সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
সংসদ নির্বাচন

রাজশাহীতে বাড়ছে নির্বাচনি সহিংসতা

নৌকার প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে নির্বাচনি প্রচারে প্রতিবন্ধকতার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহীতে বাড়ছে নির্বাচনি সহিংসতা

নির্বাচনি প্রচারণা শুরুর এক সপ্তাহ না যেতেই রাজশাহীর বিভিন্ন আসনে ছড়িয়ে পড়েছে সহিংসতা। স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলার পাশাপাশি নির্বাচনি কার্যালয় ভাঙচুরের কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। গত শনিবার রাত পর্যন্ত এক দিনে রাজশাহীর বাগমারা, দুর্গাপুর, বাঘা ও চারঘাটে ১২টি নির্বাচনি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন, নৌকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা নির্বাচনি প্রচারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন। আবার আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের অফিসেও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনি সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করেছে। দুর্গাপুরের একটি ঘটনায় নৌকার তিন কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। চারঘাটে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীকে হাতুড়িপেটা করায় একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের বিভিন্ন এলাকায় নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের কর্মী-সমর্থকদের হামলার ৬টি ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর বাগমারা নরদাশ বাজারে স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হকের কাঁচি প্রতীকের নির্বাচনি অফিসে হামলা করে নৌকার সমর্থকরা। ওইদিন রাত ১০টার দিকে উপজেলা সদর ভবানীগঞ্জ বাজারের গোডাউন মোড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুলের কাঁচি প্রতীকের নির্বাচনি অফিসে হামলার ঘটনা ঘটে। এর আগে বাগমারার মাড়িয়া ইউনিয়নের যাত্রাগাছি, গোবিন্দপুর ইউনিয়নের হাটদামনাশ বাজার, তাহেরপুর পৌরসভার অর্জুনপাড়া ও গণিপুর ইউনিয়নের আচিনঘাট এলাকায় কাঁচি প্রতীকের গাড়ি ও প্রচার মাইক ভাঙচুর, পোস্টার কেড়ে নিয়ে পুকুরে ফেলে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন এনামুল হক। তবে নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘নৌকা হারানোর পর থেকে এনামুল হক মিথ্যা কথা বলছেন। কোথাও তার সমর্থকদের ওপর হামলা করা হয়নি। বরং নৌকা প্রতীকে তিনবার এমপি হয়ে এখন নৌকার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন, দলীয় নেতা-কর্মীদের হুমকি দিচ্ছেন তারপক্ষে থাকতে।’ রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের দুর্গাপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থী ওবায়দুর রহমানের ঈগল প্রতীকের পোস্টার কেড়ে নিয়ে তিন কর্মীকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় রাতেই দুর্গাপুর থানায় মামলা হলে পুলিশ নৌকা প্রতীকের তিন কর্মী সাখাওয়াত হোসেন লায়ন (৩৪), জয় হোসেন (২৬) ও মাড়িয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক মোহা. রাসেলকে (২৫) গ্রেফতার করে। রাজশাহী-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ওবায়দুর রহমান অভিযোগ করেন, ‘দুর্গাপুর উপজেলার মাড়িয়া ইউপির সাইফুলের মোড়ে আমার কর্মী-সমর্থকরা ঈগল প্রতীকের পোস্টার টানাচ্ছিলেন। এ সময় নৌকার ৭-৮ জন সমর্থক পোস্টার কেড়ে নিয়ে ঈগল প্রতীকের কর্মী আবদুর রাজ্জাকসহ তিনজনকে পিটিয়ে জখম করে। রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনের শলুয়া ইউনিয়নের বামনদীঘি বাজারে স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হকের কাঁচি প্রতীকের নির্বাচনি অফিস ভাঙচুর ও একই সময়ে মালেকের মোড় এলাকায় কাঁচি প্রতীকের প্রচার গাড়ি ও মাইক ভাঙচুর করে নৌকার প্রার্থী শাহরিয়ার আলমের কর্মী-সমর্থকরা। স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হক বলেন, প্রচার শুরুর পর থেকেই নির্বাচনি এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে চলেছে।

গত বুধবার বাঘা উপজেলায় নৌকার নির্বাচনি অফিসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাহরিয়ার আলমের অভিযোগ, স্বতন্ত্র প্রার্থী রায়হানের লোকজন এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মানুষকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।

রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী চলচ্চিত্র অভিনেত্রী শারমিন আক্তার নিপা মাহিয়া মাহি অভিযোগ করেন, প্রতীক পেয়েই তিনি এলাকায় ভোট প্রচারে নেমেছেন। তিনি তানোরের কামারগাঁও এলাকায় ট্রাক প্রতীকের নির্বাচনি অফিসের জন্য রুবেলের ঘর ভাড়া নিয়েছিলেন। কিন্তু নৌকার প্রার্থীর লোকজন রুবেলকে ভয়ভীতি দেখিয়ে হুমকি দিয়েছেন যেন আমাকে ঘর ভাড়া না দেওয়া হয়। তানোর ও গোদাগাড়ীতে আমাকে নির্বাচনি অফিস করতে বাধা প্রদান করা হচ্ছে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানী বলেন, আমার কর্মী-সমর্থকদের বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমি নির্বাচনি শৃঙ্খলা কমিটিতে অভিযোগ করেছি।

আওয়ামী লীগ প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, তিনি এমন কোনো আচরণ করেননি, যাতে অন্য প্রার্থীরা প্রচারণায় গিয়ে বাধার মুখে পড়েন। বরং তিনি সহযোগিতা করছেন বলে দাবি করেন।

রাজশাহী জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, কিছু কিছু ঘটনায় ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটিও দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছেন। পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত উৎসবমুখর আছে।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর