছে। আমার ব্যক্তিগত কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে। এখানে কয়েক শ জেলে আজ বেকার হয়ে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ আসে। তখন বন্ধ হয়। চলে গেলে আবার উত্তোলন শুরু হয়।’ প্রাণ প্রকৃতি পরিবেশবিষয়ক বেসরকারি সংগঠন কারিগরের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘অপরিকল্পিতভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধ করা না গেলে ডাহুক চিরতরে হারিয়ে যাবে।’

তেঁতুলিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, ‘বারবার পুলিশ অভিযানে যায়। তখন পাথর তোলা বন্ধ করে তারা পালিয়ে যায়। অনেক ট্রলি আটক করা হয়েছে। একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে। আমরা তৎপর রয়েছি।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। অচিরেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর