বুধবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
রূপগঞ্জে আরও ৭ হাজার কম্বল বিতরণ

বসুন্ধরার কম্বল পাইছি, এহন আরামে থাকতে পারব

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি

বসুন্ধরার কম্বল পাইছি, এহন আরামে থাকতে পারব

বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে গতকাল রূপগঞ্জ উপজেলার কেন্দুয়া মোগলের বাগানবাড়ি, আতলাপুর ও পূর্বাচল ২১ নম্বর সেক্টর রাজউক অফিসের সামনে কম্বল বিতরণ করা হয় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার তিনটি এলাকায় দ্বিতীয় দফায় আরও ৭ হাজার কম্বল বিতরণ করেছে দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে উপজেলার কাঞ্চনের কেন্দুয়া মোগলের বাগানবাড়ি এলাকায় ৪ হাজার, আতলাপুরে ১ হাজার এবং পূর্বাচল ২১ নম্বর সেক্টর রাজউক অফিসের সামনে ২ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়। তখন দুপুর সাড়ে ১২টা। কাঞ্চনের মোগলের বাগানবাড়িতে কনকনে শীতে যেন কাঁপছেন উপস্থিত অনেক বৃদ্ধ নারী-পুরুষ। ওই বাগানে তারা আসার পরপরই হাতে হাতে পেলেন একটি করে কম্বল। তাদেরই একজন লাঠি ভর করে এলেন ৮৫ বছর বয়সী জান্নাত খাতুন। জানালেন, তার স্বামী মারা গেছেন প্রায় ৩০ বছর আগে। কোনো সন্তানসন্ততি নেই। মানুষের সাহায্য-সহযোগিতায় কোনোরকমে দিনযাপন করছেন। তবে এই শীতে খুবই কষ্টে আছেন। এরই মধ্যে তিনি কম্বল পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে গায়ে জড়িয়ে বলতে থাকেন, ‘কম্বল দেওয়ার কার্ডটা পাওয়ার পর থেইকা ভালো লাগতাছিল, এহন কম্বল পাইছি, এই জারে এহন আরামে থাকতে পারব। যারা (বসুন্ধরা গ্রুপ) আমাগো দিকে তাকাইছে, আল্লাহ ভালো করুক। দুহাত তুলি দোয়া করি তাগোর লাগি।’

মমতাজ উদ্দিন নামের (৭৫) আরেকজন বলেন, ‘এক সময় কৃষি খেতে শ্রমিকের কাজ করতাম, ওহন শরীরে জোর (শক্তি) নাই, কোনোরকমে আছি। শীতে কষ্ট পাচ্ছিলাম। তয়, এই কম্বল পাওনে অনেক উপকার হইল। রাতে আরামে ঘুমাতি পারব।’ এদিকে বেলা পৌনে ২টার দিকে পূর্বাচল এলাকায় কম্বল পাওয়ার পর ৬৫ বছরের বৃদ্ধা তহুরুল বেগম আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি কম্বল হাতে পেয়ে বলেন, আমার শীতে কষ্ট হইতাছিল। এখন আর কষ্ট হইব না। বসুন্ধরার জন্য আল্লাহ কাছে দোয়া করি, বসুন্ধরার মালিকের জন্য দোয়া করি। তিনি বলেন, আমাদের সমস্যা হইলে বসুন্ধরা সাহায্য করে। এবার শীত বেশি পড়ছে, তাই শীতে কষ্ট হইতাছিল। মনে মনে আশা করতাছিলাম এমন একটা কম্বলের। এর মধ্যেই আজ এই কম্বল পাইলাম।

দিনমজুর আলেক মিয়া (৫০) বলেন, ‘বিভিন্ন সময় তাদের সাহায্য-সহযোগিতা পাই। এবার কম্বল অনেক খুশি লাগছে, বসুন্ধরা গ্রুপের জন্য অনেক দোয়া রইল। আমরা সবাই অনেক খুশি। আল্লাহ তাদের মঙ্গল করুক।’ শুধু জান্নাত, মমতাজ ও আলেকই নন, কম্বল পেয়ে সবাই খুশি মনে বাড়ি ফিরেছেন। কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইস্টওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের পরিচালক ও কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ইস্টওয়েস্ট প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মো. লিয়াকত হোসাইন, সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার আবু হেনা, কাঞ্চন পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম রফিক, সাতগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়াদুদ মাহমুদ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। ইমদাদুল হক মিলন বলেন, আজকে আমরা ৭ হাজার কম্বল বিতরণ করছি। দেশের আরও বিভিন্ন জায়গায় আমরা কম্বল বিতরণ করছি। এটা বসুন্ধরা গ্রুপ থেকে প্রতি বছর শীতের সময় যেন মানুষের কষ্ট না হয় সেজন্য সারা দেশে ২ থেকে ৩ লাখ কম্বল বিতরণ করে থাকি। গতকাল করেছি রূপগঞ্জে, আজও করছি। আমাদের উদ্দেশ্য একটাই, যেন এই শীতে কোনো মানুষ কষ্ট না পায়। তিনি আরও বলেন, রূপগঞ্জ এলাকা পছন্দ করার অন্যতম কারণ হচ্ছে, আমাদের বসুন্ধরা গ্রুপ এ এলাকা থেকে খুব কাছে। এ এলাকার মানুষকে আমাদের নিজেদের মানুষ মনে করি। নিজেদের এলাকার কোনো মানুষ যেন কষ্ট না পায় সে জন্য আমরা এ কম্বল বিতরণ করছি। আমরা আরও কিছু কাজ করছি, যা পরিষ্কারভাবে বলে দিতে চাই, এ এলাকার কোনো মেধাবী ছেলেমেয়ে, ছাত্রছাত্রী পড়াশোনার জন্য যদি আমাদের কাছে যায় তাদের সারা জীবন পড়ানোর দায়িত্ব আমাদের। কোনো গরিব মানুষ যদি চিকিৎসা করাতে না পারে তার চিকিৎসার দায়িত্ব আমাদের। বসুন্ধরা গ্রুপ দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে। তাই আমরা এ এলাকায় মানুষের আরও অনেক কাজ করতে চাই। এ এলাকার একটা মানুষও যেন কষ্টে না থাকে, আমরা সে জন্য এখানে কম্বল বিতরণ করছি। এরকম আরও অনেক কাজ আমরা করব, যেন এখানকার মানুষ ভালো থাকে। কাঞ্চন পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের সম্মানিত চেয়ারম্যান ও এমডি মহোদয় সব সময় রূপগঞ্জবাসীর কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। যে কোনো সুখ-দুঃখে তারা আমাদের পাশে থাকেন। করোনার মতো সংকটে এবং প্রত্যেক ঈদে খাদ্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য উপহার দিয়ে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় এই শীতে রূপগঞ্জে শীর্তাতদের মাঝে ৫০ হাজার কম্বল বিতরণ করা হবে। এর আগে সোমবার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নাওড়া হাজী ইয়াদ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে অসহায়, দুস্থ ও শীতার্ত ১০ হাজার মানুষের মাঝে প্রথম দফায় কম্বল বিতরণ করা হয়।

শীতার্তদের জন্য কুষ্টিয়া ত্রাণ শাখায় বসুন্ধরার কম্বল : কুষ্টিয়ার অসহায় শীতার্তদের জন্য এবার জেলা প্রশাসকের ত্রাণ শাখায় ৩০০ কম্বল দিয়েছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। এ জন্য জেলা প্রশাসক এহতেশাম রেজা বসুন্ধরা গ্রুপের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টায় বসুন্ধরা শুভসংঘের পক্ষে জেলা প্রশাসকের হাতে কম্বল তুলে দেন কুষ্টিয়া জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি কালের কণ্ঠ পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক তারিকুল হক তারিক। সে সময় জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা আবদুর রহমান, নিউজ২৪ টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার ও বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার প্রতিনিধি জাহিদুজ্জামান, বসুন্ধরা শুভসংঘ কুষ্টিয়া শাখার সভাপতি সাইদুল বারী টুটুল, সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমান মঞ্জু ও এনামুল হক উপস্থিত ছিলেন।

এক সপ্তাহ ধরে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকায় অসহায় শীতার্তদের মধ্যে ৬ হাজার কম্বল বিতরণ করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। জেলা প্রশাসক বলেন, বসুন্ধরার সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডগুলো মহতী উদ্যোগ। আমরা আশা করছি এর ধারাবাহিকতায় তারা কুষ্টিয়ায় আরও উন্নয়নমূলক কর্মকা নিয়ে দারিদ্রপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়াবে। বসুন্ধরার এ কম্বল আমাদের অসহায় শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর কাজটি এগিয়ে দিল। অন্যরাও তাদের মতো এগিয়ে এলে দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের কষ্ট অনেকাংশে লাঘব হবে।

সর্বশেষ খবর