শনিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

রাজশাহীর সব আসনেই জট

দলের একাধিক নেতা নৌকার জন্য চ্যালেঞ্জ

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

রাজশাহীর ছয়টি সংসদীয় আসনে গড়ে ৯ জনের বেশি প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সব মিলিয়ে এখন প্রার্থী হয়েছেন ৫৮ জন। আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের এবার চ্যালেঞ্জ করেছেন দলের একাধিক নেতা। এ ছাড়া জোটসঙ্গীকেও এবার চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ফলে সব আসনেই বেঁধেছে জট। রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন চিত্রনায়িকা শারমিন আক্তার নিপা মাহিয়া, গোলাম রাব্বানী, শাহনেওয়াজ আয়েশা আক্তার ডালিয়া, গোলাম রাব্বানী ও মো. আখতারুজ্জামান। তারা সবাই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তারা ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয়। এ আসনটিতে জোট করে ভোট করতে চান স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। প্রার্থী শাহনেওয়াজ আয়েশা আক্তার ডালিয়া জানান, তাদের পাঁচজনের মধ্যে যে কেউ একজন প্রার্থী হবেন। প্রত্যাহারের আগেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

রাজশাহী-২ (সদর) আসনে টানা তিনবারের এমপি ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। এবারও তিনি প্রার্থী হয়েছেন। তবে এখনো তাকে আসনটি ছেড়ে দিতে সবুজসংকেত দেয়নি আওয়ামী লীগ। এবার দলীয় প্রার্থী হয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল। আওয়ামী লীগ জোটের স্বার্থে আবারও ফজলে হোসেন বাদশাকে ছাড় দিলে মোহাম্মদ আলী কামাল প্রত্যাহার করতে পারেন। ফজলে হোসেন বাদশাকে ছাড় না দিতে তাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা। এ ছাড়া কর্মীদের মাঝে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রেসিডিয়াম সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, ‘আর ভাড়া খাটতে চান না।’ তার এই বক্তব্য ভাইরাল হওয়ার পর আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামতে পারেন-এমন আভাস দিয়েছেন দলটির একাধিক নেতা। ফলে এ আসনটিতে জোটের সঙ্গে প্রার্থী নিয়ে জট আওয়ামী লীগে। যদিও ফজলে হোসেন বাদশা বলছেন, জোটের প্রয়োজনীয়তা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। শিগগিরই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বর্তমান এমপি মো. আয়েন উদ্দিন। এখন থেকে এলাকায় উত্তেজনা বাড়িয়ে চলেছেন দুজনই। নেতা-কর্মীরা বিভক্ত দুই শিবিরে। দলের মনোনয়ন পাওয়া আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘আয়েন উদ্দিন নির্বাচন করে তার জনপ্রিয়তা যাচাই করুক।’ রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ। তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রার্থী হয়েছেন বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান এমপি এনামুল হক। এখানেও দুই শিবিরে বিভক্ত আওয়ামী লীগ নেতারা। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারোয়ার আবুল নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে করণীয় নির্ধারণে সভা আহ্বান করেন বৃহস্পতিবার বিকালে। ওইদিন রাতেই এনামুলের অনুগত হিসেবে পরিচিত দফতর সম্পাদক নুরুল ইসলাম আরেক চিঠিতে এই সভা সভাপতির অনুমতি ছাড়া আহ্বান করা হয়েছে দাবি করে তাতে উপস্থিত না হতে অনুরোধ জানিয়েছেন নেতা-কর্মীদের। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারোয়ার আবুল বলেন, ‘সভাপতি নিজেই দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন। এখন দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে তার অনুমতি কীভাবে নেব?’ রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আবদুল ওয়াদুদ দারা। তার বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান এমপি ডা. মনসুর রহমান, জেলা যুবলীগের সাবেক সহসভাপতি ওবায়দুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান উল হক মাসুদ। তাদের মধ্যে যে কেউ একজন প্রার্থী হবেন বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান উল হক মাসুদ। রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা রায়হানুল হক। তাকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়ে মাঠে আছেন বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাস আলী, বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন লাভলু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মেরাজুল ইসলাম। রায়হানুল হক জানান, তিনি দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নন, ভোটকে উৎসবমুখর করতে প্রার্থী হয়েছেন। যদিও দুই উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতারা শাহরিয়ার আলমের সঙ্গেই আছেন। চারঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফকরুল ইসলাম বলেন, শাহরিয়ার আলম ক্লিন ইমেজের প্রার্থী। এর আগের নির্বাচনগুলোতেও তারা বিরুদ্ধে ছিল, এবারও আছে। সাধারণ মানুষ শাহরিয়ার আলমকেই নির্বাচিত করবেন।

 

 

 

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর