শনিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

নির্বাচনি নিরাপত্তায় মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচনি নিরাপত্তায় মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় গতকাল সকালে রাজধানীসহ সারা দেশে ১ হাজার ১৫১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবি সদস্যরা মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করছেন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গতকাল পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার, কোস্ট গার্ডসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম জানান, গতকাল ঢাকাসহ সারা দেশে ১ হাজার ১৫১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকাসহ সারা দেশের নির্বাচনি এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে বিজিবি মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। বিজিবি চট্টগ্রাম-৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহেদ মিনহাজ ছিদ্দিকী বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় চট্টগ্রামে ৭৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। আজ (শুক্রবার) সকাল থেকে চট্টগ্রামের ১৫ আসনের বিভিন্ন জায়গায় টহল শুরু হয়েছে। জানা গেছে, গতকাল মুন্সীগঞ্জের তিনটি আসনের ছয় উপজেলায় ৯ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। তারা ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত থাকবেন। ভোট গ্রহণ শেষে পরবর্তী ঘোষণা না আসা পর্যন্ত বিজিবি মাঠে থাকবে। গাজীপুরে দায়িত্বে থাকা বিজিবি-৬৩ ব্যাটালিয়নের সিইও লে. কর্নেল মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, গতকাল থেকে গাজীপুরের পাঁচটি সংসদীয় আসনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ১১ প্লাটুন বিজিবি মাঠে নেমেছে। এ ছাড়া আরও দুই প্লাটুন বিজিবি রিজার্ভে রাখা হয়েছে। প্রয়োজন হলে তাদেরও নামানো হবে। এদিকে ১২ প্লাটুন বিজিবি সদস্য নরসিংদী জেলায় কাজ শুরু করেছে। চট্টগ্রামের তিনটি জেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সিভিল প্রশাসনকে সহযোগিতায় গতকাল থেকে ১২৯ প্লাটুন বিজিবি আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে নেমেছে। অন্যদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে গতকাল সারা দেশে ২০০ প্লাটুন এপিবিএন ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে।

 গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়- অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং সার্বিক আইন শ"ড়খলা রার্থে মেট্রোপলিটন এলাকা/জেলাসমূহকে সহায়তা করার লে মোতায়েন করা এপিবিএন ফোর্স আগামী ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থেকে দায়িত্ব পালন করবে।

বান্দরবান পার্বত্য জেলার সাতটি উপজেলায় ৫০ প্লাটুন, রাঙামাটির ১০টি উপজেলায় ৪৫ প্লাটুন, খাগড়াছড়ির আটটি উপজেলায় ৩৪ প্লাটুন, চট্টগ্রামে ৯৬ প্লাটুন এবং কক্সবাজারে ৬২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড সদর দফতরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার খন্দকার মুনিফ তকি জানান, নির্বাচনকালীন শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় উপকূলীয় এলাকায় কোস্ট গার্ড সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় ও বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার নিমিত্তে উপকূলীয় ৪৩টি ইউনিয়নে কোস্ট গার্ড মোতায়ন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী কোস্ট গার্ড নির্বাচন-পূর্ববর্তী, নির্বাচনকালীন এবং নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে সার্বিক শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।

নির্বাচনের সার্বিক নিরাপত্তায় অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সারা দেশে র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল র‌্যাবের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী র‌্যাব ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে র‌্যাব যেসব দায়িত্ব পালন করবে সেগুলো হচ্ছে- নির্বাচনি এলাকায় সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা প্রদান করবে। এ ছাড়া ভোট কেন্দ্র ও ভোট গণনার ক্ষেত্রে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে দায়িত্ব পালন করবে, নির্বাচনি দায়িত্ব পালনের জন্য প্রতিটি আসনে কমপক্ষে দুটি টহল দল মোতায়েন ও প্রতিটি ব্যাটালিয়নে দুটি টহল স্ট্রাইকিং ফোর্স রিজার্ভ থাকবে, র‌্যাব সদর দফতরের ১৫টি টহল দল সেন্ট্রাল রিজার্ভ হিসেবে প্রস্তুত থাকবে এবং দেশব্যাপী ২৫টি অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হবে।

এ ছাড়া অন্যান্য অঞ্চলে মোতায়েনের জন্য ৫০টি টহল দল প্রস্তুতসহ দেশব্যাপী ৭০০টির অধিক টহল দল আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবে, গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হবে এবং নিজস্ব সুইপিং ও বোম্ব ডিসপোজাল টিম প্রস্তুত থাকবে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে হেলিকপ্টার ও ডগ স্কোয়াড নিয়োগ করা হবে।

অগ্রগণ্যতার ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ বা গুরুত্বপূর্ণ আসন বিবেচনায় মোতায়েনের জন্য বিভিন্ন ব্যাটালিয়ন থেকে টহলগুলো গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ আসন বিবেচনায় মোতায়েনের জন্য সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে, বিশেষ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য র‌্যাব সদর দফতরের স্পেশাল ফোর্স সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে, র‌্যাব ফোর্সেস সদর দফতরের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট সাতটি জোনে বিভক্ত হয়ে মোতায়েনের জন্য সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে, র‌্যাব ডগ স্কোয়াডের ১০টি দল র‌্যাব ফোর্সেস সদর দফতরে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে। এ ছাড়া দেশব্যাপী বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশির মাধ্যমে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে, নির্বাচন কমিশনের তথ্য ও গোয়েন্দা সূত্রে ঝুঁকিপূর্ণ আসনসমূহে অধিক টহল নিয়োজিত রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপপরিচালক (মিডিয়া) মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনকালীন শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে গতকাল থেকে আনসার বাহিনীর ৮ হাজার ৫০০ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত তারা দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়া নির্বাচনের দুই দিন আগে ৫ লাখ ১৬ হাজার আনসার সদস্য নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালনের জন্য মাঠে নামবে।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার মো. মাহবুব আলম জানান, নির্বাচন উপলক্ষে তাদের আড়াই হাজারের মতো পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। ৫ জানুয়ারি তারা মাঠে নামবে।

গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী শফিকুল আলম জানান, ১ হাজার ২০০-এর মতো পুলিশ মোতায়েন করা হবে। ৬ জানুয়ারি তারা নির্বাচনি দায়িত্ব পালন শুরু করবে।

র‌্যাব-১-এর গাজীপুরের পোড়াবাড়ি ক্যাম্পের দায়িত্বরত কোম্পানি কমান্ডার মেজর মো. ইয়াসির আরাফাত হোসেন জানান, এবার নির্বাচনে গাজীপুরের পাঁচটি নির্বাচনি আসনের প্রতিটিতে ১৬ জন করে মোট ৮০ জন র?্যাব সদস্য মোবাইল ফোর্স এবং স্ট্রাইকিং রিজার্ভ হিসেবে কাজ করবে।

জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম জানান, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে এবং সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে গাজীপুরে পর্যাপ্ত সংখ্যক র?্যাব, বিজিবি, পুলিশ সমন্বয়ে স্ট্রাইকিং ফোর্স গঠন করা হবে। গাজীপুরে পাঁচটি নির্বাচনি এলাকায় ভাগ হয়ে তারা দায়িত্ব পালন করবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর