নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার তিনটি এলাকায় দ্বিতীয় দফায় আরও ৭ হাজার কম্বল বিতরণ করেছে দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে উপজেলার কাঞ্চনের কেন্দুয়া মোগলের বাগানবাড়ি এলাকায় ৪ হাজার, আতলাপুরে ১ হাজার এবং পূর্বাচল ২১ নম্বর সেক্টর রাজউক অফিসের সামনে ২ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়। তখন দুপুর সাড়ে ১২টা। কাঞ্চনের মোগলের বাগানবাড়িতে কনকনে শীতে যেন কাঁপছেন উপস্থিত অনেক বৃদ্ধ নারী-পুরুষ। ওই বাগানে তারা আসার পরপরই হাতে হাতে পেলেন একটি করে কম্বল। তাদেরই একজন লাঠি ভর করে এলেন ৮৫ বছর বয়সী জান্নাত খাতুন। জানালেন, তার স্বামী মারা গেছেন প্রায় ৩০ বছর আগে। কোনো সন্তানসন্ততি নেই। মানুষের সাহায্য-সহযোগিতায় কোনোরকমে দিনযাপন করছেন। তবে এই শীতে খুবই কষ্টে আছেন। এরই মধ্যে তিনি কম্বল পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে গায়ে জড়িয়ে বলতে থাকেন, ‘কম্বল দেওয়ার কার্ডটা পাওয়ার পর থেইকা ভালো লাগতাছিল, এহন কম্বল পাইছি, এই জারে এহন আরামে থাকতে পারব। যারা (বসুন্ধরা গ্রুপ) আমাগো দিকে তাকাইছে, আল্লাহ ভালো করুক। দুহাত তুলি দোয়া করি তাগোর লাগি।’
মমতাজ উদ্দিন নামের (৭৫) আরেকজন বলেন, ‘এক সময় কৃষি খেতে শ্রমিকের কাজ করতাম, ওহন শরীরে জোর (শক্তি) নাই, কোনোরকমে আছি। শীতে কষ্ট পাচ্ছিলাম। তয়, এই কম্বল পাওনে অনেক উপকার হইল। রাতে আরামে ঘুমাতি পারব।’ এদিকে বেলা পৌনে ২টার দিকে পূর্বাচল এলাকায় কম্বল পাওয়ার পর ৬৫ বছরের বৃদ্ধা তহুরুল বেগম আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি কম্বল হাতে পেয়ে বলেন, আমার শীতে কষ্ট হইতাছিল। এখন আর কষ্ট হইব না। বসুন্ধরার জন্য আল্লাহ কাছে দোয়া করি, বসুন্ধরার মালিকের জন্য দোয়া করি। তিনি বলেন, আমাদের সমস্যা হইলে বসুন্ধরা সাহায্য করে। এবার শীত বেশি পড়ছে, তাই শীতে কষ্ট হইতাছিল। মনে মনে আশা করতাছিলাম এমন একটা কম্বলের। এর মধ্যেই আজ এই কম্বল পাইলাম।
দিনমজুর আলেক মিয়া (৫০) বলেন, ‘বিভিন্ন সময় তাদের সাহায্য-সহযোগিতা পাই। এবার কম্বল অনেক খুশি লাগছে, বসুন্ধরা গ্রুপের জন্য অনেক দোয়া রইল। আমরা সবাই অনেক খুশি। আল্লাহ তাদের মঙ্গল করুক।’ শুধু জান্নাত, মমতাজ ও আলেকই নন, কম্বল পেয়ে সবাই খুশি মনে বাড়ি ফিরেছেন। কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইস্টওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের পরিচালক ও কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ইস্টওয়েস্ট![](/assets/archive/images/Print-Edition/2024/01.JANUARY/17-01-2024/BP-24'01'17-3A.jpg)
শীতার্তদের জন্য কুষ্টিয়া ত্রাণ শাখায় বসুন্ধরার কম্বল : কুষ্টিয়ার অসহায় শীতার্তদের জন্য এবার জেলা প্রশাসকের ত্রাণ শাখায় ৩০০ কম্বল দিয়েছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। এ জন্য জেলা প্রশাসক এহতেশাম রেজা বসুন্ধরা গ্রুপের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টায় বসুন্ধরা শুভসংঘের পক্ষে জেলা প্রশাসকের হাতে কম্বল তুলে দেন কুষ্টিয়া জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি কালের কণ্ঠ পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক তারিকুল হক তারিক। সে সময় জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা আবদুর রহমান, নিউজ২৪ টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার ও বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার প্রতিনিধি জাহিদুজ্জামান, বসুন্ধরা শুভসংঘ কুষ্টিয়া শাখার সভাপতি সাইদুল বারী টুটুল, সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমান মঞ্জু ও এনামুল হক উপস্থিত ছিলেন।
এক সপ্তাহ ধরে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকায় অসহায় শীতার্তদের মধ্যে ৬ হাজার কম্বল বিতরণ করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। জেলা প্রশাসক বলেন, বসুন্ধরার সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডগুলো মহতী উদ্যোগ। আমরা আশা করছি এর ধারাবাহিকতায় তারা কুষ্টিয়ায় আরও উন্নয়নমূলক কর্মকা নিয়ে দারিদ্রপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়াবে। বসুন্ধরার এ কম্বল আমাদের অসহায় শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর কাজটি এগিয়ে দিল। অন্যরাও তাদের মতো এগিয়ে এলে দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের কষ্ট অনেকাংশে লাঘব হবে।