রবিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখার অঙ্গীকারে বিজয় দিবস উদযাপন

প্রতিদিন ডেস্ক

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার নিয়ে দেশের বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে গতকাল বিজয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে বিজয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। বিভিন্ন ভবন আলোকসজ্জা করা হয়। নিজস্ব প্রতিবেদক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

চট্টগ্রাম : প্রথম প্রহরে চট্টগ্রামের মিউনিসিপ্যাল স্কুল চত্বরে অস্থায়ী শহীদ মিনারে সশস্ত্র অভিবাদন প্রদানের মধ্য দিয়ে বিজয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সেখানে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীসহ অন্যরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর শহীদ মিনারে ফুল দিতে আসেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। শিশু থেকে শুরু করে তরুণ-তরুণী, বয়স্করাও ফুল হাতে শহীদ মিনারে বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে যান। এ সময় শিশুদের হাতে জাতীয় পতাকা শোভা পায়। কারও কারও হাতে বিজয় দিবসের প্লাকার্ড, ফেস্টুন দেখা যায়। সকাল ৮টায় নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ আয়োজন করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। বাংলাদেশ পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, বিএনসিসি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, কারারক্ষী, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, স্কাউটস, রোভার স্কাউটস, গার্লস গাইড এবং বিভিন্ন শিশু-কিশোর সংগঠন কুচকাওয়াজের পর শারীরিক কসরত প্রদর্শন করেন। অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এম শফিউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। থিয়েটার ইনস্টিটিউটে মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আলোচনা সভায় নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন। নগরীর লালদীঘি মাঠে ছয় দফা মঞ্চে চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের উদ্যোগে পতাকা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। সংগঠনের জেলা সভাপতি নুরুল আলম মন্টুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও নগর নেতারা বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়াও দিনভর বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বিজয় দিবস উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করে।

বরিশাল : শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি, সিটি মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত, বিভাগীয় কমিশনার মো. শওকত আলী, ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দফতর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ের সামনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ সময় একটি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রত্যাশা করেন তারা। এদিকে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে কুচকাওয়াজ ও শরীরচর্চা প্রদর্শনীতে সালাম ও অভিবাদন গ্রহণ করেন বিভাগীয় কমিশনার মো. শওকত আলী। পরে মনোজ্ঞ শরীরচর্চা প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধকালীন ডিসপ্লে প্রদর্শন করে।

সিলেট : সকাল ৬টায় শহীদ মিনার বাস্তবায়ন কমিটির পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুরু হয় মহান বিজয় দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদন। এরপর একে একে প্রশাসনের বিভিন্ন দফতর, রাজনৈতিক, পেশাজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করা হয়। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনে নেতৃত্ব দেন সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, মহানগরের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী ও মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে নিজ নিজ ইউনিটের নেতা-কর্মীরা শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নেতৃত্বে সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও কর্মকর্তারা শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। জেলা স্টেডিয়ামে নানা কর্মসূচিতে অনুষ্ঠিত হয় বিজয় দিবসের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান।

রংপুর : সূর্যোদয়ের পর পরই নগরীর মডার্ন মোড়ে অর্জন স্মৃতিস্তম্ভে বিভাগীয় কমিশনার হাবিবুর রহমান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসানসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার, প্রেস ক্লাব, রিপোর্টার্স ক্লাব, জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন, জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন, জাতীয় পার্টি ও অঙ্গ সংগঠন, জেলা দোকান মালিক সমিতি, মোটর মালিক সমিতি, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। এরপর শেখ রাসেল স্টেডিয়ামে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। শিল্পকলা একাডেমিতে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পৃথকভাবে বিজয় দিবসের কর্মসূচি পালন করে। সকালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. হাসিবুর রশীদ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

খুলনা : গল্লামারী শহিদ স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মহানগর ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান, কেসিসির মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, বিভাগীয় কমিশনার মো. হেলাল মাহমুদ শরীফ, পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক, রেঞ্জ ডিআইজি মঈনুল হক, জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন, সরকারি-বেসরকারি দফতর, খুলনা বেতার, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, খুলনা প্রেস ক্লাব, সাংবাদিক ইউনিয়ন, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

সকাল সাড়ে ৮টায় খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো. হেলাল মাহমুদ শরীফ। পরে সেখানে বীর মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, বিএনসিসি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, স্কুল-কলেজ, মাদরাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিশু-কিশোর সংগঠন, কারারক্ষী, বাংলাদেশ স্কাউট, রোভার স্কাউট ও গার্লস গাইডের অংশগ্রহণে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। বিভাগীয় কমিশনার প্রধান অতিথি হিসেবে কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ করেন। পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক, রেঞ্জ ডিআইজি মঈনুল হক, খুলনার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন এবং পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

দুপুরে খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটরিয়ামে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা এবং ‘জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার এবং বিজয় দিবসের তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার মো. হেলাল মাহমুদ শরীফ।

ময়মনসিংহ : শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য মনিরা সুলতানা মনি, সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু, বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া, রেঞ্জ ডিআইজি শাহ আবিদ হোসেন, জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মাছুম আহমেদ ভূঞা, মুক্তিযোদ্ধা, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সংগঠন, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সকাল ৮টায় নগরীর রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া। এ সময় রেঞ্জ ডিআইজি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তা, জেলা আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। দিবসটি উপলক্ষে নগরীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মনোমুগ্ধকর শারীরিক কসরত প্রদর্শন করেন। এ ছাড়াও দিনের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে ছিল আলোচনা সভা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধের সংবর্ধনা। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শনী, মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ডকুমেন্টারি বিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ।

জাবি : জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম। এ সময় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ড. শেখ মো. মনজুরুল হক, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ড. মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ, রেজিস্ট্রার, কোষাধ্যক্ষ, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, আবাসিক হলের প্রভোস্ট, প্রক্টর, শিক্ষক সমিতি, মহিলা ক্লাব, অফিসার সমিতি, কর্মচারী সমিতি ও কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

রাবি : বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ওবায়দুর রহমান প্রামাণিক, প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সাউদসহ বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিউটের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর