শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যার রহস্য উদঘাটন

নিজস্ব প্রতিবেদক

কক্সবাজারের চকরিয়া এলাকায় চিংড়ি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হোসেনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। একটি চিংড়ি ঘের দখল করতে পরিকল্পিত এই হত্যাকান্ড ঘটানোর পর ঘটনাটি নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে হত্যাকারীরা। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগম্যাধ্যমে হত্যাকান্ডকে ডাকাতির নাটক সাজিয়ে মিথ্যা প্রচার প্রপাগান্ডার পাশাপাশি হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে আন্দোলন করতে থাকে হত্যাকারীরাই। অবশেষে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত ১৪ জনকেই গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩-এর সদস্যরা।

গতকাল রাজধানীর র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। র‌্যাবের মুখপাত্র জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আধিপত্য বিস্তার, চিংড়ি ঘের দখল ও অন্তঃকোন্দলের কারণে হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হয়েছে। হত্যাকান্ডের বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের নাম প্রকাশ্যে আসতে থাকে। এদিকে গ্রেফতারকৃতরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে চলে যায়। গত বুধবার রাতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তিনি বলেন, এই হত্যাকান্ডে জড়িত কক্সবাজারে চকরিয়ায় রামপুর সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির সভাপতি হিসেবে আবু জাফর এবং সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী শহিদুল ইসলাম লিটনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিহত মোহাম্মদ হোসেন সমিতির সদস্য হিসেবে ও চিংড়ি ঘেরের কেয়ারটেকার/পাহারার দায়িত্বেও নিয়োজিত ছিলেন। দীর্ঘ সাত বছর ধরে চিংড়ি ঘের এলাকার ৪৮ একর জমির মধ্যে খামার ঘর তৈরি করে সেখানেই তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করছিলেন। সমিতিতে প্রায় ৬০০-৭০০ সদস্য রয়েছে। এর বাইরে স্থানীয় সাহারবিলের রামপুর মৌজায় ৫ হাজার ১১২ একরের বিশাল একটি চিংড়ি ঘের রয়েছে সমিতির। তবে এর মধ্যে কিছু চিংড়ি ঘের সমিতির নিয়ন্ত্রণে ছিল না। নিয়ন্ত্রণে না থাকা চিংড়ি ঘের দখলে নিতে গত ৯ জানুয়ারি সন্ধ্যার পর থেকে গ্রেফতার সমিতির সেক্রেটারি লিটনের নেতৃত্বে প্রায় অর্ধশতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী চিংড়ি ঘের এলাকায় মহড়া দেয়।

এ সময় তারা কয়েক শ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। এতে এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এর আগে সকালে সমিতির সেক্রেটারি লিটনের নির্দেশে মোবাইলে সেখানে ডেকে আনা হয় নিহত মোহাম্মদ হোসেনকে। দুপুরে সে বাড়ি ফিরতে চাইলে সেক্রেটারি লিটন ও তার সহযোগীরা রাতে মিটিং আছে জানিয়ে তাকে আটকে রাখে। পরে রাতে নিহত হোসেনকে ওই চিংড়ি ঘেরের পাশের লবণ চাষের খালি জমিতে নিয়ে গিয়ে একনলা বন্দুক দিয়ে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করে। এরপর সেক্রেটারি লিটন ও তার সহযোগী অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী সোহেল ও তার সহযোগীদের মাধ্যমে ডাকাতির নাটক সাজানো হয়।

জানা যায়, গ্রেফতার লিটন স্থানীয় কলেজ হতে ডিগ্রি সম্পন্ন করে জ্বালানি তেলে ব্যবসা শুরু করে। পরবর্তীতে সে ‘রামপুর সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির’ সেক্রেটারি নির্বাচিত হয়। ওই চিংড়ি ঘেরে নিজের প্রভাব বিস্তারের জন্য সে এলাকায় ৩০-৩৫ জনের একটি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী দল গঠন করে। সে এলাকায় তার অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী দলের মাধ্যমে অবৈধভাবে জমি দখল, হুমকি, মারামারি, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, অপহরণসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। তার বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় দস্যুতা, মারামারি, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, অপহরণসহ ৭টির অধিক মামলা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে কক্সবাজারসহ বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে।

র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, আসলে এটা ছিল পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। পরিকল্পনা অনুযায়ী সমিতির সভাপতি আবু জাফর ও সেক্রেটারি লিটন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী সোহেল, আজগর আলী, আবুল হোসেন পাখী, নাজমুল হোসাইন রকি ও আবদুর রহিমকে গুলিবর্ষণের দায়িত্ব দেয়। এদের সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া হত্যাকান্ডে এদের সহযোগী হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছে জয়নাল আবেদীন, শাহিন, মুহাম্মদ শাহাব উদ্দিন, প্রদীপ কুমার শীল, রিদুয়ান, আবদুল হক ও কাইছারকে।

 

সর্বশেষ খবর