মঙ্গলবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

ক্ষমতাধর তিন এমপি ধরাশায়ী

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অবসান হয়েছে তিন ক্ষমতাধর এমপির প্রতাপের যুগের। এর মধ্যে দুই এমপির ভাগ্যে জুটেছে ভূমিধস পরাজয়। আরেকজন নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার আধ ঘণ্টা আগে প্রার্থিতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। ‘স্বর্গ থেকে পতন’ হওয়া তিন ক্ষমতাধরের বিরুদ্ধে রয়েছে ক্ষমতার অপব্যবহার, দলীয় নেতা কর্মীদের মামলা-হামলা দিয়ে হয়রানি, উন্নয়নের টাকা আত্মসাৎসহ অভিযোগের পাহাড়। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ দাশ বলেন, ‘পটিয়ায় সব অপরাধের নেতৃত্বে ছিলেন এমপি সামশু, তার ছেলে ও আত্মীয় স্বজনরা। তার অত্যাচার নির্যাতন থেকে বাদ যায়নি দলীয় নেতা-কর্মীও। এ নির্বাচনে পটিয়ার জনগণ সব অপকর্মের জবাব দিয়েছে ব্যালটের মাধ্যমে।’ লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, ‘আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর নেতৃত্বে গত ১০ বছর সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় দুর্নীতি-লুটপাট উৎসব হয়েছে। মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে সব অপরাধের নেতৃত্বে ছিলেন নদভী ও তার আত্মীয় স্বজনরা। দুই উপজেলার জনগণ ভোটের মাধ্যমে তার বিদায় ঘণ্টা বাজিয়েছেন।’ চট্টগ্রাম-১২ পটিয়া আসন থেকে টানা তিনবার এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর পটিয়াকে অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেন সামশুল হক চৌধুরী ওরফে ‘বিচ্ছু সামশু’। পটিয়ার প্রতিটি সেক্টরকে ভাগ করে অপরাধের নিয়ন্ত্রণ নেয় পুত্র শারুনসহ অন্যান্য আত্মীয় স্বজন। এলাকায় চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ভূমি দখল, সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষকতা, বিএনপি-জামায়াতকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের নিপীড়ন ও মামলা-হামলা করার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে সামশু ও তার আত্মীয় স্বজনদের বিরুদ্ধে। নানান অভিযোগের ভিত্তিতে দলীয় মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েন বিচ্ছু সামশু। এরপর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। ভোটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর কাছে বিচ্ছু সামশু ধরাশায়ী হয়েছেন ৮৫ হাজার ৭৩ ভোটের ব্যবধানে। ফলে পটিয়ায় বিচ্ছু সামশু যুগের অবসান হয়।

চট্টগ্রাম-১৫ সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া থেকে টানা দুবার এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কথায় কথায় মামলা, বিএনপি-জামায়াতকে পৃষ্ঠপোষকতা, উন্নয়ন কাজ থেকে কমিশন গ্রহণ, বালু মহল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, মাদক ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষকতা, সরকারি নানান প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎসহ নানান অভিযোগ রয়েছে নদভীর বিরুদ্ধে। নদভী ছাড়াও তার স্ত্রী ও আত্মীয় স্বজনদের বিরুদ্ধেও রয়েছে অসংখ্য অভিযোগ। ফলে সাতকানিয়া এবং লোহাগাড়া আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা কর্মীদের সঙ্গে নদভীর সৃষ্টি হয় যোজন যোজন দূরত্ব। তাই এবার দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পরও নদভীর বিপক্ষে অবস্থান নেয় নেতা-কর্মীরা। তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মোতালেবের পক্ষে কাজ শুরু করেন। নির্বাচনে ৪৫ হাজারের অধিক ভোটের ব্যবধানে মোতালেবের কাছে পরাজিত হন নদভী। চট্টগ্রাম-১৬ বাঁশখালী আসনের এমপি মোস্তাফিজুর রহমান ২০১৪ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ছিলেন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেও জন্মদেন একের পর এক বিতর্কিত ঘটনা। সর্বশেষ নির্বাচনের দিন নিজ অনুসারী কাউন্সিলরকে ছাড়াতে গিয়ে ওসিসহ পুলিশ সদস্যদের ধমকান। এ ঘটনার জের ধরে তার প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। এর আগে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করায় ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ ছাড়া বিগত সময়ে নির্বাচন কর্মকর্তাদের মারধর, অনুসারী দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেও এর আগে শিরোনাম হয়েছেন। এ ছাড়াও বেড়িবাঁধ নির্মাণে বরাদ্দ টাকা নয়-ছয়সহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

 

সর্বশেষ খবর