বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

গাজীপুর সিটিতে অসহনীয় যানজট

লেভেল ক্রসিংয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণের দাবি

খায়রুল ইসলাম, গাজীপুর

গাজীপুর সিটিতে অসহনীয় যানজট

গাজীপুর সিটিতে প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে যানজট। নগরীতে বাইপাস সড়ক না থাকায় রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, টমটমসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলায় যানজট অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত পর্যন্ত একমাত্র প্রবেশপথ শিববাড়ী-রাজবাড়ী সড়কটিতে যানজটের কারণে হেঁটে চলাও কঠিন। ফুটপাত থাকলেও বিভিন্ন স্থান ভেঙে যাওয়ায় এবং রাস্তাকেন্দ্রিক ব্যবসার কারণে হেঁটে চলাও দুষ্কর হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া অনেক স্থানে ফুটপাতের ওপরই হোটেলের গ্যাসের চুলা বসিয়ে রান্নাবান্না ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা অবাধে ব্যবসা করছে। সম্প্রতি সড়কের পাশে রিকশা-ভ্যানে করে শাকসবজি, শীতের কাপড়সহ নানা পণ্য বিক্রির পসরা যানজটকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। যানজট নিরসনে বিভিন্ন পয়েন্টে স্বল্পসংখ্যক ট্রাফিক পুলিশ নিয়োজিত থাকলেও তেমন কাজে আসছে না। সব মিলিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। তবে জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, নগরের যানজট নিরসনে লেভেল ক্রসিংয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। খুব শিগগিরই সংকট সমাধানের চেষ্টা চলছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রাজধানীর প্রবেশপথ, শিল্পায়ন আর নগরায়ণের ফলে গাজীপুরে লোকসংখ্যা বেড়ে গেছে। নগরীর প্রাণ কেন্দ্রে জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, বিভিন্ন সরকারি অফিস, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ, সিটি করপোরেশন, আদালত, সরকারি মহিলা কলেজ, দুটি সরকারি স্কুলসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে রাজবাড়ী সড়কই একমাত্র পথ। এ ছাড়া জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশনসংলগ্ন এ সড়কেই রয়েছে রেলক্রসিং; যা মাড়িয়ে অন্তত ৬৬ জোড়া যাত্রীবাহী ট্রেন আসা-যাওয়া করে। এর বাইরে মালবাহী ট্রেনের দুর্ভোগ তো আছেই। আর একবার ওই ক্রসিং দিয়ে একটি ট্রেন আসা মানেই কম করে হলেও ২০ মিনিটের জন্য অপেক্ষা। ভোগান্তি আরও তীব্র হয় সকালে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও অফিসের লোকজন যাওয়ার সময়। তার ওপর রেলগেটের দুই পাশে সড়কে রিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা এবং অন্যান্য যানবাহনের কারণে দীর্ঘ সময়ও যানজটের সুরাহা হয় না। এটি এখন শুধু নগরবাসীর দুর্ভোগ নয়, পরিণত হয়েছে মূল্যবান সময় নষ্টের ভয়াবহ ফাঁদে। গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর এম এ বারী বলেন, ‘দীর্ঘ ৩৭ বছরেও রেলক্রসিংয়ের ওপর কোনো ফ্লাইওভার নির্মাণ হয়নি। এখানে সব সময় তীব্র যানজট লেগে থাকে। মানুষ বলে, চীনের দুঃখ হুয়াংহো নদী আর গাজীপুরের যন্ত্রণা জয়দেবপুরের রেলক্রসিং। আমরা আশা করব, সরকার এখানে একটি ওভার পাস বা ফ্লাইওভার নির্মাণ করে জনদুর্ভোগ লাঘব করবে।’ জয়দেবপুর রেলস্টেশনের স্টেশনমাস্টার মো. হানিফ আলী বলেন, ‘প্রতিদিন বিভিন্ন লাইনে আন্তনগর, কমিউটারসহ যাত্রীবাহী অন্তত ৬৬টি ট্রেন চলাচল করে। রেলগেটের ৪৪০ গজ দূরে থাকতে চালককে সিগন্যাল দেখাতে হবে। লেভেল ক্রসিং বন্ধ এবং খুলতে কমপক্ষে ১০ মিনিট প্রয়োজন হয়। ফলে সড়কে যানজট লেগে যায়। কেবল বিকল্প ফ্লাইওভার নির্মাণই এ রেলক্রসিংয়ের যানজট লাঘব করতে পারে।’ গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘রাজবাড়ী সড়কে প্রতিনিয়ত জনবল নিয়োগ রেখেছি। ওই সড়কে শৃঙ্খলার জন্য তারা কাজ করছে। রাস্তাটি রেলক্রসিং এলাকায় সংকীর্ণ এবং প্রতিদিন ৬৬ বার রেলগেট পড়ে। এর কারণে গাড়িগুলো যথানিয়মে দ্রুত সরতে পারে না। একটা লম্বা সময় রেলগেট বন্ধ থাকায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।’

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আকবর হোসেন বলেন, ‘জাইকার অর্থায়নে শিববাড়ী থেকে রথখোলা পর্যন্ত ৮০০ মিটার দীর্ঘ (অ্যাপ্রোচ রোডসহ) চার লেনের রেলক্রসিংয়ের ওপর একটি ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ ডিজাইন পর্যায়ে রয়েছে। জাইকার নিয়োগ করা কনসালট্যান্ট এসব নিয়ে কাজ করছেন।’ গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সংকট নিরসনে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জাইকার অর্থায়নে এ সড়কে একটি ফ্লাইওভার নির্মাণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এটি হলে শিববাড়ী-রাজবাড়ী রোডে কোনো যানজট থাকবে না।

শহরের ফুটপাতে অবৈধ পার্কিং বন্ধে জিএমপি ট্রাফিক বিভাগ কাজ করছে এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যেই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। শহর ফুটপাতমুক্ত রাখার জন্য রাজবাড়ী সড়ক ও রেলগেট এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালানো হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর