রবিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্রদের কণ্ঠে বিএনপির সুর

ভোট শেষে অভিযোগের হিড়িক

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহীর ৬ আসনের ৫টিতেই নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিপরীতে স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচন করেছেন আওয়ামী লীগেরই ৯ জন নেতা। তবে ৫টি আসনের ৪টিতেই হেরেছেন তারা। আর সেই হারকে স্বাভাবিক বলে মেনে নিতে না পেরে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এখন দাবি করছেন পুনর্নির্বাচনের। তাদের অভিযোগ, ভোটের আগ থেকেই নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা ভোটারদের মাঝে ভীতির সঞ্চার করেন। আর এসব নিয়ে প্রশাসনকে অভিযোগ দেওয়া হলেও তারা কোনোই ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। ফলে ভোটের দিন কেন্দ্রেগুলোতে ভোট চুরি করে নৌকার প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন।

রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরীর বিপক্ষে আওয়ামী লীগের চারজন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। চারজনের মধ্যে কাঁচি প্রতীকের প্রার্থী গোলাম রাব্বানী সর্বোচ্চ ভোট পান। তবে তিনি ১১ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কাছে। আসনটিতে ভোট পড়েছে ৪৯.৯৩ শতাংশ। কাঁচি প্রতীকের প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতা গোলাম রাব্বানী সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানান। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমি ভোটে বিজয়ী হয়েছি। কিন্তু ভোটের ফল পরিবর্তন করে আমাকে পরাজিত দেখানো হচ্ছে। তানোর উপজেলার চেয়ারম্যানসহ বেশ কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান এবং প্রিসাইডিং অফিসাররা ভোটের ফল পরিবর্তন করেছেন। ইসির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ভোটারের উপস্থিতির চিত্র দুই ঘণ্টা পরপর প্রকাশ করা হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার তথ্য মতে, দুপুর ৩টা পর্যন্ত ভোটারের উপস্থিতি ছিল ২৮ শতাংশ। অথচ ৪টা বাজতেই যা হঠাৎ ৪৯ ছাড়িয়ে যায়! ভোট চলাকালীন সময়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ভোটের ফলাফল স্থগিতের লিখিত অভিযোগের পরেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কাছে ৫৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তিনবারের এমপি এনামুল হক। আসনটিতে ৫৫ শতাংশ ভোট পড়েছে; যা রাজশাহীর ৬টি  আসনের মধ্যে সর্বোচ্চ। কাঁচি প্রতীকের প্রার্থী এনামুল হক আসনটিতে ফলাফল বাতিলসহ পুনঃতফসিলের দাবি জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। ৯ জানুয়ারি পাঠানো ওই অভিযোগ পত্রে তিনি দাবি করেন, ইসির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ভোটারদের উপস্থিতির চিত্র দুই ঘণ্টা পরপর প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে দেখা যায় দুপুর ৩টা পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ভোট পড়লেও ৪টার মধ্যে সব কেন্দ্র দখল করে নেয় নৌকার সমর্থকরা এবং ব্যালট পেপারে সিল মেরে নির্বাচনের ফলাফল তাদের অনুকূলে নিয়ে নেয়।

রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে নৌকা প্রতীকের আবদুল ওয়াদুদ দারার কাছে ঈগল প্রতীকের প্রার্থী ও যুবলীগের সাবেক নেতা ওবায়দুর রহমান ৩ হাজার ভোটে পরাজিত হন। আসনটিতে ভোট পড়েছে ৫১.৪৩ শতাংশ। ওবায়দুরের দাবি, নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণার শুরু থেকেই নৌকা প্রতীকের প্রার্থী দারা তার সমর্থকদের নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচারণায় বাধা দেন। নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে জয়ী হয়েছেন।

রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শাহরিয়ার আলমের কাছে ২৭ হাজার ভোটে পরাজিত হয়েছেন কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা রাহেনুল হক। আসনটিতে ভোট পড়েছে ৫২.২০ শতাংশ। স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হক সংবাদ সম্মেলন করে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানান। তিনি বলেন, দুপুর ৩টা পর্যন্ত ২৭ শতাংশ ভোট গ্রহণ হয়। ৪টার সময় যা হঠাৎ করে ৫২ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। যা একেবারেই কাল্পনিক বিষয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর