সোমবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

রাজনৈতিক অস্থিরতায় মাদকের ঢল

চট্টগ্রামে অভ্যন্তরীণ রুট ২৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে ঢল নেমেছে মাদকের। বৃহত্তর চট্টগ্রামের দেড় শতাধিক পয়েন্ট দিয়ে দেশে প্রবেশ করছে ইয়াবা, আইস, গাঁজা, ফেনসিডিলসহ নানা ধরনের মাদক। পরে ২৮টি অভ্যন্তরীণ রুট দিয়ে তা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে- রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে মাদক নিয়ে ফোকাস কমলেও অভিযান অব্যাহত রয়েছে আগের মতোই। জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে নাশকতা রোধসহ অন্যান্য কাজে পুলিশকে একটু বেশি সময় দিতে হবে। তারপরও মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে।’

সিএমপির মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার স্পিনার রানী প্রামাণিক বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পুলিশকে এখন কিছু অতিরিক্ত কাজ করতে হচ্ছে। এর মধ্যেও মাদক প্রতিরোধে কাজ করছে পুলিশ।’

এ বিষয়ে কথা হয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে। তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্বাভাবিক সময়ে প্রশাসনের মূল ফোকাস থাকে মাদকের ওপর। রাজনৈতিক অস্থিরতার এ সময়ে প্রশাসনকে পুরোটাই সময় ব্যয় করতে হচ্ছে নাশকতা প্রতিরোধ ও গ্রেফতার অভিযানের পেছনে। তাই স্বাভাবিক সময়ের মতো মাদকবিরোধী অভিযান চালানো যাচ্ছে না। প্রশাসনের এমন শিথিলতার সুযোগ হয়তো কোনো কোনো মাদক ব্যবসায়ী নিচ্ছে।

জানা যায়, গত মাসের শেষের দিকে বিএনপি ও সমমনাদের হরতাল ও অবরোধকে ঘিরে ব্যস্ত হয়ে পড়েন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। নাশকতা রোধ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে টানা অভিযানে ব্যস্ত হয়ে পড়ে প্রশাসন। ফলে মাদকবিরোধী অভিযানসহ অন্যান্য অভিযান কমিয়ে দেওয়া হয় এ সময়। প্রশাসনের এ শিথিলতার সুযোগে সক্রিয় হয়ে ওঠে মাদক মাফিয়ারা। রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে বৃহত্তর চট্টগ্রামের ১৮টি উপজেলার ১৫৮টি পয়েন্ট দিয়ে আনা হচ্ছে নানান ধরনের মাদকের চালান। এর মধ্যে ইয়াবা ও আইস আসে কক্সবাজার ও বান্দরবান দিয়ে। কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী এবং খাগড়াছড়ি জেলার পয়েন্টগুলো দিয়ে আসে গাঁজা, ফেনসিডিল, এসকফ সিরাপ ও বিদেশি মদ। দেশের প্রবেশের পর ২৮টি অভ্যন্তরীণ রুট দিয়ে ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। এ রুটগুলোর মধ্যে কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলায় রয়েছে ৪টি। যার মধ্যে রয়েছে টেকনাফ-উখিয়া-মরিচ্যা-লিংক রোড-কক্সবাজার-রামু, টেকনাফ-উখিয়া-রেজুখাল ব্রিজ-কক্সবাজার-রামু-চট্টগ্রাম, গর্জনিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ি-রামু চা বাগান-ঈদগাঁও-চট্টগ্রাম এবং সোনাইছড়ি-পাঞ্জেগানা বাজার-রামু-চট্টগ্রাম। বান্দরবান জেলায় রয়েছে অভ্যন্তরীণ রুট ২টি। যার মধ্যে মিয়ানমার-নাইক্ষ্যংছড়ি-রামু-কক্সবাজার-চট্টগ্রাম এবং নাইক্ষ্যংছড়ি-আলিকদম-লামা-চকোরিয়া-লোহাগাড়া-সাতকানিয়া-বান্দরবান-চট্টগ্রাম। মহেশখালী উপজেলায় রয়েছে ৩টি রুট। যার মধ্যে রয়েছে সেন্টমার্টিন-সোনাদিয়া-মহেশখালী, মহেশখালী-বদরখালী-চকোরিয়া-পেকুয়া-চট্টগ্রাম এবং মহেশখালী-কুতুবদিয়া-বাঁশখালী-আনোয়ারা-চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম জেলায় রয়েছে ৫টি রুট। যার মধ্যে রয়েছে কক্সবাজার-চকোরিয়া-লোহাগাড়া-সাতকানিয়া-চন্দনাইশ-পটিয়া-চট্টগ্রাম, চন্দনাইশ-আনোয়ারা-চট্টগ্রাম, পটিয়া-মনসা-বোয়ালখালী-চট্টগ্রাম, কক্সবাজার থেকে সমুদ্র পথে বাঁশখালী-আনোয়ারা-চট্টগ্রাম   এবং লোহাগাড়া-সাতকানিয়া-কেরানিহাট-বান্দরবান-লেচুবাগান-চট্টগ্রাম। কুমিল্লা জেলায় অভ্যন্তরীণ রুট রয়েছে ৫টি। যার মধ্যে রয়েছে আনন্দপুর-আশাবাড়ি-শশীদল-চট্টগ্রাম ও ঢাকা, তেঁতাভূমি-হরিমঙ্গল-নাইঘর-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-মিরপুর-কসবা-ঢাকা, শংকুচাইল-কংশনগর-ক্যান্টনমেন্ট-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা, গোলাবাড়ি-বিবির বাজার-নিশ্চিতপুর-চট্টগ্রাম ও ঢাকা এবং চৌদ্দগ্রাম-মিয়ারবাজার-সুয়াগাজী-চট্টগ্রাম ও ঢাকা রুট। চাঁদপুর জেলার ৪টি রুট দিয়ে প্রবেশ করে ইয়াবা ও আইসের চালান। এ রুটগুলোর মধ্যে রয়েছে লক্ষ্মীপুর-ফরিদগঞ্জ-হরিণাঘাট, কুমিল্লা-হাজীগঞ্জ-চাঁদপুর-বরিশাল, চট্টগ্রাম-ফেনী-কুমিল্লা-চাঁদপুর-ঢাকা এবং দাউদকান্দি-শ্রীরায়ের চর-মতলব-চাঁদপুর।  নোয়াখালী জেলায় রয়েছে ৫টি রুট। যার মধ্যে রয়েছে টেকনাফ-কক্সবাজার-চট্টগ্রাম-ফেনী-নোয়াখালী, টেকনাফ-কক্সবাজার-মিরসরাই-মুসাপুর বেড়িবাঁধ-কবিরহাট-নোয়াখালী, কুমিল্লা-সোনাইমুড়ী-চৌমুহনী চৌরাস্তা-নোয়াখালী, কুমিল্লা-শাহরাস্তি-হাজিগঞ্জ-রামগঞ্জ-চাটখিল-নোয়াখালী এবং ফেনী-দাগনভুঞা-চৌমুহনী-নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর অন্যতম।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর