সোমবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঝুঁকিপূর্ণ ভবন বাড়ছে চট্টগ্রামে

একের পর এক হেলে পড়ছে ভবন

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে বাড়ছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন। নগরীতে গত দুই বছরে অন্তত তিন-চারটি ভবন হেলে পড়ে। সর্বশেষ গত শনিবার সন্ধ্যায় পশ্চিম শহীদনগর তৈয়াবিয়া হাউজিং এলাকায় চার তলা ভবন পাশের ছয় তলা ভবনের দিকে হেলে পড়ে। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালককে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। অভিযোগ আছে, নগরীর অনেক বহুতল ভবন খাল দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) খাল সংস্কার ও সম্প্রসারণ করতে গেলে অনেক ভবন ঝুঁকিতে পড়ে।

জানা যায়, সিডিএ জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পে নগরীর খালগুলোর পাশ দিয়ে সড়ক নির্মাণ, খাল সম্প্রসারণসহ উন্নয়ন কাজ করা হচ্ছে। বর্তমানে কাজ চলা শীতল ঝরনা খালের পাশের ভবনটি হেলে পড়েছে। ভবনটির পেছনের দেয়াল খালের শূন্য লাইনের ওপর। কাজ শুরুর আগেই  ভবন মালিককে জায়গা ছেড়ে দিতে বলা হলেও তা করেননি। তিনি জমি ছাড়তে রাজি হননি।

ভবনটির মালিক মো. খোরশেদ বলেন, খালের কাজ শুরুর আগে জমি না ছাড়ার লিখিত দিয়েছি। এখন খালের মাটি কাটার কাজ শুরুর পর ভবনটি হেলে পড়ে। সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি অপসারণ করার জন্য মালিককে বলা হয়েছিল। কিন্তু ভবন মালিক তা করেননি। এখন ভবনটি হেলে পড়ছে।

আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক এম এ মালেক বলেন, ঘটনার পর ভবনের ৮টি পরিবারকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তাছাড়া আশপাশের ভবনগুলোও ঝুঁকিতে থাকায় তাদেরও সতর্ক করা হয়েছে। কার্যত ওই এলাকার মাটি নরম। তাই সতর্ক থাকতে পুরো এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) উমর ফারুক বলেন, হেলে পড়া ভবন ও আশপাশের আরও চারটি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় সেখানকার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ৫টি ভবনে কেউ যেন পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বসবাস না করেন সে জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। বাসিন্দাদের আশপাশের বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প চলাকালে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি নগরীর ষোলশহর রেলস্টেশনের পাশে ফেরদৌস প্লাজা নামে ভবন হেলে পড়ে। ২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর রাতে নগরের মাদারবাড়ি এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ চলাকালে খালের পাশের দুটি ভবন, একটি মন্দির ও একটি কাঁচা ঘর হেলে পড়েছিল। ২০২১ সালের ১০ এপ্রিল রাতে নগরীর এনায়েত বাজার গোয়ালপাড়া এলাকায় কার্তিক ঘোষের মালিকানাধীন একটি পাঁচ তলা ভবন হেলে পড়ে। ২০২১ সালের ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর ও চকবাজার কাপাসগোলা এলাকায় ভূমিকম্পের পর হেলে পড়ে দুটি ভবন। হেলে গিয়ে ভবন দুটি ঠেকেছে পাশের ভবনে। ২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল রাতের ভূকম্পনে নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বি-ব্লকের ৮ নম্বর সড়কে হেলে পড়ে শিরিন নিকেতন নামের ছয় তলা একটি ভবন। এটি পাশের আরেকটি ভবনের ছাদের অংশের দিকে লেগে গিয়েছিল। বারবার হেলে পড়ার ঘটনা ঘটলেও এ নিয়ে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষগুলো নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ। ফলে হেলে পড়ার মতো দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর