রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

থার্টিফার্স্টে ওড়ানো যাবে না ফানুস

ডিএমপির ১২ নির্দেশনা, বন্ধ থাকবে সব বার ও আতশবাজি

আলী আজম

থার্টিফার্স্ট নাইট বা ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন কেন্দ্র করে রাজধানীতে নি-িদ্র নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলেছেন পুলিশ-র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এরই মধ্যে নগরীর বিভিন্ন প্রবেশপথে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সতর্ক থাকবে পুলিশ-র‌্যাবসহ সংশ্লিষ্টরা। কোথাও কোনো ধরনের আতশবাজি, পটকা ফোটানো ও ফানুস ওড়ানো নিষিদ্ধসহ ১২ নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মহানর পুলিশ (ডিএমপি)। এদিকে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও উচ্ছৃঙ্খলতা রোধে থার্টিফার্স্ট নাইটে রাজধানীর সব বার বন্ধ থাকবে। থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি)।

জানা গেছে, থার্টিফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে অবৈধ ও ভেজাল মদ পান করে কোনো প্রাণহানি বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে সে বিষয়ে পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। থার্টিফার্স্ট নাইটে মাদক সেবন করে রাস্তাঘাটে যাতে কেউ মাতলামি বা উচ্ছৃঙ্খলতা না করে সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবৈধভাবে মাদকদ্রব্য বিক্রি ও চোরাচালনসহ মাদক বিক্রির চিহ্নিত স্থান এবং হোটেল, রেস্তোরাঁয় অবৈধভাবে মাদক বিক্রি ও ব্যবহার রোধে মাদকবিরোধী অভিযান জোরদারে একাধিক টিম গঠন করা হয়েছে।

ডিএনসির উপপরিচালক (ঢাকা মেট্রো-উত্তর) মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন টিম গুলশান, রমনা, তেজগাঁও, ধানমন্ডি, উত্তরা, মিরপুর ও মোহাম্মদপুর; উপপরিচালক (ঢাকা মেট্রো-দক্ষিণ) মো. মাসুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন টিম সূত্রাপুর, কোতোয়ালি, মতিঝিল, সবুজবাগ, ডেমরা, লালবাগ ও খিলগাঁও এবং উপপরিচালক (ঢাকা জেলা) মো. বাহাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন টিম কেরানীগঞ্জ, সাভার, ধামরাই, দোহার ও নবাবগঞ্জ এলাকায় বিশেষ অভিযান শুরু করেছে। সার্বিক কার্যক্রম সমন্বয় করছেন ডিএনসির অতিরিক্ত পরিচালক (ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়) মজিবুর রহমান পাটওয়ারী। থাকবে স্পেশাল মনিটরিংয়ের ব্যবস্থাও। প্রসঙ্গত, থার্টিফার্স্ট নাইট  ঘিরে রাজধানীতে হোটেল, রেস্তোরাঁ, রেস্ট হাউস, গেস্ট হাউসসহ আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনে নানা অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ডিজে পার্টির আয়োজন করা হয়। এসব অনুষ্ঠানে চলে তরুণ-তরুণীদের শরীরীয় উন্মাতাল-উন্মাদনা। নাচের নামে অশালীন অঙ্গ-ভঙ্গির মধ্যে চলে ইয়াবা, আইস, সিসা, বিয়ারসহ অবাধ মাদক সেবন। নেশায় বুঁদ হয়ে যায় তরুণ-তরুণী। এমনকি অসামাজিক কাজেও লিপ্ত হয় তারা। আবার এসব স্থানে দেহব্যবসার সঙ্গে ভেজাল ও অবৈধ মাদকের ব্যবসা চলে। এসব অবৈধ মাদকের বিরুদ্ধে রাজধানীতে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে ডিএনসি। ডিএনসির অতিরিক্ত পরিচালক মজিবুর রহমান পাটওয়ারী বলেন, থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে ৯টি বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে।
 তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, হাতিরঝিল, রবীন্দ্র সরোবর, গুলশান-১ ও ২-এ বেশি সক্রিয় থেকে অবৈধ ও ভেজাল মদ উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে। এসব এলাকায় চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। হোটেল, রেস্তোরাঁ, আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনে ডিজে পার্টি বন্ধ থাকবে।
ডিএমপির ১২ নির্দেশনা : থার্টিফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে ১২ দফা নির্দেশনা দিয়েছে ডিএমপি। ঢাকা মহানগরীতে নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগরের সার্বিক নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলার স্বার্থে রাস্তার মোড়, ফ্লাইওভার, রাস্তায় এবং প্রকাশ্য স্থানে কোনো ধরনের সভা-জমায়েত বা উৎসব করা যাবে না; উন্মুক্ত স্থানে নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে কোনো ধরনের অনুষ্ঠান, সমাবেশ, নাচ, গান ও কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা যাবে না; কোথাও কোনো ধরনের আতশবাজি, পটকা ফোটানো ও ফানুস ওড়ানো বা ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সন্ধ্যা ৬টার পর বহিরাগত কোনো ব্যক্তি বা যানবাহন প্রবেশ করতে পারবে না। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত যানবাহন পরিচয় প্রদান সাপেক্ষে প্রবেশ করতে পারবে; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বসবাসরত শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ ৩১ ডিসেম্বর রাত ৮টার মধ্যে স্ব-স্ব এলাকায় প্রত্যাবর্তন করবেন এবং রাত ৮টার পর প্রবেশের ক্ষেত্রে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যবৃন্দকে পরিচয়পত্র প্রদর্শন করতে হবে; গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় রাত ৮টার পর বহিরাগতরা প্রবেশ করতে পারবে না। তবে ওই এলাকায় বসবাসরত সম্মানিত নাগরিকবৃন্দ নির্ধারিত সময়ের পর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ (কাকলী ক্রসিং) এবং মহাখালী আমতলী ক্রসিং দিয়ে পরিচয় প্রদান সাপেক্ষে প্রবেশ করতে পারবে; একইভাবে উপর্যুক্ত সময়ে সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে গুলশান, বনানী, বারিধারা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকায় যেসব নাগরিক বসবাস করেন না তাদের বর্ণিত এলাকায় গমনের ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করা হলো; হাতিরঝিল এলাকায় সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে কোনো সমাবেশ বা অনুষ্ঠান করা যাবে না এবং কোনো যানবাহন থামিয়ে অথবা পার্কিং করে কেউ অবস্থান করতে পারবে না; গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় বসবাসরত সম্মানিত নাগরিকবৃন্দকে ৩১ ডিসেম্বর রাত ৮টার মধ্যে স্ব-স্ব এলাকায় প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুরোধ করা হলো; ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টার পর ঢাকা মহানগরীর কোনো বার খোলা রাখা যাবে না; আবাসিক হোটেলগুলো সীমিত আকারে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠান করতে পারবে এবং ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১ জানুয়ারি ভোর ৫টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ, জনসমাবেশ ও উৎসবস্থলে সব প্রকার লাইসেন্সকৃত আগ্নেয়াস্ত্র বহন করা যাবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর