শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঝুঁকিতে ঢাকার অনেক এলাকা

নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর, মাটির নিচে তৈরি হচ্ছে শূন্য গহ্বর

শামীম আহমেদ

অনিয়ন্ত্রিতভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনে ভয়াবহ ঝুঁকিতে রাজধানী ঢাকা। দ্রুত নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। মাটির নিচে তৈরি হচ্ছে শূন্য গহ্বর। প্রতি বছরই এ ফাঁকা স্থান বাড়ছে। এতে ভবিষ্যতে পানি সংকটের পাশাপাশি ভূমিধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেবে যেতে পারে রাজধানী ও আশপাশের অনেক এলাকা। বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণে ছাড়িয়ে যেতে পারে সব ধরনের হিসাবনিকাশ। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছর ২ মিটার বা প্রায় ৭ ফুট করে নেমে যাচ্ছে। শুধু ঢাকা ওয়াসাই প্রতিদিন প্রায় ৩৩ লাখ ঘনমিটার ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে, যা দিয়ে মিরপুর ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আকারের অন্তত ২০টি স্টেডিয়াম পূর্ণ করা সম্ভব। ওয়াসার প্রায় ১ হাজার পাম্প ছাড়াও ব্যক্তি উদ্যোগে স্থাপন করা অন্তত ২ হাজার গভীর নলকূপ ও আরও কয়েক হাজার অননুমোদিত গভীর নলকূপ দিয়ে প্রতিদিন ভূগর্ভস্থ পানি তোলা হচ্ছে। কিন্তু বর্ষাকালে পূরণ হচ্ছে না সেই শূন্যস্থান। ১৯৭০ সালে ঢাকা শহরে প্রায় ২০ ফুট মাটির নিচে পানি পাওয়া যেত। ২০২৩ সালে অধিকাংশ স্থানে ২৪০ ফুটের আগে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। কোথাও পানির জন্য ১ হাজার ২০০ ফুট পাইপ ভূগর্ভে পাঠাতে হচ্ছে। ঢাকার কেন্দ্রে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় একটি শূন্যস্থান চিহ্নিত করেছেন ভূবিজ্ঞানীরা, যার বিস্তার ঢাকার কেন্দ্র থেকে আশপাশের উপজেলা টঙ্গী, সাভার, ধামরাই, দোহার, নবাবগঞ্জসহ প্রায় ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। মাটির নিচের এ জলাধার পূরণ না হলে যে কোনো সময় রাজধানীতে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ভূবিজ্ঞানীরা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এইচ এম সেলিম রেজা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভূগর্ভে শূন্যস্থান তৈরি হলে ওপরের মাটির লেয়ার ধসে পড়তে পারে। শূন্যস্থান পূরণ করতে আশপাশের মাটি সরে যাবে। দেবে যেতে পারে অনেক এলাকা। ভবনে ফাটল দেখা দিতে পারে। ভেঙেও পড়তে পারে। মাটির ধরনভেদে সেটা কিছুটা আগে-পরে হতে পারে। তবে সব ধরনের মাটিতেই এ ঝুঁকি রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকায় যেহেতু বড় বড় স্থাপনা তৈরি হচ্ছে, মাটির ওপর চাপ বাড়ছে। নিচে ফাঁপা থাকলে মাটি এ ভার বহন করতে পারবে না। ভূমিকম্প হলে বিপর্যয়টা আরও ভয়াবহ হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ঢাকা শহরের মাটির নিচে ৩০০-৪০০ মিটার বালুর স্তর আছে। ওপরে কাদামাটির স্তর। কাদামাটির স্তর ভেদ করে খুব কম পানি নিচে যেতে পারে। এ ছাড়া বড় অংশে পাকা স্থাপনা থাকায় সেখান দিয়েও পানি নিচে যায় না। নদী-খাল-বিল দিয়ে কিছুটা পানি নিচে যায়, তবে উত্তোলনের তুলনায় তা নগণ্য। তাই পানির স্তর দ্রুত নামছে। এর ফলে ভবিষ্যতে পানি সংকট দেখা দেবে। নতুন পলিমাটির কারণে ঢাকার পূর্ব-পশ্চিম ও দক্ষিণাংশে উঁচু উঁচু ভবন উঠলে মাটি দেবে যেতে পারে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর