শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

নির্বাচন সামনে রেখে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে ১৬৮ স্পট

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

দরজায় কড়া নাড়ছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন সামনে রেখে শুরু হয়েছে নাশকতা। দুর্বৃত্তদের প্রধান টার্গেট রেল। ইতোমধ্যে রেলে আগুনে মা ও শিশুসহ চারজন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল ঝুঁকিপূর্ণ ১৬৮টি স্পট চিহ্নিত করেছে। নির্বাচন সামনে রেখে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে এসব স্পট। এরই মধ্যে চিহ্নিত স্পটসহ পুরো রেললাইনে বিশেষ কড়া নজরদারি রাখা শুরু হয়েছে। নেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা। জানা যায়, সারা দেশে চলমান রেলপথ আছে ৩ হাজার ২০১ কিলোমিটার। নির্বাচন কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক রেলে ধারাবাহিক নাশকতার পরিপ্রেক্ষিতে রেলওয়ে দেশের ৩৭০টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে রেলের চট্টগ্রাম বিভাগে ঝুঁকিপূর্ণ স্পট আছে ১৬৮টি। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে দেওয়া হচ্ছে সার্বক্ষণিক পাহারা। দেশের রেলপথ পরিচালিত হয় চারটি বিভাগের অধীনে। রেলের নিরাপত্তায় দেশে ২৪টি রেলওয়ে থানা ও ৩২টি ফাঁড়ির মাধ্যমে কাজ করছে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি)। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) নাজমুল ইসলাম বলেন,  নির্বাচন সামনে রেখে কিছু নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। এজন্য আমরা রেল ও রেলের যাত্রীদের নিরাপত্তার প্রয়োজনে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি।  রেলওয়ের প্রতিটি বিভাগ এখন সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে কাজ করছে। রেলস্টেশন ও রেলের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবক্ষেত্রে নিরাপত্তা প্রদানে অতিরিক্ত আনসার ও নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করছে। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান পরিদর্শক আমান উল্লাহ আমান বলেন, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তায় ৪০০ জন অতিরিক্ত আনসার চাওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তা অনুমোদন হয়েছে। হয়তো আজ-কালের মধ্যে চলে আসবে। তাছাড়া মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। একই সঙ্গে প্রতিটি রেলের যাত্রীদের চেক করে রেলে তোলা, অ্যাডভান্স পাইলটিং করাসহ রেলের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নাশকতা ঠেকাতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে অতিরিক্ত নজরদারি, তল্লাশি। রাতের ট্রেনে গতি ৭০ থেকে ৮০ কিমি থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ৫০ কিমি। তাছাড়া আমরা সব সময় সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছি।

জানা যায়, ২৯ অক্টোবর থেকে বিএনপি-জামায়াত ও সমমনাদের আন্দোলনের মধ্যে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়। ট্রেনেও নাশকতার উদ্বেগ তৈরি হয়। রেলওয়ের হিসাব মতে, গত ২৮ অক্টোবর থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে রেলপথে ১৯টি অগ্নিসংযোগ, আটটি ককটেল বিস্ফোরণ ও রেলপথের ফিটিংস খুলে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১৭ ডিসেম্বর জয়পুরহাটে উত্তরা এক্সপ্রেসের একটি বগিতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ১৯ ডিসেম্বর ভোরে নেত্রকোনা থেকে ঢাকা আসার পথে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন দেওয়া হয় বিমানবন্দর স্টেশনের পরে। এতে প্রাণ হারান মা-শিশুসহ চারজন। এর আগে গাজীপুরে রেললাইন কেটে রাখায় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হলে একজনের মৃত্যু হয়। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানের রেললাইন কেটে ফেলা, নাটবল্টু ও ফিশপ্লেট খুলে ফেলা, ট্রেনে আগুন, ককটেল নিক্ষেপ, রেলপথে প্রতিবন্ধকতা তৈরিসহ বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ঘটছে। চট্টগ্রাম-দোহাজারী পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার রেলপথে অবৈধ ক্রসিং আছে ৪৭টি। এসব এলাকা দিয়ে ট্রেন চলাচলে আছে ঝুঁকি। তাছাড়া কক্সবাজার-চট্টগ্রাম-ঢাকা সরাসরি রেল যোগাযোগ শুরু হতে না হতেই রেল বিটের নাটবল্টু খুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। তাই এসব লাইনে সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর