মঙ্গলবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
রংপুর

জাপার দুর্গে শোচনীয় পরাজয়ের যত কারণ

নজরুল মৃধা, রংপুর

এক সময় জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে খ্যাত ছিল রংপুর বিভাগ। জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা অহংকার করে বলত- এটা লাঙলের ঘাঁটি। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব হিসাব ওলট-পালট করে দিয়েছে জাতীয় পার্টিকে। রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনের মধ্যে জাতীয় পার্টি পেয়েছে মাত্র ৩টি আসন। জাতীয় পার্টির কেন এমন ভরাডুবি হলো- এ নিয়ে চলছে আলোচনা ও বিশ্লেষণ। বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা হলে শোচনীয় এ হারের কিছু কারণ উঠে এসেছে।

সর্বপ্রথম উঠে এসেছে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বের অভাব। জাপা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর পরে এখানে যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতে পারেনি জাতীয় পার্টি। দেবর-ভাবির দ্বন্দ্ব প্রভাব ফেলেছে নেতা-কর্মীদের মাঝে। নেতৃত্ব নিয়ে নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে কিছু না বললেও ভিতরে ভিতরে তাদের মাঝে এক ধরনের অনীহা ভাব চলে আসে। রওশন এরশাদের সঙ্গে জি এম কাদেরের দ্বন্দ্বের প্রভাব ফেলেছে নির্বাচনে। এ ছাড়া বিগত দিনে জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত হয়ে অনেক এমপিই এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি। রংপুর সদরসহ বেশ কয়েকটি আসনের জাতীয় পার্টির এমপিকে গত পাঁচ বছরে নিজ নির্বাচনি এলাকায় খুব কম দেখা গেছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ ছিল। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ভুল হয়েছে এমনটাও মনে করছেন অনেকে। রংপুরের মিঠাপুকুর আসনসহ বেশ কয়েকটি আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা ছিল নতুন মুখ। এলাকার মানুষের সঙ্গে তাদের খুব একটা যোগাযোগ ছিল না। তাছাড়া দ্বাদশ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রচার-প্রচারণা খুব একটা ছিল না। রংপুরের ৬টি আসনে প্রচার-প্রচারণায় দেখা গেছে গাছাড়া ভাব। দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের তার ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ারের আসনেও প্রচারণার জন্য যেতে পারেননি। দলের চেয়ারম্যান নিজেও তার নির্বাচনি এলাকা রংপুর সদর আসনে চোখে পড়ার মতো প্রচারণা চালাতে দেখা যায়নি। একাদশ নির্বাচনে নির্বাচিত জাপার এমপিরা এলাকার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেনি। এলাকায় যতটুকু উন্নয়ন হয়েছে তার অধিকাংশের ভাগিদার আওয়ামী লীগ সরকার।

সবশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৬ ডিসেম্বর রংপুরের তারাগঞ্জ, মিঠাপুকুর ও পীরগঞ্জে নির্বাচনি প্রচারণা চালিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনি প্রচারণা আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর মাঝে টনিক হিসেবে কাজ করেছে। এসবসহ আরও বেশ কিছু কারণে জাতীয় পার্টির ভরাডুবি হয়েছে এই অঞ্চলে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগে জাতীয় পার্টিকে ২৬টি আসন ছেড়ে দেয়। এর মধ্যে রংপুর বিভাগে ৯টি আসনে আওয়ামী লীগ নৌকা মার্কার কোনো প্রার্থী দেয়নি। ৯টি আসনের মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন ৩টিতে। রংপুর-৩ আসনে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এবং কুড়িগ্রাম-১ আসনে এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান বিজয়ী হয়েছেন। বাকি ৬টি আসনের কোনোটিতেই জাতীয় পার্টি শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেননি। নীলফামারী-৩ আসনে রানা মোহাম্মদ সোহেল, নীলফামারী-৪ আসনে আহসান আদেলুর রহমান, রংপুর-১ আসনে হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ, কুড়িগ্রাম-২ আসনে পনির উদ্দিন আহমেদ, গাইবান্ধা-১ আসনে শামীম পাটোয়ারী ও গাইবান্ধা-২ আসনে আবদুর রশিদ সরকারের মধ্যে কেউই আওয়ামী লীগ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেননি। ফলে তাদের অনেকেই শোচনীয়ভাবে হেরেছেন। রংপুর-১ গঙ্গাচড়া, পীরগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি আসনে জামানতও হারিয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা।

 

সর্বশেষ খবর