মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

মিলেমিশে নদী দখলের মচ্ছব

♦ দখলদারের তালিকায় সরকারি প্রতিষ্ঠান ♦ প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

রাজশাহীর বড়কুঠির সামনে পদ্মায় এক সময় পানি ছিল। সেখানে নৌকাও চলত। কিন্তু এখন পানি নেই। নদীর জায়গা দখল করে সেখানে গড়ে উঠেছে খাবারের দোকান। রাজশাহীর লালন শাহ মুক্তমঞ্চের স্থানে কয়েক বছর আগেও ছিল প্রমত্ত পদ্মার জলধারা। সেই গতিপথ পরিবর্তন হয়ে সেখানে চর জেগেছে। বর্ষায় কিছুদিন পানি উঠলেও সারা বছর শুকনো থাকে। নদী আরও দক্ষিণ দিকে সরে গিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেগে ওঠা চরগুলো দখল করে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে দোকানপাট ও স্থায়ী পাকা স্থাপনা। ব্যক্তিগত দখল ছাড়াও রাজশাহী সিটি করপোরেশন এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) নির্মাণ করেছে একাধিক পাকা ভবন। শুধু তাই নয়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) শহর রক্ষাবাঁধ ঘিরে নদী দখলে রেখেছেন আরও ৬০০ দখলদার। এসব দখলদার উচ্ছেদের জন্য তালিকা করে জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছে পাউবো। নদী গবেষক মাহাবুব সিদ্দিকী বলেন, বিজিবি এবং সিটি করপোরেশন যেসব স্থাপনা করেছে তা শতভাগ নদীর মধ্যে। বিজিবি নদীতে স্থাপনা করে ব্যবসা করছে। ১৮৫৫ থেকে ১৯০০ সালের মধ্যে বুলনপুর থেকে তালাইমারী পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার শহর রক্ষাবাঁধ ব্রিটিশ প্রকৌশলীরা নির্মাণ করেন। এ বাঁধটি নদীর মধ্যে। নদীর বাঁধের দক্ষিণে সব জমি পদ্মা নদীর। রাজশাহীতে পদ্মার জমি দখলে চলছে এক ধরনের প্রতিযোগিতা। শহর রক্ষাবাঁধের দক্ষিণে নদীর বুক দখল করে বিনোদন কেন্দ্র ও স্থায়ী পাকা স্থাপনা তৈরির প্রতিযোগিতা চালু হয়েছে। নগরীর পদ্মার তীরবর্তী লালন শাহ মুক্তমঞ্চের পূর্ব ও পশ্চিমে নদীর ভিতরে নির্মাণ করা হয়েছে একাধিক পাকা ভবন। সিটি করপোরেশন নির্মাণ করেছে ভবনটি।

এর ঠিক পশ্চিমে বিজিবি নদীর বিশাল এলাকা দখল করে তৈরি করে রেখেছে সীমান্তে অবকাশ ও সীমান্তে নোঙর নামে দুটি রেস্তোরাঁ, সম্মেলন কেন্দ্র, ফাস্টফুড ও কফিশপ। নদীর ভিতরে বাতায়ন নামে করেছে আরও একটি দ্বিতল ভবন। এর পাশেই নিজেদের জমি উল্লেখ করে দখল নিয়েছে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ। এই দখল নিয়ে ২০১৬-১৭ সালে কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিজিবি সদস্যদের উত্তেজনা দেখা দেয়। এ ছাড়া স্থানীয় কাউন্সিলরের অনুমতিতে চরে বসেছে অসংখ্য দোকানপাট। নদীর চরে বানানো হয়েছে ইট-সিমেন্টের দোকান। প্রভাবশালীরা নিজ প্রভাবেও দখলে রেখেছেন নদীর অনেক জমি।

নগরীর বড়কুঠি, শহীদ মিনার, তালাইমারী ফুলতলা ঘাটেও এ ধরনের স্থাপনা করেছে সিটি করপোরেশন। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম তুষার বলেন, রাজশাহীতে তেমন কোনো বিনোদন কেন্দ্র নেই। বিনোদন কেন্দ্র বলতে শুধু পদ্মা নদী। মানুষের বসার জন্য কিছু ব্যবস্থা করা হয়েছে।

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল রহমান বলেন, রাজশাহীর বেড়পাড়া থেকে তালাইমারী পর্যন্ত ৬০০ দখলদারের তালিকা করেছি। এদের উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসককে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ‘নদী দখল করে যারা স্থাপনা করেছে, তা উচ্ছেদের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠান বা বাহিনীর কেউ যদি নদীতে স্থাপনা করে থাকেন, তবে তা নিজ দায়িত্বে সরিয়ে নেবেন। নদীতে স্থাপনা তৈরির জন্য আমরা কাউকেই অনুমতি দিইনি।’

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর