শনিবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

শীতের রোগে ভুগছে মানুষ

♦ ঘরে ঘরে জ্বর, কাশি, ডায়রিয়া ♦ ঝুঁকিতে শিশু ও বয়স্করা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

শীতের রোগে ভুগছে মানুষ

কনকনে ঠান্ডায় গাইবান্ধার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় গত তিন দিন ধরে কোথাও সূর্যের দেখা মেলেনি। শীতের কারণে শিশু ও বয়স্করা নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঘরে ঘরে শীতজনিত রোগে ভুগছে মানুষ। শীতের তীব্রতা বাড়ায় নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রের ইনফেকশনসহ শীতকালীন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ২ লাখ ছাড়িয়েছে। তীব্র শীতে রোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন শিশু ও বয়স্করা।

ইমেরিটাস অধ্যাপক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ সময় ভাইরাস জ্বর কিংবা সাধারণ জ্বর, সর্দি, কাশিসহ শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। শিশুরা ডায়রিয়া এবং নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হচ্ছে। বয়স্করাও নিউমোনিয়া এবং বাতজনিত ব্যথায় আক্রান্ত হচ্ছেন। মৌসুম পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়ার তারতম্য ঘটছে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। গরম পানি খাওয়া এবং গরম পানিতে গোসল করতে পারলে কিছুটা উপকার মিলবে। অকারণে ঠান্ডায় বাইরে ঘোরাঘুরি করা যাবে না, শিশুদের গরম কাপড় পরিয়ে রাখতে হবে। অসুস্থ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ফার্মেসি থেকে নিজের ইচ্ছামতো ওষুধ কিনে সেবন করা যাবে না।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সারা দেশে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা তালিকাভুক্ত করে। তাদের পরিসংখ্যানে জানা যায়, গত ১৫ নভেম্বর থেকে ডায়রিয়া এবং শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত ২ লাখ ছাড়িয়েছে।

গত কয়েক দিনে সারা দেশে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে জ্বর, সর্দি-কাশি এবং ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ঝুঁকিতে রয়েছে শিশুরা। তাপমাত্রার ওঠানামায় সারা দেশে বেড়েছে ভাইরাস জ্বর, সর্দি, কাশি এবং ডায়রিয়ার প্রকোপ। হাসপাতালগুলোতেও বাড়ছে এমন রোগীর সংখ্যা।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাসিন্দা ফজলুল কবির বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমি জ্বরে আক্রান্ত হই। শরীরে প্রচন্ড ব্যথা, সঙ্গে হাঁচি। ডেঙ্গু টেস্ট করালে নেগেটিভ আসে। কিন্তু তিন দিন ধরে জ্বরে কাহিল হয়ে পড়ছিলাম। এরপর আমার স্ত্রী আক্রান্ত হয়। এখন আমার ছেলের প্রচন্ড জ্বর, সঙ্গে বমি এবং ডায়রিয়া। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ চলছে সবারই। শরীর ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়েছে।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের নাক, কান, গলা বিভাগের অধ্যাপক ডা. মণিলাল আইচ বলেন, ‘শীতে বাতাসে ধুলাবালি ১০ গুণ বেশি থাকে। এ সময় টনসিলাইটিস, নাকের ভিতরের শ্লেষ্মাঝিল্লির জ্বালাপোড়া ও প্রদাহ, সাইনোসাইটিস, অ্যাজমা, নিউমোনিয়া, শিশুদের ডায়রিয়া, কানের প্রদাহ বেড়ে যায়।’

শিশুদের মধ্যে শীতকালীন রোগে আক্রান্তের হার অনেক বেশি। গত কয়েকদিন ধরে ঢাকার বাইরে শীতের প্রকোপ বেড়েছে। এ সময় শিশুরা বেশি শীতকালীন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে তাদের প্রতি বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ চিকিৎসকদের। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পেডিয়াট্রিক রেসপেরটরি মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, ‘জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, নিউমোনিয়া, ব্রংকলাইটিস ও শীতকালীন ডায়রিয়ায় শিশুরা অনেক বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় হাসপাতালে ও প্রাইভেট চেম্বারে শীতকালীন রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা এখন অনেক বেশি।

ডা. কামরুজ্জামান বলেন, দুই মাসের কম বয়সী শিশুদের শ্বাস নেওয়ার হার মিনিটে ৬০ বারের বেশি, দুই মাস থেকে ১২ মাস বয়সী শিশুদের মিনিটে ৫০ বারের বেশি এবং ১২ মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশু মিনিটে ৪০ বারের বেশি শ্বাস-প্রশ্বাস নিলে তাকে শ্বাসকষ্ট বলা হয়। এর সঙ্গে শিশুর বুকের পাঁজরের নিচের অংশ দেবে গেলে, জ্বর থাকলে, শ্বাস নেওয়ার সময় কোনো শব্দ হলে, বমি হলে তা নিউমোনিয়ার লক্ষণ। এসব লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে। এখন কোল্ড ডায়রিয়া বেড়েছে। তাই ডায়রিয়া হলে শিশুকে স্যালাইন খাওয়াতে হবে।’

 

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর