শিরোনাম
শনিবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

উত্তরের কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন

চলছে ব্যারাজ সংস্কার ও সম্প্রসারণ কাজ

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকায় খরিপ-১ মৌসুমে সেচ পাবে ৪৫ হাজার হেক্টর জমি। এই পরিমাণ জমিতে ধান উৎপাদন হবে ২ লাখ ৭০ মেট্রিক টন। গত বছর এই ব্যারাজ থেকে সেচ দেওয়া হয়েছিল ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ১০ মেট্রিক টন ধান। ব্যারেজের প্রধান সম্প্রসারণ কর্মকর্তা অমলেশ চন্দ্র রায় বলেন, এ অঞ্চলের কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার জন্য ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্যারেজ সংস্কার ও সম্প্রসারণের কাজ চলমান রয়েছে। কাজ শেষ হলে বছরে ৮০০ কোটি টাকার ফসল উৎপাদন বাড়বে। যা কৃষিতে নতুন দিগন্তের সূচনা ঘটবে বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা। ১৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে ব্যারেজের সেচ কার্যক্রম। পাউবো জানিয়েছে, প্রকল্পের কাজ শেষ হলে চলতি বছরের ডিসেম্বরের পর তিস্তা সেচ কমান্ড এলাকার ১ লাখ ৪ হেক্টর জমি সেচ পাবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, উজান থেকে তিস্তা নদীর পানির প্রবাহ বর্তমানে ভালো অবস্থায় রয়েছে। ফলে ৭৫০ কিলোমিটার সেচখালের বিপরীতে ৫ হাজার কিউসেক পানি মজুদ রাখা সম্ভব হচ্ছে। সেচ ক্যানেলের পানি খরচ হলে পুনরায় নদী থেকে পানি ভরিয়ে দেওয়া হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান জানান, বর্তমানে তিস্তা সেচ কমান্ড এলাকার কৃষিজমিতে সেচ সুবিধার স্বার্থে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার ও সম্প্রসারণের কাজ চলমান রয়েছে। কাজ শেষ হলে বছরে ৮০০ কোটি টাকার ফসল উৎপাদন বাড়বে। তিনি জানান, তিস্তা ব্যারেজ থেকে শুরু হয়ে লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা, নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরীগঞ্জ, সৈয়দপুর, নীলফামারী, রংপুরের গঙ্গাচড়া, তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ এবং দিনাজপুরের খানসামা ও চিরিরবন্দর মিলিয়ে সেচ প্রকল্পের খালের মোট দৈর্ঘ্য ৭৬৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে পুরো অংশের পাড় শক্তিশালী করা হচ্ছে। এ ছাড়া ৭২ কিলোমিটারে সেচ পাইপ, পাড় রক্ষায় কংক্রিটের ব্লক বসবে ১০ দশমিক শূন্য ৮ কিলোমিটারে, বাইপাস সেচখাল নির্মাণ হবে ৭ দশমিক ১৩ কিলোমিটার। লালমনিরহাটের গড্ডিমারি এলাকার বোরো চাষি আক্কাস আলী জানান, নিজস্ব সেচযন্ত্র দিয়ে পানি তুলে জমি তৈরি করে পাঁচ বিঘা জমিতে বোরো চাষ শুরু করেছি। আক্কাস আলীর মতো বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা বোরো চাষের জমি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিস্তা সেচ কমান্ড এলাকার কৃষক সাইদার রহমান বলেন, এবার ১২ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিস্তা সেচ শুরু হয়েছে। এখন আমরা বোরো আবাদ শুরু করেছি।

এদিকে রংপুর কৃষি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানানো হয় চলতি বোরো মৌসুমে রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলায় ৫ লাখ ৭ হাজার ৮৩৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। নীলফামারী জেলায় ৮১ হাজার ৮৫৫ হেক্টর, রংপুর জেলায় ১ লাখ ৩২ হাজার ৪১০, লালমনিরহাট জেলায় ৪৭ হাজার ৯৯০, গাইবান্ধা জেলায় ১ লাখ ২৮ হাজার ৩৬৫ ও কুড়িগ্রামে ১ লাখ ১৭ হাজার ২১৫ হেক্টর। এই পরিমাণ জমিতে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২২ লাখ ৫৯ হাজার ৫৭৩ মেট্রিক টন। এই পরিমাণ জমিতে বোরো চাষ করতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে ২৬ হাজার ১৬১ হেক্টর জমিতে। গত বছরের চেয়ে এবার ১ হাজার ৩১০ হেক্টর বেশি জমিতে বোরো আবাদ বাড়ানো হয়েছে।

রংপুর কৃষি অঞ্চলের অতিরিক্ত ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, এবার ৫ লাখ ৭ হাজার ৮৩৫ হেক্টরে বোরো ধান আবাদ হবে। সেচনির্ভর বোরো আবাদের জন্য কৃষকদের সেচযন্ত্র ব্যবহারের জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর