শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ছোট দল চায় বড় চমক

চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী ২৪ দলের প্রার্থী

আজহার মাহমুদ, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের সংসদীয় আসনগুলোয় ‘ছোট’ দলের ‘বড়’ প্রার্থীরা চমক দেখাতে চাইছেন। কয়েকটি দলের গুরুত্বপূর্ণ পদধারী নেতারা এখানে প্রার্থী হয়েছেন। কারও কারও স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রিয়তাও আছে। এর সঙ্গে জোটের আসন ভাগাভাগির ফলে কারও কারও ভাগ্য সুপ্রসন্ন হতে পারে। সব মিলিয়ে ছোট দলের আধা ডজনের বেশি নেতা সংসদ নির্বাচনে জয়ী হতে সচেষ্ট।

জানা গেছে, চট্টগ্রামের ১৬ আসনে ২৪টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী থাকছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ছাড়া বাকি সব দলকেই এ অঞ্চলে ‘ছোট দল’ বিবেচনা করা হয়। তবে কিছু আসনে জাতীয় পার্টিকে গণ্য করা হয় মাঝারি দল। ছোট দলের মধ্যে কোনো কোনো দল সব আসনে, কোনো দল দু-একটি বাদে বাকি সব আসনে প্রার্থী দিয়েছে। কিছু দল দু-তিনটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে।

চট্টগ্রাম-১ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বী আরও ছয় দলের প্রার্থী। এর মধ্যে বাংলাদেশ সাম্যবাদী দলের প্রার্থী (এমএল) দিলীপ বড়ুয়া। ১৪ দলের শরিক হিসেবে জোটপ্রধানের সঙ্গে নানা দেনদরবার করে আসনটিতে লড়তে চাইছেন তিনি। জোটের সমর্থন না পেলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকবেন এই প্রার্থী।

জানতে চাইলে দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েই মনোনয়নপত্র নিয়েছি। সুষ্ঠু ভোট হলে আমরা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।’

চট্টগ্রাম-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী সাত দলের প্রার্থীরা। এর মধ্যে তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভান্ডারী, বাংলাদেশ ইসলামি ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এম এ মতিন এ আসনে প্রার্থী হয়েছেন।

এঁদের মধ্যে বশর ও সাইফুদ্দিন সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা। দুজনই মাইজভান্ডারী দর্শনের নেতা। ফটিকছড়িসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এ দুজনের ভক্ত-অনুসারী রয়েছে। এ কারণে চাচা-ভাতিজা একই আসন থেকে প্রার্থী হওয়া নিয়ে আলোচনা আছে।

জানতে চাইলে নজিবুল বশর বলেন, ‘ফটিকছড়ির উন্নয়নে সব সময় নিজের সর্বোচ্চটা করার চেষ্টা করেছি। এখানকার উন্নয়ন কাজগুলো দৃশ্যমান। আমি জোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছি। এ বিষয়ে আলোচনা হয়ে গেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে প্রধানমন্ত্রী নিজেই ঘোষণা দেবেন।’

অন্যদিকে সাইফুদ্দিনের দল সুপ্রিম পার্টি চলতি বছর নিবন্ধন পায়। তিনি দলীয় প্রতীক নিয়ে লড়বেন। ২৪ নভেম্বর অন্যান্য ইসলামী দলের নেতাদের সঙ্গে তিনিও আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি বলেন, ‘ফটিকছড়ির উন্নয়নের স্বার্থে সবার চাওয়া থেকে নির্বাচন করছি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সুষ্ঠু ভোট হবে। ভোট সুষ্ঠু হলে কেউ জয় ঠেকাতে পারবে না।’

চট্টগ্রাম-৫ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দলের সিনিয়র নেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এ আসনে আওয়ামী লীগ নেতা আবদুস সালাম দলের মনোনয়ন পেলেও শেষ পর্যন্ত জোটের হিসাবনিকাশে আসনটি আনিসকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে বলে গুঞ্জন আছে। এমনটা হলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদেরও আনিসকে জয়ী করতে ভূমিকা রাখতে হতে পারে। চট্টগ্রাম-৮ আসনে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আরও আট দলের প্রার্থীরা। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম মেম্বার সোলায়মান আলম শেঠ ছাড়াও তৃণমূল বিএনপি, কল্যাণ পার্টিসহ অন্য দলের প্রার্থী আছেন। তবে অন্য প্রার্থীদের তুলনায় জাতীয় পার্টির শেঠের তুলনামূলক পরিচিতি আছে। চট্টগ্রামের সব আসনে প্রার্থী দিয়েছে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ। এর মধ্যে দলের মহাসচিব আবুল বাশার মুহাম্মদ জয়নুল আবেদিন চট্টগ্রাম-১১ আসনে প্রার্থী। এ আসনে আওয়ামী লীগ ছাড়াও পাঁচ দলের প্রার্থী রয়েছেন। চট্টগ্রামের স্থানীয় ‘সুন্নি’ ঘরানার ভোটারের মাঝে জয়নুলের জনপ্রিয়তা আছে।

জয়নুল আবেদিন বলেন, ‘এখানকার মানুষ ধর্মপ্রিয়। এ কারণে ভোটাররা ভোট দেওয়ার সময় বিষয়গুলো বিবেচনা করেন। সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে ভোট হলে আমি জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।’ চট্টগ্রাম-৯ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বী ছয় দলের প্রার্থীরা। এর মধ্যে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) প্রার্থী মিটুল দাশগুপ্ত। চট্টগ্রামের ১৪-দলীয় নেতা হিসেবে তাঁর পরিচিতি আছে। জানতে চাইলে এই নেতা বলেন, ‘আমি সব সময় রাজনৈতিক বিষয়ে সক্রিয়। অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোট হলে জয়ের আশা করছি।’ জানা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ১৬ আসনে প্রার্থী দিয়েছে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ১৫ আসনে জাতীয় পার্টি। বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ১০, সুপ্রিম পার্টি ৭, তরিকত ফেডারেশন ৩ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। এ ছাড়া তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল), বিকল্পধারা, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), জাকের পার্টি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), গণফোরাম, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট (আইওজে), ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থীরা বিভিন্ন আসনে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

এসব প্রার্থীর মধ্যে কয়েকজনের বিভিন্ন কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। তবে আপিলের পর যদি প্রার্থিতা ফিরে পান তাহলে তাঁরা পুরোদমে নির্বাচনি মাঠে নামবেন।

 

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর