বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

শিল্পনগরীতে জুয়েলারি কারখানার জন্য জমি বরাদ্দের আশ্বাস শিল্পমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) শিল্পনগরীতে জুয়েলারি শিল্পের কারখানা স্থাপনে জমি বরাদ্দের আশ্বাস দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন। গতকাল মন্ত্রণালয়ে নিজ দফতরে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) প্রতিনিধি দলের জমি বরাদ্দের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ আশ্বাস দেন মন্ত্রী। শিল্পমন্ত্রী বলেন, বাজুস মৌখিকভাবে তাদের যে দাবিগুলো জানিয়েছে সেগুলো শুনেছি। লিখিত দাবি দিলে আমরা একটি সময়োপযোগী পরিকল্পনা নেব। কারণ আমরা দ্রুত বিশ্ববাজারে যেতে চাই। রপ্তানি করতে চাই, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে চাই। এগুলো আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রস্তুত আছি, আপনারা দেরি না করলে ভালো হবে। তিনি বলেন, এ সরকার ব্যবসায়ীবান্ধব।

জুয়েলারি শিল্প আমাদের একটি টার্গেট। এটাকে আমরা একটি জায়গায় নিয়ে যাব। গোল্ড হাব নিয়ে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে জায়গার বিষয়ে শিল্পমন্ত্রী বলেন, বিসিকে আমি জায়গা দিয়ে দিচ্ছি। বাজুস আবেদন করলে আমি দিয়ে দেব। বিসিকের সঙ্গে আমি কথা বলব। ঢাকা থেকে এক ঘণ্টার দূরত্বে বসুন্ধরার পাশেই। এটা একটা সুন্দর জায়গা, সিলেট হাইওয়ের সঙ্গেই রয়েছে। বর্তমানে তাঁতীবাজারে যে শিল্পকারখানাগুলো রয়েছে, সেগুলো সেখানে চলে যেতে পারবে। বাজুসের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে ট্যাক্স-ভ্যাট বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে আপনারা শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তৈরি পোশাক শিল্পের বাইরে আমাদের আরও একটি পণ্য রয়েছে চামড়া। যেটা আমাদের নিজস্ব সম্পদ। আর স্বর্ণ আমদানি করে আনতে হয়। তৈরি পোশাকে যে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে সেটা চামড়া শিল্পেও দেওয়া হবে। কিন্তু জুয়েলারি শিল্প যেহেতু আমদানিনির্ভর তাই ভ্যাট-ট্যাক্স নিয়ে আমরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে কথা বলতে পারি। যেহেতু এটা প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজার, ভারতসহ অন্যান্য দেশ রয়েছে। তবে আমাদের পর্যাপ্ত সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের স্বল্পমূল্যে শ্রমিক পাওয়া যায়। ফলে অনেক কম খরচে পণ্য তৈরি করতে পারব, যা বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে সহায়ক হবে। সে ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে বাজুসকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়া হবে।

বিএসটিআইয়ের মাধ্যমে যৌথভাবে নিয়মিত ওজন পরিমাপক যন্ত্র পরীক্ষার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, বিএসটিআইয়ে এখন আধুনিক অনেক যন্ত্র এসেছে, নতুন নতুন পরীক্ষাগার হয়েছে। এখন একটি স্বর্ণালংকার দিয়ে দিলে সেখানে কী আছে সবকিছু চলে আসছে। পাশাপাশি বিমানবন্দরে বিএসটিআইয়ের একটি স্বর্ণ পরীক্ষার যন্ত্র বসানোর প্রয়োজন হলে আমরা সেটা করব।

বৈঠকে বাজুসের পক্ষ থেকে আটটি প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেগুলো হলো : বর্তমানে জুয়েলারি শিল্পে ব্যবহৃত মেশিনারিজ আমদানিতে উচ্চ হারে কর আরোপিত আছে। জুয়েলারি শিল্পকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে নতুন নতুন শিল্পকারখানা স্থাপনের লক্ষ্যে স্বর্ণ পরিশোধনাগার ও জুয়েলারি শিল্পে ব্যবহৃত মেশিনারিজ আমদানিতে শুল্ক-কর অব্যাহতি প্রদানের লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে জুয়েলারি শিল্পের কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জমি বরাদ্দের দাবি। স্বর্ণের গুণগত মান ও ভোক্তা অধিকার নিশ্চিতকল্পে বাজুস ও বিএসটিআইয়ের তত্ত্বাবধানে দেশের প্রতিটি জেলায় গোল্ড টেস্টিং ল্যাব ও হলমার্ক সেন্টার স্থাপন। ডায়মন্ডখচিত অলংকারের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই ডায়মন্ডের গুণগতমান ও গ্রাহক প্রতারণা রোধে বাজুস ও বিএসটিআইয়ের তত্ত্বাবধানে দেশের সব জেলায় আধুনিক ডায়মন্ড টেস্টিং ল্যাব স্থাপন। বর্তমানে যেসব গোল্ড টেস্টিং ল্যাব ও হলমার্ক সেন্টার প্রতিষ্ঠিত রয়েছে, সেসব ল্যাবের রিপোর্ট সঠিক কি না তা নিয়মিত তদারকির জন্য বাজুস ও বিএসটিআইয়ের সমন্বয়ে যৌথ মনিটরিং সেল গঠন। অবৈধ কোনো জুয়েলারি ব্যবসায়ী যাতে ওজন পরিমাপক যন্ত্র ব্যবহারের সুযোগ না পায় সেজন্য বাজুস ও বিএসটিআইয়ের মাধ্যমে নিয়মিত তদারকির ব্যবস্থা গ্রহণ। বাজুস ও বিএসটিআইয়ের মাধ্যমে নিয়মিত ওজন পরিমাপক যন্ত্র পরীক্ষার প্রস্তাব এবং বেসরকারি পর্যায়ে গোল্ড টেস্টিং ল্যাব স্থাপনে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলো বিএসটিআই ও বাজুসের গাইডলাইন মেনে দ্রুত সময়ে যাতে অনুমোদন পায় তার ব্যবস্থা গ্রহণেরও প্রস্তাব করেছে বাজুস।

শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বাজুসের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কার্যনির্বাহী সদস্য ডা. দিলীপ কুমার রায়, বাজুসের সহসভাপতি মো. রিপনুল হাসান, উপদেষ্টা রুহুল আমিন রাসেল, সহসম্পাদক তাজুল ইসলাম লাভলুসহ বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর