সোমবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

পানির স্তর কমছে কাপ্তাই লেকে!

চিন্তায় ওয়াসা, কর্ণফুলী ও হালদায় বাড়ছে লবণাক্ততা

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

পানির স্তর কমছে কাপ্তাই লেকে!

কাপ্তাই লেকে গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে পানির লেভেল ছিল ১০৬ মিটার। কিন্তু চলতি বছর এই লেভেল নেমে আসে ৯৬ মিটারে। আগামী শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর আরও নামার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কাপ্তাই লেকে পানির স্তর কমলে কর্ণফুলী ও হালদা নদীর পানিতে বেড়ে যায় লবণাক্ততা। এ দুই নদীর পানিতে লবণাক্ততা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওয়াসার পানিতেও বেড়ে যায় লবণাক্ততা। এমন অবস্থায় চিন্তায় পড়েছে ওয়াসা। কারণ কাপ্তাই লেকে পানি কম থাকলে আগামী শুষ্ক মৌসুমেও নদীর পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধির শঙ্কা আছে। জানা যায়, চট্টগ্রাম ওয়াসা মোহরা পানি শোধনাগার ও শেখ রাসেল পানি শোধনাগার থেকে দৈনিক ১৮০ মিলিয়ন লিটার পানি পরিশোধনপূর্বক নগরে সরবরাহ করে। এ পানির মূল উৎস কর্ণফুলী ও হালদা নদী। কিন্তু এ দুই নদীর পানির লবণাক্ততার পরিমাণ নির্ভর করে কাপ্তাই ড্যাম হতে পানি ছাড়ার ওপর। কর্ণফুলী নদীর পানি প্রবাহ কাপ্তাই ড্যাম হতে পানি নির্গমন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই ড্যাম হতে কর্ণফুলী নদীতে গড়ে পানি নির্গমন কম হলে কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে জোয়ারের সময় লবণাক্ততা বৃদ্ধি পায়। এমন অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশনায় বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে- প্রতি বছর নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি টারবাইন (ঘূর্ণায়মান যন্ত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন) চালু রাখার। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার পরও কাপ্তাই লেকে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে এটি চট্টগ্রাম ওয়াসার চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাছাড়া, কাপ্তাই পানির সংকট হলে কেবল ওয়াসার সমস্যা নয়, রাঙামাটি জেলার বাসিন্দাদেরও খাবার-সুপেয় পানি, কৃষি ও যাতায়াতসহ নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, দুই মন্ত্রণালয় মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত দুটি টারবাইন চালু রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নও হচ্ছে। তার পরও কাপ্তাই লেকের পানির লেভেল নেমে যাচ্ছে। এর কারণ উদঘাটনে কাপ্তাই কর্তৃপক্ষ ও রাঙামাটি জেলা প্রশাসন কাজ করছে। কারণ উদঘাটন করা হলে এ ব্যাপারে তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, গত বছরের শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর বেশি মাত্রায় নেমে যাওয়ায় কর্ণফুলী ও হালদার পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পায়। আগামী মৌসুমেও এমন হলে আবারও গতবারের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আমরা বিষয়টি নিয়ে এখন থেকেই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিচ্ছি।  ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের এপ্রিল মে মাসে ওয়াসার পানিতে স্বাভাবিক সময়ে লবণাক্ততার পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি পেয়েছিল। স্বাভাবিক মাত্রায় লবণাক্ততার হার প্রতি লিটারে ১০০ থেকে ৩০০ লিটার। কিন্তু গত মে জুন মাসে এর পরিমাণ প্রতি লিটারে ১৭০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত হয়। এ নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। পরে ওয়াসা রেসনিং পদ্ধতিতে পানি সরবরাহ করে পরিস্থিতি সামাল দেয়। বর্তমানে ওয়াসার আবাসিক সংযোগ ৭৮ হাজার ৫৪২টি ও বাণিজ্যিক সংযোগ ৭ হাজার ৭৬৭টি। ৭৭০ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে ওয়াসা পানি সরবরাহ করে। তবে অধিকাংশ লাইনই পুরনো।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর