বুধবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

যুবলীগ নেতা খায়রুল হত্যা মামলায় ১৩ জামায়াত-শিবিরকর্মীর যাবজ্জীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

নাটোরের লালপুরে চাঞ্চল্যকর যুবলীগ নেতা খায়রুল ইসলাম হত্যা মামলার রায়ে জামায়াত-শিবিরের ১৩ নেতা-কর্মীকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড। একই মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ৫১ জনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। তিনজন মারা যাওয়ায় মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। গতকাল দুপুর পৌনে ১টার দিকে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহা. মহিদুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন।

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন নাটোর উপজেলার পুকুরপাড়া চিলান গ্রামের মো. করিম, মতি সরদার, মকলেছ সরদার, মহসিন সরদার, মো. খলিল, মো. রানা, মো. আনিসুর, মো. রাজ্জাক, মো. জার্জিস ও মো. সানা এবং কদিমচিলান গ্রামের মো. কালাম, মিজানুর রহমান ও আবুল কালাম আজাদ প্রিন্স। তারা সবাই জামায়াত-শিবির কর্মী। মামলার আগের নির্ধারিত দিনগুলোয় তারা আদালতে হাজির থাকলেও গতকাল রায় ঘোষণার দিন দন্ড পাওয়া ১৩ জন উপস্থিত ছিলেন না। তাই তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু করতে নির্দেশ দেন আদালত।

রায় ঘোষণার পর বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সরকার আসলাম জানান, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদন্ডের রায় ঘিরে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে তান্ডব চালান দলটির নেতা-কর্মীরা। ওই দিন নাটোরের লালপুরে বাড়িতে হামলা করে যুবলীগ নেতা খাইরুল ইসলামকে (৩৭) হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় করা মামলাটি একপর্যায়ে উচ্চ আদালতে আটকে ছিল। অবশেষে ঘটনার ১০ বছর পর আজ (মঙ্গলবার) রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল রায় দিলেন।

আইনজীবী আসলাম সরকার বলেন, আদালতে রায় ঘোষণার সময় খায়রুলের স্ত্রী লিপি খাতুন ও তার দুই সন্তান উপস্থিত ছিলেন। মামলার ৬৭ আসামির মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। নিহত খায়রুল লালপুর উপজেলার কদিমচিলান ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পেশায় নিরাপত্তাপ্রহরী খায়রুল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। খায়রুল ইসলামের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় ওই এলাকার কয়েকটি বাড়ি ও পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও অস্ত্র লুট করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের ভাই শাহীনুর রহমান বাদী হয়ে মামলা করেন। ঘটনার সময় তার ছেলে জুবায়ের সপ্তম ও মেয়ে খাদিজাতুল কুবরা চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। তার স্ত্রী লিপি খাতুন তিন মাসের সন্তানসম্ভবা ছিলেন।

রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট এন্তাজুল হক বাবু বলেন, এ মামলার মোট আসামি ছিলেন ৬৭ জন। এর মধ্যে তিনজন মারা যাওয়ায় তারা এমনিতেই খালাস। বাকি ছিলেন ৬৪ জন। এর মধ্যে ১৩ জনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। খালাস দেওয়া হয়েছে ৫১ জনকে।

এ রায় নিয়ে অসন্তোষের কথা জানান নিহতের স্ত্রী লিপি খাতুন। তিনি বলেন, ‘যে মামলার রায়ের জন্য এত কষ্ট, অপেক্ষা সে রায়ে যাবজ্জীবন হয়েছে। একজনেরও ফাঁসি হলো না। অনেককে খালাস দিয়েছেন কোর্ট। আমরা আপিল করব।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর