শুক্রবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

অটোরিকশায় ছিনতাই চক্র

যাত্রীবেশী দুর্বৃত্তরা অটোরিকশায় তুলে ছিনিয়ে নেয় সর্বস্ব ♦ বেশির ভাগ ঘটনায় পুলিশে অভিযোগও হয় না

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

অটোরিকশায় ছিনতাই চক্র

সিলেট মহানগরের একটি রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক আলবাব উদ্দিন। উপশহরের রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে বন্দরবাজার যাওয়ার জন্য সিলেট আইন মহাবিদ্যালয়ের সামনে থেকে সিএনজি অটোরিকশায় ওঠেন। আগে থেকেই ওই অটোরিকশার পেছনের সিটে বসা ছিলেন দুই যাত্রী। অটোরিকশাটি সোবহানীঘাট পয়েন্টে গিয়ে বাঁ দিকে না গিয়ে নাইওরপুলের দিকে যেতে থাকে। আলবাব ভুল রাস্তায় অটোরিকশা নিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চান। কিন্তু চালক কর্ণপাত না করে নাইওরপুল পয়েন্টে গিয়ে তাকে নামিয়ে দেন। অটোরিকশা থেকে নামার পর আলবাব দেখতে পান তার প্যান্টের পকেটে থাকা ৮০ হাজার টাকা নেই। গত রবিবার এ ঘটনার পর আলবাব কোতোয়ালি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু ছিনতাইকারী চক্রের কোনো সদস্য আটক কিংবা ছিনতাইকৃত টাকা উদ্ধার হয়নি। আলবাবের মতো সিলেট মহানগরে প্রতিদিনই এ রকম ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন অনেকে। অটোরিকশা নিয়ে ওত পেতে থাকা ছিনতাইকারী চক্রের খপ্পরে পড়ে কেউ হারাচ্ছেন টাকা, কেউ দামি মোবাইল। বিভিন্ন পয়েন্টে অটোরিকশা নিয়ে চক্রের সদস্যরা প্রতিদিন ওত পেতে থাকে। ছিনতাইয়ের শিকার বেশির ভাগ লোক বাড়তি ঝামেলার ভয়ে এসব ঘটনায় থানাপুলিশ করেন না। নীরবে সয়ে যান। সিলেট মহানগর পুলিশের মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মাঝেমধ্যে এ রকম অভিযোগ আসছে। এ চক্রকে শনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিতে দেরি করে ফেলেন। সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগ পেলে অপরাধীদের আটক সহজ হতো।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট মহানগরের কদমতলী, উপশহর (সিলেট ল কলেজের সামনে), বন্দরবাজার, কোর্ট পয়েন্ট, সুরমা মার্কেট পয়েন্ট, জেলরোড, ধোপাদিঘীর পূর্বপাড়, আম্বরখানা ও টিলাগড়ে ছিনতাইকারী চক্র অটোরিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। অটোরিকশায় আগেই তিন-চার জন যাত্রী থাকে। পকেটে টাকা কিংবা দামি মোবাইল ফোন আছে এমন যাত্রীকে টার্গেট করে তারা। যাত্রী অটোরিকশার পাশে আসার পরই জানতে চায় কোথায় যাবেন। এরপর গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে অটোরিকশায় তুলে নেয়। গন্তব্যে যাওয়ার আগেই পেছনের সিটে বসা যাত্রীবেশী ছিনতাইকারীরা টার্গেট যাত্রীর পকেট কেটে টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। পরে ভুল পথে অটোরিকশা ঘুরিয়ে যাত্রীকে মাঝপথে নেমে যেতে বাধ্য করে। অটোরিকশা থেকে নামার পর যাত্রীরা ছিনতাইয়ের বিষয়টি টের পান। আবার কোনো কোনো চক্র অটোরিকশার ভিতরে অস্ত্র ধরে অথবা চেতনানাশক স্প্রে করে যাত্রীর সর্বস্ব লুটে তাকে রাস্তায় ফেলে যায়।

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রেন-বাসে আসা যাত্রীদেরও টার্গেট করে চক্রের সদস্যরা। সিলেট রেলস্টেশন কিংবা কদমতলী বাস টার্মিনাল ও হুমায়ুন রশীদ চত্বর কাউন্টার থেকে যাত্রীদের তুলে রাস্তায় টাকা ও ফোন ছিনতাই করে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। এ রকম ঘটনা প্রতিদিন ঘটলেও ভুক্তভোগীরা কমই থানায় অভিযোগ করেন। যে কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিনতাইকারী চক্র।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর