বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

রক্তে লাল বগুড়ার জনপদ

আট বছরে খুন ৬০৬ জন, বেড়েছে নৈতিক অবক্ষয়ও

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

খুনের রঙে লাল হয়ে উঠছে বগুড়ার জনপদ। তুচ্ছ ঘটনা থেকে শুরু করে পূর্ববিরোধ, শত্রুতা, আধিপত্য, রাজনৈতিক, মাদক ও বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজির টাকার ভাগবাঁটোয়ারা, জমিজমা, পারিবারিক দ্বন্দ্ব নিয়ে খুনের ঘটনা ঘটছেই। কারও কারও নৈতিক স্খলন এবং সামাজিক মূল্যবোধ কমে যাওয়ায় খুনের ঘটনা বাড়ছে। পুলিশের তথ্যমতে, আট বছরে ৬০৬ জন খুন হয়েছেন। জানা যায়, রাতে কিংবা দিনে কোনো না কোনো ঘটনায় বগুড়ার ১২টি উপজেলায় খুনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। বিগত দিনে এত খুনের ঘটনা না থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে এসে খুনের ঘটনা বাড়ছে। বগুড়া জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার এক হিসাব মতে, প্রতিহিংসা, আধিপত্য বিস্তার, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক দ্বন্দ্ব, মাদক ও বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজির টাকার ভাগবাঁটোয়ারা, জমিজমা নিয়ে এমনকি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেও খুনের ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে শহরে রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ও তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুনোখুনির ঘটনা ঘটছে। ২০১৬ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে জেলায় ৪৪৬ জন মানুষ খুন হন। এ ছাড়া ২০২২ সালে জেলায় খুন হন আরও ৮৯ জন। আর ২০২৩ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত খুন হয়েছেন ৭১ জন। সব মিলে আট বছরে জেলার ১২টি উপজেলায় খুনের শিকার হন ৬০৬ জন। বগুড়ার সচেতন মহল বলছে, বগুড়ায় আগের থেকে খুনের সংখ্যা বেড়েছে। মানুষের সঙ্গে মানুষের দ্বন্দ্ব বেড়েছে। মানবিকতা কাজ করছে না। নৈতিক শিক্ষাগুলো কাজে আসছে না। যে কারণে খুনের ঘটনাগুলো ঘটেই যাচ্ছে। পুলিশ বিষয়গুলো তদন্ত করছে ঠিকই কিন্তু মানুষ যদি নৈতিকতা থেকে দূরে যায় তাহলে স্খলন হবেই। আর স্খলন হলে সেখানে নানা অপরাধই ঘটে। সবাইকে সামাজিকভাবে দায়িত্ববোধ হতে হবে। বগুড়া পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি) সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী জানান, পুলিশ সদস্যরা সব ঘটনায় অতি দ্রুততার সঙ্গে তদন্ত করে ঘটনার দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসছে। পুলিশ সদস্যরা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। বগুড়ায় ঘটে যাওয়া অধিকাংশ খুনের ঘটনার তদন্ত প্রায় শেষ এবং আসামিও গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ইদানীং মানুষ তার সামাজিক মূল্যবোধ ভুলে যাচ্ছে। সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ কমে যাচ্ছে। অথচ এটি হওয়ার কথা ছিল না। আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ বাড়লে খুনের সংখ্যাও কমে যাবে। আলোচিত খুনের ঘটনার মধ্যে রয়েছে- চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল ঈদের ছুটিতে জেলা শহরের সাতমাথা এলাকায় প্রধান ডাকঘরে নৈশপ্রহরীর দায়িত্বে থাকা অফিস সহায়ক প্রশান্ত আচার্যকে খুন করে ভোল্ট কেটে প্রায় ৮ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। পরে এ ঘটনায় পুলিশ শফিকুল ইসলাম নামে একজনকে গ্রেফতার করে। সে প্রধান ডাকঘরে ডাকাতি ও প্রহরী প্রশান্ত আচার্যকে খুনের কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়। এর আগে ২১ এপ্রিল রাত সোয়া ১২টার দিকে বগুড়া সদর থানার সামনে ঈদ মার্কেটে আসা শত শত মানুষের সামনে অধ্যাপক রেজাউল করিম পান্নাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। ঘটনার পরপরই পালিয়ে যাওয়ার সময় জনতার সহযোগিতায় হত্যাকারী সম্রাটকে পুলিশ একটি চাকুসহ গ্রেফতার করে। গ্রেফতার সম্রাট জবানবন্দিতে উল্লেখ করে, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে অধ্যাপক পান্নাকে সে হত্যা করেছে। অধ্যাপক পান্না ও ঘাতক সম্রাটের বাড়ি শহরের ফুলবাড়ি মধ্যপাড়ায়। ৯ মে রাতে জেলা শহরের মালগ্রাম উত্তরপাড়া এলাকায় বেলতলা মসজিদের পেছনে সাদাফ ছাত্রাবাসের কাছে সন্ত্রাসীরা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নাহিদ হাসানকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ হত্যার ঘটনায় র‌্যাব ও পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। তাদের মধ্যে আবদুস সামাদ নামে এক আসামি হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দিতে সে উল্লেখ করে বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধের জেরে নাহিদকে হত্যা করা হয়। ১০ মে রাতে সদরের নামুজা এলাকায় রাজ্জাক (৫০) নামে এক গরু ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে খুন করে দুর্বৃত্তরা। ১৭ মে দুপুরে বগুড়া সদরের রাজাপুর ইউনিয়নের কুটুরবাড়ি এলাকায় জীবন নাহার নামে এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। জমি নিয়ে বিরোধের জেরে তাকে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। এ ঘটনায় একজন পুলিশ সদস্যসহ কয়েকজনের নামে মামলা হয়েছে।

 

 

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর