মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ রোগীরা

নীরব বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কর্তৃপক্ষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

‘স্বেচ্ছাসেবক’ নামধারী হাজারো বহিরাগতের উৎপাত আর চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রোগী। জরুরি বিভাগ থেকে ওয়ার্ড, পরীক্ষানিরীক্ষা সবকিছুতে চাঁদা দিতে হয় তাদের। চাহিদামতো অর্থ না দিলে রোগীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। তবে স্বেচ্ছাসেবকদের দাবি, রোগীর সঙ্গে জুলুম করেন না তারা। কর্তৃপক্ষ পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা করলে রোগীর কাছ থেকে তারা অর্থ নেবেন না। স্বেচ্ছাসেবকরা ‘নিয়োগ’কৃত না হওয়ায় তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ওয়ার্ড মাস্টাররা। তবে স্বেচ্ছাসেবকদের বিরুদ্ধে জোরজুলুমের অভিযোগ পেলে তাদের হাসপাতাল থেকে বিতাড়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১ হাজার শয্যার শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে তিন শিফটে চতুর্থ শ্রেণির অন্তত ১ হাজার কর্মচারী প্রয়োজন। কর্মরত রয়েছেন মাত্র ২৩৫ জন। তারা বিভিন্ন ধান্দাবাজিতে ব্যস্ত। স্বল্প জনবল দিয়ে সুষ্ঠুভাবে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। এ সুযোগে বিভিন্ন সময় আউটসোর্সিংয়ে কাজ করা শ্রমিকরা স্বেচ্ছাসেবকের মোড়কে গেড়ে বসেছে মেডিকেলের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। তাদের ছাড়া মেডিকেল সেবা যেন অচল! ওয়ার্ড পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা, জরুরি বিভাগ থেকে রোগীকে ওয়ার্ডে পৌঁছে দেওয়া, পরীক্ষার জন্য রেডিওলজি বিভাগসহ বিভিন্ন দাফতরিক কাজে স্বেচ্ছাসেবকরাই ভরসা। সব কাজে তাদের অর্থ দিতে হয় অভিযোগ রোগীদের। টাকা ছাড়া সেবা মেলে না। চাহিদামতো অর্থ না দিলে রোগীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়। রোগীর স্বজন আবদুল হালিম জানান, জরুরি বিভাগ থেকে ট্রলিতে একজন রোগীকে ওয়ার্ডে পৌঁছে দিতে ১০০ থেকে ২০০ টাকা দিতে হয় স্বেচ্ছাসেবকদের। রোগ পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য রেডিওলজি বিভাগে কিংবা বাইরের বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিতে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দিতে হয়। স্বেচ্ছাসেবক ছাড়া কোনো কাজ চলে না। চাহিদামতো অর্থ না দিলে তারা রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। নামে স্বেচ্ছাসেবক হলেও রোগীদের দেওয়া অর্থেই জীবিকা চলে বলে স্বীকার করেছেন হাফিজুর রহমান, সাজ্জাদ হোসেন, আয়শা বেগমসহ অন্য বহিরাগতরা। তবে তাদের দাবি, কারও সঙ্গে জুলুম করেন না। রোগীরা খুশি হয়ে যা দেয় তাতেই সন্তুষ্ট থাকেন। কর্তৃপক্ষ পারিশ্রমিক দিলে রোগীদের কাছ থেকে আর অর্থ নেবেন না বলে জানিয়েছেন তারা। হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আবুল কালাম জানান, স্বেচ্ছাসেবকরা নিয়োগকৃত কর্মচারী না হওয়ায় তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তাদের চাঁদাবাজির দায় কর্তৃপক্ষের ওপর পড়ছে বলে স্বীকার করেন তিনি। হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম জানান, স্বেচ্ছাসেবকরা হাসপাতালে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করেন। রোগীর ফুটফরমাশ করেন। রোগীরা খুশি হয়ে তাদের কিছু দেয়। এ দিয়ে তারা চলেন। স্বেচ্ছাসেবক কারও বিরুদ্ধে জুলুমের অভিযোগ পেলে তাদের হাসপাতাল থেকে বিতাড়িত করা হবে। শিগগিরই আউটসোর্সিং জনবল নিয়োগ দিয়ে হাসপাতাল থেকে স্বেচ্ছাসেবক নামধারী বহিরাগতদের বিতাড়িত করার কথা বলেন পরিচালক।

১ হাজার শয্যার এ হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন চিকিৎসাধীন থাকছে ১ হাজার ৮০০ রোগী। এ ছাড়া সরকারি খোলার দিনে বহির্বিভাগে প্রতিদিন ডাক্তার দেখায় আরও অন্তত ৩ হাজার রোগী।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর