শিরোনাম
বুধবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

কিডনি রোগীদের ভোগান্তি চরমে

ডায়ালাইসিস বন্ধ রমেক হাসপাতালে

নজরুল মৃধা, রংপুর

কিডনি রোগীদের ভোগান্তি চরমে

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগে কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস বন্ধ রয়েছে। তিন দিন আগে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের কারণে ২৮টি ডায়ালাইসিস মেশিনের মধ্যে ৯টিই বিকল হয়ে যায। মেশিন নষ্ট হওয়ায় ডায়ালাইসিস চিকিৎসাসেবা বন্ধ রয়েছে। ফলে প্রতিদিন দেড় শতাধিক রোগীকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এ ছাড়া ওই ওয়ার্ডের রোগীদের সব ধরনের উপকরণ কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে। ফলে রোগীদের আর্থিক খরচের পাশাপাশি চিকিৎসায় ভোগান্তি বাড়ছে। অনেকে অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না। হৃদরোগ বিভাগের ইকো মেশিনসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি অচল অবস্থায় পড়ে রয়েছে দীর্ঘ দিন থেকে। এ ছাড়া ৫০০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে ২ হাজারের বেশি রোগীর চিকিৎসাসেবা। ১ হাজার ৮৭৫ জন জনবলের বিপরীতে শূন্য পদ রয়েছে প্রায় সাড়ে ৩০০। গতকাল রমেক হাসপাতালের ডায়ালাইসিস ওয়ার্ডে গিয়ে জানা গেছে, রংপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার প্রায় দেড় শতাধিক কিডনি রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। তারা অগ্রিম টাকা জমা দিয়ে তালিকাভুক্ত হন। তাদের প্রতি সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিন দিন ডায়ালাইসিস করার জন্য আসতে হয়। এ ছাড়াও নতুন রোগী তো আছেই। কিছুুদিন আগে এসব ঠিক করা হলেও চিকিৎসার উপকরণ কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন রোগীর স্বজনরা। রোগীরা অভিযোগ করেছেন এই বিভাগের রোগীদের ডায়ালাইজার, স্যালাইন, নিডেলসহ অন্যন্য ওষুধ-পথ্য সব বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। এতে ডায়ালাইসিসে ব্যয় হচ্ছে ২ হাজার ৯০০ টাকার মতো। ফলে সরকারি হাসপাতাল হিসেবে যেসব সেবা পাওয়ার কথা, তারা তা পাচ্ছেন না। কিডনি বিভাগে চিকিৎসাধীন রোগী সামছুল আলমের (৫৫) সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, তিন মাস আগে থেকে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হঠাৎ ডায়ালাইসিস মেশিন নষ্ট হওয়ায় চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না। রোগীর স্বজন মিঠাপুরের বাসিন্দা আশুরা বেগম বলেন, তিনি তার স্বামীকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। বর্তমানে ডায়ালাইসিস বন্ধ রয়েছে। সব ধরনের ডায়ালাইসিস উপকরণ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। জানা গেছে, একজন কিডনি রোগী টাকা জমা দিয়ে সপ্তাহে দুই দিন করে মাসে আটবার ডায়ালাইসিস করাতে পারেন। এটি রোগীদের প্যাকেজ সুবিধা দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যাদের দুটি কিডনি বিকল, একমাত্র তাদের সপ্তাহে দুবার ডায়ালাইসিস করানো হয়।

আগে সব ধরনের উপকরণ হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হতো। বর্তমানে প্রত্যেক রোগীকে ডায়ালাইসিসের সব উপকরণ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। এই হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা ১ হাজার হলেও জনবল রয়েছে ৫০০ শয্যার। এখানে রয়েছে ইনডোর বিভাগ, আউটডোর বিভাগ, জরুরি বিভাগ ও অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস।

এ ছাড়াও ডায়রিয়া ট্রেনিং ইউনিট, ইপিআই প্রোগ্রাম, ইওসি কার্যক্রম, ডটস কর্নার, এমআর ক্লিনিক, মডেল ফ্যামিলি প্লানিং ক্লিনিক, ব্রেস্ট ফিডিং সেন্টার, সমাজসেবা কার্যক্রমসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। হৃদরোগ বিভাগের ইকো মেশিনের সবগুলোই নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। হৃদরোগীদের চিকিৎসা হচ্ছে শুধু ইসিজিনির্ভর। ইকো মেশিন না থাকায় হৃদযন্ত্রের জটিল সমস্যা চিহ্নিত করতে পারছে না রোগীরা। ফলে অনেক রোগী মৃত্যুবরণও করেছেন বলে এমনও অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালের সিটিস্ক্যান মেশিনটিও দীর্ঘদিন থেকে অকেজ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ফলে রোগীদের সিটিস্ক্যান বাইরে থেকে করতে হচ্ছে। রোগ নির্ণয়ের গুরুত্বপূর্ণ এমআরআই মেশিনটিও নষ্ট। সব মিলিয়ে দেখা গেছে হাসপাতালে শুধু নাই আর নাই। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. ইউনুস আলী বলেন, বিদ্যুতের শর্টসার্কিটের কারণে সমস্যা হওয়ায় ডায়ালাইসিস বন্ধ রয়েছে। আজ ঢাকা থেকে টেকনিশিয়ান আসার কথা রয়েছে। দুই এক দিনের মধ্যে আবারও ডায়ালাইসিস সেবা শুরু হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর