শনিবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

বরিশালে কৃষক পর্যায়ে ভেজাল সার বিক্রি

বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ায় কমেছে নমুনা পরীক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

বরিশালে কৃষক পর্যায়ে বিক্রীত সারের নমুনা রাসায়নিক পরীক্ষায় আবারও ভেজাল পাওয়া যাচ্ছে। গত তিন বছরে ভেজাল সার বেশি মাত্রায় চিহ্নিত হলেও আজ পর্যন্ত কোনো ডিলার কিংবা কোম্পানির বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এদিকে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ স্বল্পতার কারণে সার পরীক্ষার কার্যক্রম থমকে গেছে। এতে বাজারে আরও ভেজাল সারের বিস্তার হতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত তিন বছর ধরে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের বরিশাল বিভাগীয় গবেষণাগারের রিপোর্টগুলোতে মাঠ পর্যায় থেকে আসা সার পরীক্ষায় ভেজাল পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে বিক্রীত জিংক সালফেট মনো, জিংক সালফেট হেপ্টা ও মিশ্র সারের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গেছে এগুলোতে ৩৩ ভাগ থেকে শতভাগ ভেজাল রয়েছে। এই ভেজাল সার প্রয়োগে ফসল এবং মাটির ক্ষতি হচ্ছে। গত অর্থবছরে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ মাঠ পর্যায় থেকে ৩৩৩টি সারের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য গবেষণাগারে প্রেরণ করে। এর মধ্যে ৬০টি নমুনায় সার ভেজাল বলে চিহ্নিত হয়েছে। এর মধ্যে মিশ্র সারের ৬টি নমুনার সবকটি ভেজাল ছিল। জিংক সালফেট মনো সারের ৬০টি নমুনার মধ্যে ৩৫টিতে ভেজাল পাওয়া যায়। এ ছাড়া জিংক সালফেট হেপ্টার ৩টি নমুনার মধ্যে একটি এবং চিলেটেড জিংকের ৫টি নমুনার মধ্যে ৫টিই ভেজাল প্রমাণিত হয়। এ অবস্থার পরও সারের নমুনা পরীক্ষার বাজেট কমিয়ে আনায় চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত ২৫০টি নমুনা পরীক্ষার স্থলে মাত্র ৩০টি নমুনা এসেছে পরীক্ষাগারে। বরিশাল মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কাজী আমিনুল ইসলাম জানান, বছরে আমাদের ১ হাজার সারের নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা রয়েছে। গত বছর আমরা ৩৩৩টি নমুনা পরীক্ষা করেছি। এ বছর গত ৭ মাসে আমরা মাত্র ৩০টি নমুনা পেয়েছি। অথচ এ সময়ে অন্তত ২৫০টি নমুনা আসার কথা ছিল। বাজেট স্বল্পতার কারণে সার পরীক্ষার হার কমেছে বলে তিনি জানান। গত তিন বছরে ৯৯৬ ধরনের সারের নমুনা পরীক্ষায় দেখা যায়, এর মধ্যে ২০০ ধরনের নমুনায় ভেজাল পাওয়া গেছে। বরিশালের পরীক্ষাগারে ১ হাজার ৮ পদের সারের পরীক্ষা হয়। এ অঞ্চলে কৃষকদের ব্যবহৃত ১১ পদের সারের মধ্যে টি এস পি, ডিএপি, জিংক, বোরিক অ্যাসিড, সলুবর, জিপসাম, মিশ্র ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট জাতীয় সারের পরীক্ষা হয় বেশি। এগুলোতে ভেজালও মিলছে প্রতিনিয়ত।

বরিশাল মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা প্রমথ চন্দ্র সরকার জানান, এ অঞ্চলে প্রায় ১১ ধরনের সার ব্যবহার করা হয়। সারের নমুনা গ্রহণ করার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমরা মান পরীক্ষা করতে পারি।

ভেজাল সার পাওয়ার পরও বরিশালে আজ পর্যন্ত কোনো ডিলার কিংবা কোম্পানির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. শওকত ওসমান জানান, সার পরীক্ষা একটি চলমান প্রক্রিয়া। পরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ বাজেট পেতে এ বছর দেরি হয়েছে। এ জন্য নমুনা পরীক্ষা পিছিয়ে আছে। এই সুযোগে বাজারে ভেজাল সার বিস্তার লাভ করলে তার নমুনা সংগ্রহ করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অবশ্য জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, মাঠ পর্যায়ের যেসব কৃষি কর্মকর্তা সারের নমুনা সংগ্রহ করেন তাদের বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে মাঠে নামানো হলে সারা বছর কঠোর মনিটরিংয়ের মধ্যে রাখা যেত। জেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মুরাদুল হাসান জানান, ভেজাল সারের নমুনা সংগ্রহে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া হলে ফলাফল আরও ভালো হতো।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর