শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

পুরান ঢাকা ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা রাজউকের

হাসান ইমন

পুরান ঢাকা ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা রাজউকের

বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে গড়ে ওঠা পুরান ঢাকা ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। যদিও এ এলাকাটি অনেকটাই বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। সরু রাস্তা, যানজট, ঘনবসতি, জলাবদ্ধতা ও পানি নিষ্কাশন সমস্যা; খেলার মাঠ, পার্ক ও কমিউনিটি সুবিধা না থাকা; ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, অপরিকল্পিত অবকাঠামোসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত পুরান ঢাকা। নগর পুনরুন্নয়নের মাধ্যমে এসব সমস্যা সমাধান করে বাসযোগ্য শহরে পরিণত করার উদ্যোগ রাজউকের। ১৬১০ সালে রাজধানীর স্বীকৃতি পাওয়া ৪১৩ বছরের পুরনো এ শহরে মানব বসতির ইতিহাস হাজার বছরের। এর জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং এর উন্নয়ন ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিপ্রায়ে সংস্থাটি পুরান ঢাকাকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুরান ঢাকার সাতটি জায়গা চিহ্নিত করে সমীক্ষাকাজ শুরু হয়েছে। এলাকাগুলো হচ্ছে : মৌলভীবাজার, সোয়ারীঘাট, লালবাগ, ইসলামবাগ, কামরাঙ্গীর চর, বংশাল ও হাজারীবাগ। পাইলট প্রকল্পের স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে হাজারীবাগ ও লালবাগ। ছয় মাসের মধ্যে এ দুই এলাকায় নগর পুনরুন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হবে। ‘আদি ঢাকা’র পুরো অংশই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাভুক্ত। রাজউকের তথ্যমতে, ডিএসসিসির ২৪, ২৫, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৪১, ৪২, ৪৩, ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড পুরান ঢাকার অংশ। এসব এলাকার আয়তন প্রায় ৮ বর্গকিলোমিটার। পরবর্তী সময়ের নগরায়ণে পুরান ঢাকাসংলগ্ন ডিএসসিসির কিছু এলাকাও ঘিঞ্জি জনপদে পরিণত হয়েছে। এসব এলাকা নতুন করে গড়ে তুলবে রাজউক। কামরাঙ্গীর চর এসব এলাকার প্রথম পর্বের তালিকায় রয়েছে। তাদের সফলতার অভিজ্ঞতা পুরান ঢাকার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বিবেচনায় কাজে লাগানো হবে। সিঙ্গাপুর, চীন, জাপান, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া নগর পুনরুন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে সফল হয়েছে। রাজউকসূত্র জানান, প্রাথমিকভাবে হাজারীবাগের পুনরুন্নয়নের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। ওই এলাকার মাটি ট্যানারির কারণে ৮ থেকে ২০ ফুট গভীর পর্যন্ত দূষিত। দূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে পুনরুন্নয়ন করবে রাজউক। প্রকল্পের মাধ্যমে সরু সড়ক চওড়া করা, পর্যাপ্ত উন্মুক্ত স্থান তৈরি এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে নতুন ভবন তৈরি করা হবে। ছোট ছোট প্লট একত্র করে ব্লকভিত্তিক উন্নয়ন করা হবে। রাজউকের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ড্যাপ ব্লকভিত্তিক সুউচ্চ ভবন নির্মাণের সুযোগ দেবে। সর্বনিম্ন ১ বিঘা আয়তনের ব্লক গঠনের সুযোগ থাকবে। সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৬০ একরের ব্লক তৈরির পরিকল্পনা করেছে রাজউক। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ৩ বিঘা, ৫ বিঘা, ১০ বিঘা আয়তনের ব্লক তৈরির সুযোগ রয়েছে পুরান ঢাকায়। রাজউক ওই এলাকার ১০০ একর জমি অধিগ্রহণের চিন্তা করছে। গত ২৭ আগস্ট গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ‘ঢাকা আরবান রিজেনারেশন’ শীর্ষক প্রকল্পে হাজারীবাগকে পুনরুন্নয়ন করার বিষয়ে অনুশাসন জারি করেছে। ট্যানারি এলাকারও পুনরুন্নয়ন করতে বলা হয়েছে রাজউককে। এ বিষয়ে রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, পুরান ঢাকাকে ঢেলে সাজাতে কিছু পরিকল্পনা রয়েছে ড্যাপে। প্রথমত, পুরান ঢাকার জন্য আলাদা বিধিমালা করে রাস্তা, পার্কিং, অবকাঠামো নির্মাণসহ সামগ্রিক বিষয় থাকবে। দ্বিতীয়ত, পুরান ঢাকার ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে রি-ডেভেলপমেন্ট করা হবে। তৃতীয়ত, ট্রাফিক কাঠামো তৈরি করা। এর মধ্যে ওয়াকিং স্ট্রিট (সরু রাস্তাগুলো হাঁটার রাস্তা করা) ঘোষণা করা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর